কালনেত্র ডেক্স◾ বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় চেষ্টা হয়েছে ঢাকাই মসলিনকে পুনরায় জীবিত করে তোলার, তবে নমুনা না পাওয়া, ফুটি কার্পাসের সন্ধান না পাওয়া বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ‘বেঙ্গল মসলিন’ প্রজেক্ট দলটি ঢাকাই মসলিন নিয়ে কাজ করতে থাকে। ক্যারোলাস লিনিয়াসের লেখা ‘স্পিসিস প্লান্টারাম’ আর মসলিন নিয়ে আবদুল করিমের প্রামাণ্য বই ‘ঢাকাই মসলিন’ এর উপর ভিত্তি করে ফুটি কার্পাস খোঁজ শুরু করে দলটি।
প্রথমেই শুরু হয় ফুটি কার্পাসের খোঁজ। পুরোনো দলিলপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, বাংলার প্রাচীন ফুটি কার্পাসের বৈজ্ঞানিক নাম Gossypium arboreum var. neglecta, যা বিশ্বের ৯০ শতাংশ তুলার যোগান দিয়ে থাকা Gossypium hirsutum থেকে আলাদা। ফলে বাণিজ্যিকভাবে ফুটি কার্পাসকে আবার জাগিয়ে তোলার কাজ বেশ চ্যালেঞ্জিং।
বাংলাদেশ তো বটেই দুর্লভ ফুটি কার্পাস বীজের সংগ্রহ নেই কারো কাছেই, তবে ‘ব্রিটেনের রয়্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেনস, কিউ’ এর কাছে ফুটি কার্পাসের সংরক্ষিত শুকনো পাতার খোঁজ পাওয়া যায়। সেখান থেকে সংগ্রহ করা হয় ফুটি কার্পাস গাছের ডিএনএ বা জীবনসূত্র।
প্রথমেই ফুটি কার্পাসের বৈজ্ঞানিক উপায়ে আঁকা যত ছবি আছে সেখান থেকে একটি আঁকিয়ে নেওয়া হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে দিয়ে। এরপর শুরু হয় ছবির সাথে মিল আছে এমন গাছ খোঁজা, শেষ পর্যন্ত গাজীপুর, রাঙামাটি থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থানে একই রকম দেখতে প্রায় ৩৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
ডিএনএর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেলে, বাংলাদেশে মেঘনার অববাহিকায় খোঁজ চালানো শুরু হয়। মেঘনা গত দুইশো বছরে গতিপথ বদলেছে অনেক, তাই স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে গতিপথের পাশে ১২কিমি এলাকায় খোঁজ চালানো হয়। ফুটি কার্পাসের পাতা ও গাছের ছবি নিয়ে সাম্ভাব্য সব গাছের সাথে মিল খোঁজা হয়। মিল খুঁজে পাওয়া মাত্রই তাদের জেনেটিক সিকোয়েন্সিং করে মূল ফুটি কার্পাসের সাথে মেলানো হয়, শেষপর্যন্ত একটি বন্য কার্পাস গাছের সাথে ৭০ শতাংশ মিল পাওয়া যায়। বীজ সংগ্রহ করে মেঘনার পলিসমৃদ্ধ এলাকায় এই কার্পাসের বীজ বুনে পরীক্ষা শুরু হয় ২০১৫ সালে।
গাজীপুরের কাপাসিয়া এলাকার যে কার্পাসকে ডিএনএ সিকোয়েন্সের তথ্যের ভিত্তিতে ফুটি কার্পাস বলে শনাক্ত করা হয়। সেই ফুটি কার্পাস গাছের জাতটিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে চাষ করা হয়। প্রথম ফসল থেকে যদিও শতভাগ খাঁটি ঢাকা মসলিন বানানোর জন্য যথেষ্ট ফসল পাননি, কিন্তু তারা ভারতীয় তাঁতীদের সাথে যৌথ উদ্যোগে সাধারণ ও ফুটি কার্পাস তুলা মিলিয়ে একটি হাইব্রিড সূতা তৈরি করলেন।
ছবি: ফুটি কার্পাসের পাতা এবং ফুল, ইমেজ সোর্স: দৃক।
তথ্যসূত্র:
ক। ঢাকাই মসলিন; ড. আবদুল করিম
খ। বাংলাপিডিয়া
গ। রোর বাংলা
প্রত্নতত্ত্ব/কালনেত্র/২৪