1. live@kaalnetro.com : Bertemu : কালনেত্র
  2. info@www.kaalnetro.com : দৈনিক কালনেত্র :
রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
বাবা ও মেয়ের গলায় দা ধরে ছিনতাই- গ্রেফতার দুই অগ্নিকাণ্ডের পর টানা ৫০ ঘণ্টার অক্লান্ত পরিশ্রমে স্বাভাবিক হলো জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ চেতনায় কল্পনায় এঁকেছেন নারীকে তিন কবি মৌলভীবাজারে হবিগঞ্জী বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ১, সড়ক অবরোধ-বাস ভাঙচুর  সৌদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম প্রবাসী শ্রমিক চুক্তি শিগগিরই: আসিফ নজরুল কমলগঞ্জে ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট এন্ড বিজনেসম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবিগঞ্জে ‘জুলাইয়ের মায়েরা’ শীর্ষক অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ বাংলাদেশি নিহত ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ ঘোষণা আগামীকাল: এনসিপি আমি ৩৫ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত- সৈয়দ ফয়সল

চেতনায় কল্পনায় এঁকেছেন নারীকে তিন কবি

দৈনিক কালনেত্র
  • প্রকাশিত: রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৫
মধুবন চক্রবর্তী, কলকাতা: কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর গানের কথায় বলেছিলেন ‘তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সেকি মোর অপরাধ’…এই সৌন্দর্য শুধুমাত্র নারীকেন্দ্রিক নয়, যা কিছু সুন্দর, সেই সৌন্দর্যের ব্যক্তিত্ব, প্রতিভা বরাবরই কাজী নজরুল ইসলামকে প্রভাবিত করেছে। নারীর সৌন্দর্য, তবে শুধুমাত্র দৈহিক সৌন্দর্যই নয, নারীর অন্তরে যে গভীর সৌন্দর্য আছে, তা আবিষ্কার করেছেন
নানাভাবে। কখনোও কবিতায়, গানে, রচনায়। বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। অন্যায় অসাম্য ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে নারীকে জাগাতে চেয়েছিলেন তিনি।
চেয়েছিলেন নারী জেগে উঠুক আপন মহিমায়, আপন শক্তিতে। নারীর ব্যক্তিত্ব তাকে বরাবরই আকৃষ্ট করত।
জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা
” জাগো স্বাহা সীমান্তে রক্তটিকা
দিকে দিকে ফেলি তবু লেলিহান বসনা,    নেচে চল অনুমোদিনে নিরব বসনা
জাগো হতভাগিনী ধর্ষিতা নাগিনী”…
নারীই পারে এক সম্ভাবনামায় জগৎ তৈরি করতে। বিশ্বকে বদলে দিতে। জীবনের পাদপ্রদীপ জ্বেলে দিতে। এই সম্ভাবনাময় জগত দেখেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং। তিনি বলেছিলেন,
” নজরুল নিজেই বসন্ত। যে সে বসন্ত নয়। জাতির জীবনের বসন্ত। রোমান্টিক কবি মানসের এক প্রত্যক্ষ প্রমাণ ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। প্রেমে পড়েছেন বহুবার প্রেমিকাদের জন্য লিখেছেন অজস্র গান কবিতা। একা অত্যন্ত রোমান্টিক মানুষ যার কাছে প্রেম ছিল কবি মানুষের প্রেরণা। প্রধান প্রেরণা। তাই তিনি ছিলেন প্রেমময় কখনো ঝড়ের মত কখনো নিভৃতে তার চেতনায় মননে, নারীর প্রেম কাব্যে প্রভাব ফেলেছিল। আর সেই প্রভাব সৃষ্টি হয়ে মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে বারবার।
নারী প্রেম থেকে নারী জাগরণ _ নারীদের নিয়ে এক আলোকিত ভুবন গড়ে তুলেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
কখনোও সেই নারী হয়ে উঠেছে মহীয়সী কখনোও বা দুঃসাহসী l কখনোও সে মায়াময়ী কখনোও বা মমতাময়ী। যে সময় নারীর অধিকার অনেকটাই অকল্পনীয়, ভাবনার অতীত, সেই সময়ে নারীকে তিনি তুলে নিয়ে এসেছিলেন লেখনীর কেন্দ্রীয় চরিত্রে। উপস্থাপন করেছেন, স্বাধীনচেতা, সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন এক সাহসী হিসেবে। বহুপদীর কল্পনায় নারী এক রহস্য  মোহময় ক্যানভাস যাকে মাধ্যম করে রচিত হয়েছে হাজার কবিতা। শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যই নয়, নারী সৌন্দর্যের রহস্যে ডুব দিয়েছিলেন জন কিটস থেকে ওয়াটসওয়ার্থ। রবীন্দ্রনাথ নারী চরিত্রের গহনে ডুব দিয়ে চিনে নিতে চেয়েছিলেন, নারীর মনোভূমিকে। নারী চরিত্রের রহস্যময় মনোজগতে বিচরণ করেছেন কখনোও কল্পনায়, কখনো বাস্তবে, কখনোও পরাবাস্তবে। আর তাই তাঁর গল্পে তাঁর কবিতায়, উপন্যাসে নারীরা কখনোও হয়ে উঠেছে প্রতিবাদী, অসম সাহসী, আত্মবিশ্বাসী। তাঁর কাব্য পরিক্রমার মধ্যে লক্ষ্য করা যায় প্রতিবাদী নারীস্বত্তাকে।  বিশেষ উদাহরণ মনিপুর রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদা। রাজনন্দিনী চিত্রাঙ্গদা নিজের পরিচয় দিয়ে তাই অর্জুনকে বলেন,
“নহি দেবী নহি সমান্যা নারী পূজা করি
যদি পার্শ্বে রাখো”…
নারীব্যক্তিত্বের এক অনন্য উপমা চিত্রাঙ্গদা।
নারীসৌন্দর্যের বিশেষ মহিমা রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা তথাকথিত সিস্টেমকে ভেঙে প্রবাহমান নারী চরিত্রকে এক অনন্য রূপ দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যে নারী আপাতদ্বন্দ্বে নির্মিত জটিল চরিত্র হলেও, একই সাথে সে মুক্তির কথা বলে আবার একই সঙ্গে সে গায় পিঞ্জরের গান। কোথাও প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায়, কোথাও পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে সে গর্জে ওঠে।
পুরুষের চোখে লাস্যময়ী, লজ্জাশীলা, গৃহমুখী এক সনাতন নারী প্রতিমা হয়ে উঠতে না পারার কারনে, চিত্রাঙ্গদার প্রেমকে অস্বীকার করেছিলেন। অর্জুনের ব্রহ্মচারী ব্রতধারী বলে প্রত্যাখ্যানের পর চিত্রাঙ্গদার অসহায় সেই কান্না
“হায় হায় নারীরে করেছি ব্যর্থ
দীর্ঘকাল জীবনে আমার
ধিক ধনুঃশর
ধিক বাহুবল”..
সুরূপা ও লাস্যময়ী না হওয়ার কারণে অর্জুনের প্রেম থেকে বঞ্চিত হন চিত্রাঙ্গদা।
ঠিক এই জায়গাটাতেই নিজের প্রতি, নিজের শরীরের প্রতি, অভ্যাসের প্রতি, জীবনের প্রতি এক গভীর হতাশা তৈরি হয়।
নিজেকে উপহাসের পাত্রী ভাবতে শুরু করেন। আর সেই ভাবনা ক্রমশ তাকে মানসিকভাবে ভঙ্গুর করে দেয়, বিপন্ন চিত্রাঙ্গদার সেই সাহসী জৌলুস বিবর্ণ করে তোলে তার উন্মত্ত করে তোলে যার পরিণতিতে আমরা দেখতে পাই চিত্রাঙ্গদা মদন দেবের কাছে প্রার্থনা করছে নারী সৌন্দর্যের আকাঙ্ক্ষায়। মদনদেবের কাছে রূপ ফিরিয়ে নেওয়ার প্রার্থনা যেমন সে জানায়, অন্যদিকে অর্জুন ও সম্পর্কের এই অস্পষ্টতা থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। নৃত্যনাট্যের একেবারে শেষ অংশে এসে অর্জুন গ্রামবাসীদের থেকে শাসক চিত্রাঙ্গদার বর্ণনা শুনে সাক্ষাতের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এখানেই চিত্রাঙ্গদার উক্তিটি আত্মবিরোধিতার আভাস দেয়। নিজের সত্ত্বার সাথে এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে। অর্জুনের কাছে যিনি নিজের প্রেম নিবেদন করেন এবং অর্জুনের ব্রহ্মচারী ব্রতধারী বলে তাকে প্রত্যাখ্যান করলে, চিত্রাঙ্গদা মানসিকভাবে বিপন্ন হয়ে যান।
এই বিপন্ন প্রেম মুখ থুবড়ে পড়লে, একদিকে প্রেম ভাঙ্গার অসহায়তা অন্যদিকে পিতৃতান্ত্রিক ধারণার বাইরে গিয়ে প্রতিবাদী, ও দৃঢ়চেতা চিত্রাঙ্গদাকে নির্মাণ করেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। একই নারীর মধ্যে বিরাজ করছে সুরূপা ও কুরুপা দুই সত্ত্বা। তথাকথিত পুরুষ আর নারীর এক চিরকালীন দ্বন্দ্বের ছবি। স্বয়ংসিদ্ধা এক নারীর চিত্র যেমন এঁকেছেন তেমনি এঁকেছেন এক প্রতিবাদী নারীর ছবি। যার মধ্যে তথাকথিত পুরুষ সমাজ দৃশ্যমধুর বা শ্রুতিমধুর কোনোও ছবি সেভাবে খুঁজে পাবেন না হয়তো। যে নারীর মধ্যে আত্মচেতনার জাগরণ ঘটে।
যে নারী শান্ত, স্নিগ্ধ, গৃহকর্ম নিপুনা,
গৃহলক্ষীর তকমায় আটকে থাকতে চান না। যিনি সব মহিমায় আত্মনির্ভরশীলতার পরিপূর্ণ এক ছবি আঁকতে পারেন। তিনি সুন্দরী নারী। আসলে নারীকে তিনি এঁকেছেন শব্দ তুলির হরেক আচড়ে।
কখনোও তাকে এঁকেছেন বহুবর্ণা উজ্জ্বল রঙে, কখনো বা ধূসরজীর্ণ রঙে। কখনোও তাঁকে গড়ে তুলেছেন, আত্মনির্ভরশীল রূপে। কখনোও বা সহনশীলতা ও আনুগত্যের প্রতিমূর্তি হিসেবে। ‌এই ধূসর জীবন রঙের ছায়া পড়েছিল জীবনানন্দের নারীর সৌন্দর্যে। কবি জীবনানন্দের নারী অত সহজে আমাদের কাছে ধরা দেয় না। রহস্যময়তার অবগুন্ঠনে সে ঢাকা থাকে। সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে প্রিয় নারীকে তিনি খুঁজে বেড়ান। রোমান্টিক কবিদের রচনা সাধারণত প্রিয় নারী সম্পর্কে এক উচ্ছ্বাস থাকে আকাঙ্ক্ষা থাকে ভালোবাসার তীব্র রঙ থাকে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে জীবনানন্দের কাব্যে নারী সৌন্দর্য বা প্রিয় নারীর ব্যাখ্যায় তা প্রায় অনুপস্থিত। “হাই চিল” কবিতাটির উল্লেখ আনা যেতে পারে।
“পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে
আবার তাহাকে কেন ডেকে আন?
