1. live@kaalnetro.com : Bertemu : কালনেত্র
  2. info@www.kaalnetro.com : দৈনিক কালনেত্র :
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
যবিপ্রবি গবেষকের ন্যানো ইউরিয়া সার উদ্ভাবন চুনারুঘাটে ডা: নুরুল ইসলাম স্মরণে পদক্ষেপ গণপাঠাগারের স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত চুনারুঘাটে পদক্ষেপ গণ পাঠাগারের উদ্যোগে মহান মে দিবস পালন মাধবপুরে মাদ্রাসা ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু মহান মে দিবস: শ্রমজীবী মানুষের অধিকার-দাবি আদায়ের দিন আমার দেশ এর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে শ্রীমঙ্গলে মানববন্ধন হবিগঞ্জের হাওরে ধানের বাম্পার ফলন দাম নিয়ে শংকিত কৃষক! সারা দেশে এলজিইডির কাজে দুদকের অভিযান- কালনেত্র ক্লিনটেক: পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির পথচলা ও ভবিষ্যৎ চুনারুঘাটে খাল খননে জনতার বাঁধা, পরিদর্শনে ইউএনও, তোপের মুখে ইউপি চেয়ারম্যান

ডিসেম্বর বিজয়ের মাস, চলুন শুনি একাত্তরের এক মহান মুক্তিযুদ্ধার গল্প৷

দৈনিক কালনেত্র
  • প্রকাশিত: শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১০১ বার পড়া হয়েছে

কালনেত্র প্রতিবেদন◾

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রেখেছিলেন নারী মুক্তিযোদ্ধারাও। একদিকে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে যেমন অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, ঠিক তেমনিভাবে গুপ্তচর হয়ে হানাদারদের ক্যাম্পের গোপন খবর পৌঁছেছেন মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে। মুক্তিযুদ্ধের তেমনই এক দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি। মুক্তিযুদ্ধে যে দুজন নারী মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছিলেন তার মধ্যে তারামন বিবি একজন।

 

তারামন বিবির আসল নাম ছিল তারাবানু। জন্মেছিলেন কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুরের শংকর মাধবপুর গ্রামে ১৯৫৭ সালের কোনো এক দিনে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। একদিন তারাবানু হঠাৎ দেখলেন দলে দলে ট্রাকে ট্রাকে সৈন্য নামছে। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে দেশে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের গ্রামটি পড়েছিল ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে। তখন ১১ নং সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের।

 

একদিন মুহিব হাবিলদার নামে স্থানীয় এক মুক্তিযোদ্ধা তারাবানুদের বাড়িতে এসে বললেন তাদের কাজের বেশ ঝামেলা, সব পুরুষ মুক্তিযোদ্ধা। তারাবানু যদি ক্যাম্পে রান্না বান্না ধোয়া মোছা করে দেয় তবে বিনিময়ে তাকে কিছু টাকা দেবে ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা। শুনে রাজি হলেন না তারাবানুর মা। মুহিব হাবিলদার দেখলেন বহু বোঝানোর পরেও কিছুতেই টলছেন না তারাবানুর মা। তাই মুহিব হাবিলদার তারাবানুর মাকে বললেন ‘ও আমার ধর্ম মেয়ে, আমি তো ওর বাবার মতোই। সব দায়িত্ব আমার। আপনার মেয়ে ভালো থাকবে।’ অবশেষে গ্রামের পাশে দশঘরিয়ায় মুক্তিবাহিনীর সেই ক্যাম্পে রান্নার দায়িত্ব নিতে মেয়েকে ছাড়তে রাজি হলেন তারাবানুর মা। মুহিব হাবিলদারই তার নাম নামের শেষে যুক্ত করেন তারামন।

 

মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে তারামন রান্নার পাশাপাশি, ধোয়ামোছা ও মাঝেমাঝে অস্ত্র সাফ করতেন। মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।
একবার মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে তাকে অস্ত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করতে দেখে, মুহিব হাবিলদার খানিকটা অবাক হলেন। কিন্তু তারামনের যুদ্ধের প্রতি আগ্রহ দেখে তাকে রাইফেল চালানো শেখান মুহিব হাবিলদার। কিন্তু বয়সে ছোট হওয়ায় তারামনকে স্টেনগান চালানো শেখান মুহিব হাবিলদার।

 

একবার সম্মুখ যুদ্ধের ঘটনা। মধ্য দুপুরে সবাই খেতে বসেছে তখন, কেবল তারাবানু খেয়ে দেয়ে চারপাশে নজর রাখছেন। এমন সময় তারামন সুপারি গাছের উপরে উঠে দৃষ্টি রাখছেন। হঠাৎ দেখলেন পাকিস্তানিদের একটি গানবোট দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে জানালেন কমান্ডারকে। সবার খাওয়া চলছে তখন। খাওয়া ছেড়ে সবাই নিজ নিজ অবস্থান নিয়ে নিলেন মুহূর্তের মধ্যেই। সন্ধ্যা পর্যন্ত সম্মুখ যুদ্ধ চলেছিল সেদিন। তারাবানু না দেখলে মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন মাটির সঙ্গে মিশে যেত।

 

সম্মুখযুদ্ধ ছাড়াও গুপ্তচর সেজে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে ঢুকে তথ্য নিয়ে আসতেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। তারাবানু দারুণ অভিনয় করতে পারতেন চোখের পলকেই। কখনো এমন হয়েছে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে ঢুকেছেন মাথায় চুলে জট লাগানো পাগলের বেশে, কখনো সারা শরীরে কাদা লাগিয়ে, কখনো পঙ্গুর অভিনয় করে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে ঢুকে শুনতেন নানান গোপন তথ্য, ক্যাম্পের সবাই মনে করতো পাগল নয়তো মাথায় ছিটগ্রস্ত। বিভিন্ন অপারেশনের আগে কলার ভেলায় করে তারামন মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পের রসদ, অস্ত্র গোলাবারুদ পৌঁছে দিয়েছেন জায়গা মতো।

 

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পরে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার তাকে স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু এ খবরও জানতে পারেননি তারামন। একসময় পুরোপুরি লোক চক্ষুর অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন তারামন বিবি। ১৯৯৫ সালে তার খোঁজ মিলে ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের অধ্যাপক গবেষক বিমল কান্তি দের মাধ্যমে। তাকে সহযোগিতা করেছিলেন তারামন বিবির জন্মস্থান কুড়িগ্রামের রাজীবপুরের কলেজের অধ্যাপক আবদুস সবুর ফারুকী। মূলত মুক্তিযুদ্ধের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের উপর কাজ করতে গিয়ে দেখলেন তারামন বিবিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে অধ্যাপক আবদুর সবুর ফারুকী ও সোলায়মান আলীর মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায় তাকে।

 

এমনকি বিয়ের পর তারামন বিবির স্বামী আব্দুল মজিদও জানতেন না, তার স্ত্রী একজন মুক্তিযোদ্ধা। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তিনি ‘হ্যায় যে মুক্তিযোদ্ধা, হেইটা বিয়ের পরও বুঝি নাই। লেহা পড়া নাই। চর্যার মধ্যে বাড়ি। পেটের ভাত জোগাড় কোরতেই দিন চইলা যাইত, হ্যাই খবর কেমনে নিমু?’ তারা তাকে জানতেন তারাবানু। তাদের বাড়িতে তারামন বিবির খোঁজে গিয়ে খোঁজ নেয়া অধ্যাপকেরাই কাগজপত্র দেখিয়ে বললেন এই তারা বানুই হচ্ছে তারামন।

 

২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর সবাইকে ছেড়ে যান মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তী নারী মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি বীর প্রতীক।

আমরা তোমাদের ভুলব না!

দ.ক.সিআর.২৪

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১  
© 𝐰𝐰𝐰.𝐤𝐚𝐚𝐥𝐧𝐞𝐭𝐫𝐨.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট