জামাল হোসেন লিটন: হবিগঞ্জের পুরাতন হাসপাতাল সড়কের নিজের বাসবভনে সপ্তাহে ২দিন (বৃহঃ ও শুক্রবার) রোগী দেখেন চর্ম, যৌন, এলার্জী ও কুষ্ঠ কাঠিন্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ এটিএম আসাদুজ্জামান। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (৪সেপ্টেম্বর) রাত ৮টা থেকে রোগী দেখা শুরু করেন ওই ডাক্তার।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা ও জেলার বাহির থেকে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু, যুবক-যুবতী ও বৃদ্ধসহ নানা বয়সের শতাধিক রোগীদের উপছেপড়া ভীড়। রাত ৮টা থেকে রোগী দেখা শুরু করে পৌণে ১২ টা পর্যন্ত রোগী দেখেন তিনি। তবে সিরিয়ালের প্রায় ১৩জন রোগীকে না দেখে বিদায় করে ঔষধ কোম্পানির প্রায় ৩০/৪০ জন রিপ্রেজেন্টিভদেরকে সময় দেন তিনি।এতে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে অপেক্ষা করা মহিলা-পুরুষ রোগীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। হতাশাগ্রস্ত রোগী ও রোগীর স্বজনরা বার বার ডাক্তারকে করজোড়ে অনুরোধ করলেও তিনি সিরিয়ালের কোন রোগীকে সময় না দিয়ে রিপ্রেজেন্টিভদের সময় দেন।
চিকিৎসা নিতে আসা ফাহিমা নামের এক রোগী জানান, ডাক্তার সিরিয়ালের রোগী না দেখে বিদায় করে রাত প্রায় ১২টায় স্থানীয় প্রভাবশালী এক ব্যক্তির রোগী দেখাসহ ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টিভদের সময় দিয়েছেন। অথচ তিনি বারবার অনুরোধ করলেও তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।এছাড়াও দূর দুরান্ত থেকে আসা ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে চিকিৎসা না নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন অসংখ্য রোগী। সিরিয়ালের রোগী না দেখে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির রোগী দেখা ও রিপ্রেজেন্টিভদের সময় দেয়ায় মারাত্মকভাবে হতাশাগ্রস্থ হয়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা ভুক্তভোগীরা।
ঢাকা থেকে ২য় বার চিকিৎসা নিতে আসা নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া মাদ্রাসা ছাত্র রোগী শেখ হাদী বলেন, ৩১ জুলাই আমি ডাক্তারের কাছে আসছিলাম। তিনি আমাকে ১মাসের ঔষধ দিয়ে বলছেন পরবর্তী মাসে আবার দেখা করতে। তখন আমি বলছি আমার তো মাদ্রাসা থেকে ছুটি দিবেনা।আপনি একবারেই ঔষধ লিখে দেন।তারপরও ডাক্তার বলেছেন ১মাস ঔষধ সেবন করে যদি আমি ভাল হয়ে যাই তবুও যেভাবেই হোক ছুটি নিয়ে পরের মাসে আসতে হবে।ডাক্তারের কথামতো আমি মাদ্রাসা থেকে ছুটি নিয়ে গায়ে জ্বর নিয়ে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার ডাক্তারের কাছে যাই। কয়েক ঘন্টা অপেক্ষার পর তিনি বললেন আর রোগী দেখবেন না। অথচ আমার আগে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন রোগী দেখেন তিনি। আমি অসুস্থ থাকায় আমার আব্বু ডাক্তারকে বলছেন আমার ছেলে তো শরীরে জ্বর নিয়ে ঢাকা থেকে আপনার কাছে এসেছে। সে অনেক দুর্বল। দয়া করে তাকে একটু দেখেন। তখন ডাক্তার বললেন, এখানে সবচেয়ে বেশি দুর্বল আমি। আমার চেয়ে আর কেউ বেশি দুর্বল না বলে আমাকে চিকিৎসা না দিয়ে ফিরিয়ে দিলেন। অথচ পরে ৩০/৪০ জন ঔষধ কোম্পানির লোকদের তিনি সময় দিয়েছেন। তাঁর মতো একজন ডাক্তারের কাছ থেকে কেউ এমন আচরণ কখনও আশা করেনা। তিনি সম্পূর্ণরূপে একজন অমানবিক ডাক্তার।
ডাক্তার রিপ্রেজেন্টিভদের সময় দেয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে মন্তব্যের ঘরে এ.আর সেলিম নামে একজন লিখেন, ডাক্তার সাহেব প্রতিটি রুগীকে সময় দেন ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট। আর ভিজিট নেন ১০০০ টাকা। উনাকে দেখাতে গেলে আপনি কি বললেন এসব শুনার সময় নাই উনার কাছে। আপনি এক দরজা দিয়ে ডুকবেন উনার রুমে অন্য দরজা দিয়ে বাহির হয়ে আসবেন। উনার স্টাফদের ব্যবহার ও আচরণ খুবই খারাপ। প্রায়ই রুগী ও স্টাফদের মাঝে হাতাহাতি ও মারামারি পর্যন্ত হয়। আর সিরিয়াল লিখে ভোর ৪ টা থেকে। ১নাম্বার থেকে ১০ নাম্বার সিরিয়াল থাকে স্টাফদের দখলে।
সাহাবুজ্জামান চৌধুরী লিখেন, উনার সিরিয়াল ম্যান একজন কালা পাঠা (বজেন্দ্র) সে টাকা ছাড়া কোন সিরিয়াল দেয় না। ইসমাইল হোসেন বাচ্চু লিখেন, এটা অমানবিক ও নিষ্ঠুরতার শামিল।মাহিয়া খান লিখেন,আমি শহরের হয়েও সিরিয়াল পড়ছিল ১১১। মধ্য রাতে আমার আগে আজমিরীগঞ্জের রোগী চলে আসে।কত দূর দুরান্ত থেকে যে মানুষ আসে কি বলব। আর কত মানুষ হতাশ আর মনে কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরে। মন্নর আলী লিখেন, উনি একবারেই সময় দেন না। চিত্তরঞ্জন দেব বর্মন লিখেন, শুনেছি ঔষধ কোম্পানিদের কাছে ডাক্তাররা অনেক ভাল ভাল দামী জিনিস গিফ্ট পায়। দুরের রোগীদের মানবতার খাতিরে চিকিৎসা করার দরকার ছিল। এই রকম কসাই ডাক্তারদের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং প্রশাসন এই রকম ডাক্তারদের নজর দিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ করছি।
দ.ক.সিআর.২৫