1. live@kaalnetro.com : Bertemu : কালনেত্র
  2. info@www.kaalnetro.com : দৈনিক কালনেত্র :
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:০৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
রাজারহাটে দীর্ঘদিন পর উপজেলা বিএনপি’র কার্যালয় উদ্বোধন  দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা নজরুল ইসলাম মোল্লার চুনারুঘাট থানায় নতুন ওসি জাহিদুল ইসলামের যোগদান মাধবপুরে ধর্ষণ মামলার আসামি ফয়েজ গ্রেফতার বাহুবলে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান তিস্তার ভাঙ্গনে সর্বস্বান্ত ৭৬ পরিবার পেলো ত্রাণ ও নগদ সহায়তা বরগুনায় ‘ন্যায়কুঞ্জ’-এর শুভ উদ্বোধন করলেন হাইকোর্টের বিচারপতি জে.বি.এম. হাসান চুনারুঘাটের গাজীপুর ইউনিয়নে ফ্রি ভেটেনারি মেডিক্যাল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত মাধবপুরে নারিকেলকাণ্ডে আলোচনায় শিক্ষা কর্মকর্তা, সমালোচনার ঝড় চা শ্রমিক নেতা যুবরাজ ঝরা’র মৃত্যু ; বাগান বন্ধ একদিনের শোক পালন

সাগর-রুনি থেকে তু‌হিন: সাংবাদিক নিরাপত্তায় সংস্কার কোথায়?

দৈনিক কালনেত্র
  • প্রকাশিত: শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫

 

আসাদ ঠাকুর, অমনিবাস: বাংলাদেশে সাংবাদিকতা এখন আর শুধু খবর সংগ্রহ বা প্রকাশের কাজ নয়, এটি সাহসিকতার এক কঠিন পরীক্ষা। সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো মানেই জীবন বাজি রাখা।

গত এক দশকে অসংখ্য সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, কেউ গুম, কেউ পঙ্গু, আবার অনেকেই হয়রানিমূলক মামলার বোঝা বহন করছেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও “নিরাপদ সাংবাদিকতা” নিয়ে কোনো জাতীয় কমিশন গঠিত হয়নি। যেন সাংবাদিকের জীবন, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রাষ্ট্রের অগ্রাধিকারের বাইরে থেকে যায়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও আইসিটি অ্যাক্ট ব্যবহার করে শতাধিক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইন প্রয়োগ ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে হয়েছে।

উপজেলা পর্যায়ের সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে, কারণ তারা প্রভাবশালী স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, অবৈধ ব্যবসায়ী চক্র ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করলে সরাসরি হুমকি, হামলা বা মিথ্যা মামলার শিকার হন।

এক দশকের রক্তাক্ত তালিকা:

২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৬১ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। একই সময়ে হামলা, মামলা, নির্যাতন ও গুমের শিকার হয়েছেন ৩,৫৮৮ জন। ৭০ শতাংশ হামলার সঙ্গে তৎকালীন শাসক দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্যযোগ্য সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড—

◾ সাগর সরওয়ার ও মেহরুন রুনি (২০১২, ঢাকা) নৃশংস হত্যাকাণ্ড, বিচার এখনও হয়নি।

◾ গোলাম সারওয়ার (২০১৩, যশোর): দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশের পর গুলি করে হত্যা।

◾ আবদুল হাকিম শিকদার (২০১৫, চট্টগ্রাম): সংবাদ প্রকাশের জেরে পিটিয়ে হত্যা।

◾ ইউনুস আলী (২০১৮, ঝিনাইদহ): জমি দখল চক্র নিয়ে রিপোর্ট করায় গলা কেটে হত্যা।

◾ শাহীন মিয়া (২০২০, নরসিংদী): সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও চাঁদাবাজির খবর প্রকাশের পর হত্যা।

◾ বেলাল হোসেন (২০২২, কুমিল্লা): নির্বাচনী অনিয়ম নিয়ে লেখার পর খুন।

◾ মেহদি হাসান (২০২৪, ঢাকা), শাকিল হোসেন (২০২৪, গাজীপুর), এটিএম তুরাব (২০২৪, সিলেট), খন্দকার শাহ আলম (২০২৫, নবীনগর)।

🔻সর্বশেষ আসাদুজ্জামান তুহিন (২০২৫, ঢাকা, গাজীপুর)।

এসবের বাইরেও শতাধিক সাংবাদিক হামলা, হুমকি ও গুমের শিকার হয়েছেন, কিন্তু অনেকের ঘটনা চোখে পড়েনি। হাজারো সাংবাদিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও অন্যান্য আইনে হয়রানিমূলক মামলা ও গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দুর্নীতি, মাদক, পরিবেশ ধ্বংস কিংবা চাঁদাবাজি নিয়ে রিপোর্ট করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রভাবশালী পক্ষ থেকে মামলা, হামলা ও প্রশাসনিক প্রতিরোধ বাড়ে। অনেক পত্রিকা বিজ্ঞাপন বঞ্চিত হওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের নীরবতা!

অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতি, ভূমি, নির্বাচনসহ অনেক খাতে কমিশন গঠন করেছেন। কিন্তু সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো জাতীয় উদ্যোগ নেই। একটি “সাংবাদিক নিরাপত্তা কমিশন” থাকলে হত্যাকাণ্ড তদন্ত, হামলার বিচার ও মামলা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যেত।

একক প্ল্যাটফর্ম গঠন জরুরি

সাংবাদিক সংগঠনগুলোর বিভক্তির কারণে ঐক্যবদ্ধ দাবি তোলা কঠিন। দলাদলির কারণে সাংবাদিক সমাজেরই ক্ষতি হয়। প্রয়োজন—

🔲 জাতীয় সাংবাদিক নিরাপত্তা পরিষদ: নীতি নির্ধারণ, আইনগত সহায়তা ও তদারকি।

🔲 বিভাগীয় ও জেলা ইউনিট: দ্রুত প্রতিক্রিয়া দল ও আইন সহায়তা সেল।

🔲 উপজেলা শাখা: মাঠ পর্যায়ের নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষণ।

🔲 হটলাইন ও রিপোর্টিং সিস্টেম: হামলা, হুমকি দ্রুত নথিভুক্ত ও প্রচার।

গ্রহণযোগ্য প্রস্তাবনা

🔘 “সাংবাদিক সুরক্ষা আইন” দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।

🔘 সাংবাদিক হত্যার বিচার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পন্ন করা।

🔘 সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ হয়রানিমূলক ধারা বাতিল বা সংশোধন।

🔘 বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ ও সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ।

🔘 সরকারি-বেসরকারি বিজ্ঞাপন নীতি স্বচ্ছ ও বৈষম্যহীন করা।

সাগর-রুনি হত্যার পর বলা হয়েছিল- “বিচার না হলে আর কোনো সাংবাদিক নিরাপদ থাকবে না।” আজ এক যুগ পরে দেখা যাচ্ছে সত্যিই কেউ নিরাপদ নয়।

সাংবাদিকতা যদি জাতির বিবেক হয়, তাহলে সেই বিবেক রক্ষা করা রাষ্ট্র ও সমাজের কর্তব্য। এখনই সময় সাংবাদিক নিরাপত্তাকে জাতীয় নিরাপত্তার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার।

লেখা: আসাদ ঠাকুর, কবি ও সাংবাদিক, সম্পাদক দৈনিক কালনেত্র

দ.ক.সিআর.২৫

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© 𝐰𝐰𝐰.𝐤𝐚𝐚𝐥𝐧𝐞𝐭𝐫𝐨.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট