
নদীয়ার ভাবুকতা, ফকির লালন শাহের দর্শন এবং উপমহাদেশীয় দার্শনিক ধারার পারস্পরিক প্রভাব নিয়ে গণপরিসরের আলোচনার অংশ হিসেবে বাংলা একাডেমি গতকাল ৬ই ডিসেম্বর শনিবার বিকেল ৪:০০টায় ‘নবপ্রাণ আন্দোলন’-এর সহযোগিতায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘নদীয়ার ভাবুকতার ইতিহাসে ফকির লালন শাহ’ বিষয়ক সংগীত ও তাত্ত্বিক পর্যালোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির সচিব ড. মো. সেলিম রেজা, মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কবি মোহাম্মদ রোমেল।
ড. মো. সেলিম রেজা বলেন, আজকের অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এই কারণে যে লালনের চিন্তা আমাদের বাংলার দর্শনের একটি কেন্দ্রীয় জায়গা দখল করে আছে। এ বিষয়ে তত্ত্বালোচনা ও প্রায়োগিক উপায় সন্ধান জরুরি।
ফরহাদ মজহার বলেন, আমরা লালনের গান নিয়ে ভালো লাগার বোধ প্রকাশ করি হয়তো কিন্তু তাঁর দর্শন নিয়ে আলোচনা আমাদের পাঠপরিধিতে খুবই সীমিত। আমরা চিন্তাগতভাবে উপনিবেশের দাস বলে অনেকক্ষেত্রে ভাবতেই পারি না যে পাশ্চাত্যের বাইরে বাংলার কোনো নিজস্ব দর্শন আছে। এই পরিস্থিতিতে নদীয়ার ভাবুকতার ইতিহাসে ফকির লালন শাহ বিষয়ে আজকে আমাদের এই আলোচনা।
তিনি বলেন, বাউল বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে বহুকাল থেকেই। লালন ও বাউল—দর্শন নিয়ে সঠিক আলোচনা ও উপলব্ধি আমাদের চিন্তার মুক্তির জন্য খুবই দরকার।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, লালন নিয়ে, বাউল নিয়ে আমাদের সাধারণ মানুষের আগ্রহ ব্যাপক। বাংলার চিন্তাচর্চার জায়গা থেকে যেমন লালন প্রবল আলোচনার দাবি রাখেন তেমনি জনপরিসরে লালনের অবস্থানও গভীর গবেষণার বিষয়। তিনি বলেন, দার্শনিক পরিসর নিয়ে স্বচ্ছ ধারণার অভাবে আমরা নানা বিপত্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ ধরনের আলোচনা ও পরিবেশনা আমাদের লালন ও বাউল—ভাবনাকে সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য লালন—দর্শন, বাউল—দর্শন অনুধাবন এবং চর্চা প্রয়োজন। আজকের অনুষ্ঠান এ বিষয়ে বিশদ কাজ করার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে।
মোহাম্মদ রোমেল বলেন, বাংলার মাটিতে মিশে থাকা নিজস্ব দর্শনের সন্ধানে আমরা লালনের দেখা পাই, বাউলের সন্ধান পাই। নিজের অস্তিত্বের প্রয়োজনেই আমাদের নিজস্ব ভাবরসের দিকে ফিরে তাকাতে হবে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির সহপরিচালক ড. মাহবুবা রহমান।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল তাত্ত্বিক আলোচনা ও সংগীত পরিবেশনা।
দ.ক.সিআর.২৫