➖
কালনেত্র প্রতিবেদন
দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান খুন, ধর্ষণ, নিপীড়নের প্রতিবাদ ও দোষীদের বিচারের দাবিতে রবিবার উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।
মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনার বিচারের দাবিতে দেশ যখন উত্তাল তখন সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা এল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনের। নতুন এই সংশোধনী পাস হলে দ্রুততম সময়ে মধ্যে হবে তদন্ত, অর্ধেকে নেমে আসবে বিচারের সময় এবং অভিযুক্ত আসামির জামিন প্রক্রিয়াও হবে কঠিন।
রবিবার আইন মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানালেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এসময় তার পাশে ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম।
আসিফ নজরুল বলেন, ধর্ষণের বিচারে যেন দীর্ঘসূত্রতা না হয় এবং নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কিছু আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভারছে সরকার। এ বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করে তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আইনগত যে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে তা সাংবাদিকদের সামনে ব্যাখ্যা করেন উপদেষ্টা।
কয়েকদিনের মধ্যেই আইনগত পরিবর্তনগুলো আনার চেষ্টা করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “নারীর প্রতি সহিংসতা বা নারীর প্রতি নির্যাতন, ধর্ষণের মতো কেইসে আগে ইনভেস্টিগেশন যে অফিসার ছিলেন তিনি ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে না পারলে উনাকে চেঞ্জ করে আরেকজনকে দেওয়া হতো। তিনি না পারলে তাকে চেঞ্জ করে আরেকজনকে দেওয়া হতো। এরকমভাবে অনেকবার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তিত হতো। এতে মামলার বিচার করতে অনেক দেরি হয়ে যেত।”
এখন নতুন যে সংশোধনী সরকার আনতে যাচ্ছে সেখানে একটি মামলার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা থাকবেন নির্দিষ্ট। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তাকে তদন্ত শেষ করতে হবে।
তদন্তের সময় ছিল সেটাও অর্ধেক করে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, “আগে ছিল ৩০ দিন, এখন আমরা ১৫ দিন করে দিচ্ছি। বিচারের জন্য আগে সময় ছিল যেটা সেটাও আমরা অর্ধেক করে দিচ্ছি। ধর্ষণের মামলায় ৯০ দিনের মধ্যে বিচার করতে হবে। এবং ধর্ষণের মামলায় যদি ৯০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন নাও হয়, এই অজুহাতে কাউকে জামিন দেওয়া যাবে না। আগে ছিল ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার না হলে জামিন দেওয়া যেত এই গ্রাউন্ডে। এখন কোনও জামিন দেওয়া হবে না ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে। অর্থাৎ আইন সংশোধন হলে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মামলায় ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে এবং বিচারকাজ শেষ করতে হবে ৯০ দিনের মধ্যে। আর কোনও কারণে এই সময়ের মধ্যে বিচার শেষ না হলেও অভিযুক্ত বা আসামিকে জামিন দেওয়া যাবেন না।
বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনটি হয় ২০০০ সালে। সেসময় ধর্ষণের শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ২০০৩ সালে আইনে কিছু সংশোধনী আনা হলেও শাস্তিটি অপরিবর্তনীয়ই ছিল। ২০২০ সালে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে আইনে মৃত্যুদণ্ড যুক্ত করা হয়। তার আগ পর্যন্ত ধর্ষণ ও হত্যার শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড।
ধর্ষণের মামলায় বিচারের ক্ষেত্রে কোনোরকম গাফিলতি দেখা গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিধানও আইনে সংযোজন করা হবে বলে জানান আইন উপদেষ্টা।
মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “এই ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচাকার্য সম্পাদন করার পদক্ষেপও নেয়া হবে।
দ.ক.সিআর.২৫