কে হায় হৃদয়ে খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে”…
তবু হৃদয় ঘোরে বেদনা জায়গাতেই ভালোবাসেন কবি। তার মধ্যে খুঁজে পান এক আশ্চর্য প্রাপ্তি। অন্ধকারের মধ্যেই জোনাকির আলোর মতন মিটিমিটি করে জ্বলে ওঠে প্রেম যা চিরকালীন এবং জ্বলতেই থাকে।
বনলতা সেন এখানে প্রেমের শাশ্বত প্রতিমূর্তি জীবনানন্দের প্রেম যতটা মিলনে, তার থেকে অনেক বেশি উদযাপিত হয়েছে বিরহে বা হারানোর বেদনায়। বিরহের অন্তর্নিহিত ক্যানভাসে জমে রয়েছে চিরকালীন।
প্রেমের জমাট রূপ নারী, তাঁর কাছে কল্পনার দেবী। অর্ধেক মানবী। বাকিটা অন্তরের অন্তঃস্থলে বাস যার। যার কাছে দুদণ্ড শান্তি পাওয়া যায়। জীবনানন্দের পছন্দের নারীর কথা বলতে গেলে অবশ্যই বনলতা সেনের কথা স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে।
বনলতা এক অর্থে নারী। আবার আর এক অর্থে প্রকৃতিও বটে। জীবনানন্দ দাশের কবিসত্ত্বা প্রকৃতির মাঝেই শান্তির সন্ধান করেছে। জীবনের যত আঘাত প্রতিঘাত  অশান্তিতে তিনি আশ্রয় পেতে চেয়েছেন প্রকৃতির মাঝে। প্রকৃতির মধ্যেই শান্ত হতে চেয়েছে তাঁর অশান্ত হৃদয়। ” বনলতা সেন”
এই কবিতার পরতে পরতে জড়িয়ে আছে সেই শান্তির এক টুকরো আশ্রয়। যে আশ্রয়কে তিনি বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতে চেয়েছেন
” চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য
অতি দূর সমুদ্রের পর হাল ভেঙে
যে নাবিক হারায়েছে দিশা”…
এই কবিতার সঙ্গে অন্তর্লীন হয়ে গেছে
প্রেম স্বপ্ন আনন্দ বেদনা মৃত্যু।
তাই এই কবির কাছে নারী যেন এক শান্তির প্রতীক হয়ে ধরা দিয়েছে।
চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্যে রবীন্দ্রনাথ নারীকে যেখানে গড়ে তুলেছেন মধুর ও শক্তিশালী রূপের দোলাচলের এক অপূর্ব চিহ্ন রূপে।
যেখানে তিনি বলছেন
‘.আমি চিত্রাঙ্গদা
..দেবী নহি, নহি আমি সামান্যা রমণী
. পূজা করি রাখিবে মাথায়
..সেও আমি নই
..যদি পার্শ্বে রাখো
..মোরে সংকটের পথে
দুরুহ চিন্তার যদি অংশ দাও
সেখানে জীবনানন্দ নারীকে দেখেছেন ধূসর জগতে এক গোধূলি আলোয়।
তিন কবির অন্তরদৃষ্টিতে নারী শুধু রক্তমাংসের শারীরিক উপস্থিতি বা
সহনশীলতার প্রতিমূর্তি নয়।
সে এক অভূতপূর্ব অনুভূতি। বুদ্ধিদীপ্ত মননশীল উজ্জ্বল অস্তিত্ব এক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
© 𝐰𝐰𝐰.𝐤𝐚𝐚𝐥𝐧𝐞𝐭𝐫𝐨.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট