
জুবায়ের আহমেদ, লাখাই: ঐতিহাসিক কৃষ্ণপুর গণহত্যা দিবস স্মরণে গতকাল (১৮ সেপ্টেম্বর) লাখাই উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়েছে। গ্রামবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে কৃষ্ণপুর কমলাময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে।
গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুন্নি আক্তার এবং গীতা পাঠ করেন অদ্রি ধর। এছাড়া, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, নীরবতা পালন ও শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
কৃষ্ণপুর কমলাময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিটন চন্দ্র সূত্রধর-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবু কেশব চন্দ্র রায় এবং বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বাবু প্রীতি রঞ্জন দাস।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি, প্রজিব কর্মকর্তা কেএম আব্দুস সাহেদ। তিনি শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কৃষ্ণপুর কমলাময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক গৌতম কুমার। দিবসটির সমাপ্তি ঘটে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াহাব-এর মোনাজাতের মাধ্যমে।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর লাখাই উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে ভয়াবহ গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। গুলি চালিয়ে একসঙ্গে ১২৭ জনকে হত্যার পর পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয় মরদেহ। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে এটি হবিগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ড। ১২৭ জন শহিদের মধ্যে ৪৫ জনের পরিচয় মিললেও সরকারি তালিকায় নাম উঠেনি কারও। মেলেনি শহিদের স্বীকৃতি।
স্বাধীনতার এত বছর পরও শহিদদের স্বীকৃতি না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপ দাস অনুপ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ আমাকে এ বিষয়ে অবগত করেননি। খোঁজখবর নিয়ে দেখব।
স্থানীয়রা জানান, শহিদদের স্মরণে গ্রামবাসীর উদ্যোগে ৩৪ লাখ টাকা খরচ করে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে ২০১৭ সালে। এর মধ্যে জেলা পরিষদ হতে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। প্রতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর কৃষ্ণপুর গ্রামবাসী শহিদদের স্মরণে বধ্যভূমিতে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে থাকেন।
কৃষ্ণপুর গণহত্যা দিবসের এই আয়োজনটি একাত্তরের সেই ভয়াবহ দিনের স্মৃতিকে যেমন স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
দ.ক.সিআর.২৫