তানভীর আহমেদ রাহী, কালনেত্র প্রতিবিধি:
হবিগঞ্জে বিদ্যুৎ বিভ্রাট যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি শাহজীবাজার পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিতে ফের আগুন লাগার ঘটনায় পুরো জেলা প্রায় ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল। এমন ঘটনা নতুন নয়, দুই দিন পরপরই যেন একই কাহিনি পুনরাবৃত্ত হয়। অথচ প্রতিটি ঘটনার পর তদন্ত, প্রতিশ্রুতি আর সংবাদ সম্মেলনের ঢল নামলেও, বাস্তবে কোনো টেকসই সমাধান দৃশ্যমান নয়। বর্তমান যুগে বিদ্যুৎ কেবল ঘরের আলো নয়; এটি এখন জীবনযাত্রার অন্যতম চালিকা শক্তি। অফিস, স্কুল, হাসপাতাল, ব্যাংকিং, এমনকি ফ্রিল্যান্সিংসহ সবকিছুই নির্ভর করে বিদ্যুতের ওপর। বিদ্যুৎ না থাকলে পুরো শহর যেন অচল হয়ে পড়ে। শিশুদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়, রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হয়, আর সাধারণ মানুষ পড়েন চরম দুর্ভোগে। হবিগঞ্জের নাগরিকদের অভিযোগ, এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে, কিন্তু সমস্যার মূল জায়গায় কেউ হাত দেয় না।
সরকার বলছে, দেশে বিদ্যুৎ খাতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। অথচ একটি পাওয়ার প্ল্যান্টে আগুন লাগলেই যখন পুরো জেলা অন্ধকারে ডুবে যায়, তখন সেই অগ্রগতির বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিদ্যুৎ খাতে টেকসই উন্নয়ন বলতে শুধু উৎপাদন বাড়ানো বোঝায় না, বরং এর সঙ্গে যুক্ত নিরাপত্তা, বিতরণ ও ব্যাকআপ ব্যবস্থাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ‘ব্যাকআপ গ্রিড’ না থাকায় সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে আধুনিক অগ্নিনির্বাপক প্রযুক্তি, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং জরুরি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে। শাহজীবাজারের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ সময়ের দাবি।
একটি জেলার প্রায় নিয়মিত বিদ্যুৎহীনতার অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, উন্নয়ন এখনো অনেকটা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। জনগণ শুধু আশ্বাস নয়, বাস্তব পরিবর্তন দেখতে চায়। সরকারের উচিত এখনই একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ঘাটতি নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া। হবিগঞ্জের মানুষ আর অপেক্ষা করতে চায় না, তারা চায় একটি স্থায়ী, নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, যা উন্নয়নের কথা বাস্তবে প্রমাণ করে।
দ.ক.সিআর.২৫