
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান হবিগঞ্জ জেলার একটি প্রাকৃতিক বনাঞ্চল। আর পর্যটকদের কাছে একটি মনোমুগ্ধকর পাহাড়ী পরিবেশ। চুনারুঘাট উপজেলার প্রানের স্পন্দন।
সারা দেশ ব্যাপি সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের সুনাম ছড়িয়ে রয়েছে। বন বিভাগ ও বিদেশী সংস্থা ইউএসএইড (ইউনাইটেড স্টেট এইড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট,যা বর্তমানে আর কার্যক্রম চালাচ্ছে না) সংযুক্ত হয়ে রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত সাতছড়ি বনাঞ্চলের ২৪৩ হ্যাক্টর বন ভূমিকে জাতীয় উদ্যান ঘোষনা করে। শুধু সাতছড়ি নয় , বাংলাদেশে এরকম একই নীতিগত মানদন্ড, পরিবেশ সহায়ক, বন্যপ্রানী সংরক্ষন , বৈচিত্রময় উদ্ভিদ ও গাছ সুরক্ষা সহ আরো অনেক ইতিবাচক উদ্দেশ্য নিয়ে ১৭ টি বনকে জাতীয় উদ্যান ঘোষনা করা হয়। সাল ২০০৫। জাতীয় উদ্যান ঘোষনার মধ্য দিয়ে একটি বার্তা স্পষ্ট হয়, সেটি হলো- বনে অবস্থিত শুধু প্রাকৃতিক গাছ ও বাংলাদেশীয় অঞ্চলের নয় যেগুলো বিদেশী প্রজাতির গাছ গুলো রক্ষনাবেক্ষনের জন্য বন বিভাগের কাজ; এই ধরনের নীতিগত উপলব্ধি থেকেও বের হয়ে আসা। বেআইনিভাবে বনের গাছ কর্তন নিরোধ ও মহাসড়ক দিয়ে বনজ গাছ পাচার হচ্ছে কিনা ! যার জন্য চেকপোস্ট বসিয়ে নিরিক্ষা করা হতো। কিন্তু অন্যান্য বিষয়ে তেমন সক্রিয় ছিলনা। তাই সাল ২০০৫ থেকে বন রক্ষার নীতিগত আইন ও কৌশলে ব্যাপক পরিবর্তন আসে।
পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, বনের ক্ষতিকারক জনগোষ্ঠিী (বনাঞ্চলের নিকটতম জনগোষ্ঠী বা বনকে ঘিরে যাদের উপার্জন যা অবৈধ্য ছিল) যারা এতদিন ধরে নিয়মিত বনের জন্য হুমকি ছিল তাদেরকেই স্টেকহোল্ডার বা সুবিধাভোগীতে রূপান্তরকরন হয় জাতীয় উদ্যান ঘোষনার মাধ্যমে। এটি বাংলাদেশ বন বিভাগের একটি বড় মাইলফলক। যেটির সহযোগী ছিল ইউএসএআইডি।
সর্বাত্মকভাবে বনকে রক্ষার জন্য এতদিন যারা বনের ক্ষতিকারক জনগোষ্ঠী ছিল, তাঁরাই এখন বন রক্ষার সহযোগী। স্থানীয় সৎ এবং প্রকৃতির সহায়তাপরায়ন ব্যাক্তিকে সভাপতি নির্বাচন করে এবং বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব (বাধ্যতামূলক ও সয়ংক্রিয়) করে নির্দিষ্ট সংখ্যক একটি কো- ম্যানেজমেন্ট কমিটি বা সহ- ব্যাবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়। এটি স্থানীয় জনগন ও বন বিভাগকে একত্রিকরনের একটি যুগোপযোগী প্রক্রিয়া। যাতে বন ভক্ষন নয়, সকলে মিলে বন রক্ষা করায় হচ্ছে মূল উদ্দেশ্য।
জাতীয় উদ্যান যেহেতু, পর্যটকদের বন ভ্রমনের জন্য নির্দিষ্ট হারে রাজস্ব উপার্জন হচ্ছে। মোট রাজস্বের আংশিক উদ্যানের উন্নয়ন, বনের সুবিধাভোগী পেট্রোলিং টিমের ভাতা, সামাজিক কল্যাণমূলক অনুদান, উন্নয়ন ঋন, উদ্যানের বিবিধ স্টাফদের ( বন বিভাগের স্টাফ ব্যাতিত চুক্তিভিত্তিক উদ্যান পরিচালনার জন্য নিয়োজিত কর্মী) বেতন সহ খরচ হয়। যা উদ্যানের সুবিধাভোগীদের মধ্যেই অন্তর্ভূক্ত।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান প্রকল্পের শুরুতে স্থাপিত হয়, স্টুডেন্ট ডরমেটরি, ইনট্রাপ্রিটেশন সেন্টার (বিশ্লেষন কেন্দ্র), ট্যুরিস্ট স্যুভেনিয়র প্লাপফর্ম বা ট্যুরিস্ট শপ। ইনট্রাপ্রিটেশন সেন্টার উদ্যান কর্তৃপক্ষ কার্যকর পরিচালনায় ব্যর্থ।
বন বিভাগের অধিনস্থ উদ্যান এলাকায় স্থাপনা ভিত্তিক তৃতীয় পক্ষের অনুপ্রবেশ প্রচেষ্টা, পাঁয়ে হাটার ট্রেইল এর বিচ্ছিন্ন চিত্র, অনুল্লেখ-বর্তমানে শূন্য পদ সহকারী হিসাব রক্ষক কাম টিকেট রক্ষক পদের অসচ্ছতা ও দায়বদ্ধতাহীন অনুপস্থিতি। রাজনৈতিকভাবে জোর খাটানো, কুৎসিৎ-অদক্ষ সাংবাদিকের আনাগোনা ও বন বিভাগকে বিভিন্ন সুবিধা আদায়ে তোরজোর, অগ্রহনযোগ্য নেতৃত্ব সংবলিত কো- ম্যানেজমেন্ট কমিটি!
উদ্যানে ঢুকার সাথে সাথে টিকেট সুপারভাইজারের টিকেট দ্বিখন্ড করে ঝুড়িতে ফেলা ইত্যাদি চিত্রগুলো অনুপস্থিত।
চুনারুঘাটের হৃদস্পন্দন জাতীয় উদ্যান সাতছড়িকে তারুন্য নির্ভর, স্বচ্ছ ও জবাবদীহী সম্পন্ন কো- ম্যানেজমেন্ট কমিটি পারবে সবুজ প্রকৃতিকে আরো সবুজ করে সাতছড়িকে সাজাতে।
দ.ক.সিআর.২৫