কালনেত্র প্রতিবেদক:
পর্যটনে অপার সম্ভাবনাময় জেলা হবিগঞ্জ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় পর্যটন স্পট সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। কিন্তু সেখানের বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। পর্যটকদের কোন নিরাপত্তা নেই। যার ফলে প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ক্রাইম জোনে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত ছিনতাই ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। বছরের শুরুতে মাত্র ২৮ দিনের ব্যবধানে ঘটেছে দুটি গণধর্ষণের ঘটনাও। আর ছিনতাইতো সেখানের নিত্যদিনের ব্যাপার। ফলে দিনদিন পর্যটক হারাচ্ছে উদ্যানটি।
পর্যটক ও সচেতনমহল বলছেন, নিরাপত্তা না থাকার কারণে উদ্যানে বৃদ্ধি পেয়েছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। তবে কর্তৃপক্ষ দায়ি করছে পর্যটকদের অসচেতনতা ও ট্যুরিস্ট পুলিশকে।
জানা যায়, পর্যটন সম্ভাবনাময় হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় স্পট চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। প্রতি বছর সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে।
কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে উদ্যানটি পর্যটকদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উদ্যানের ভেতর থেকে বারবার অস্ত্র উদ্ধার ও ছিনতাইয়ের পর নতুন করে যুক্ত হয়েছে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনা।
চলতি বছরের জানুয়ারীতে ২৮ দিনের ব্যবধানে উদ্যানের ভেতরে দু’টি গণধর্ষণের ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়ে উঠেছিল। এর আগেও একাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে উদ্যানের ভেতরে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি উদ্যানে ঘুরতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয় বৃন্দাবন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী। এ ব্যাপারে ৮ জানুয়ারি প্রেমিকসহ ৫ জনকে আসামি করে হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলা দায়ের করেন তিনি।
বিচারক জিয়া উদ্দিন মাহমুদ মামলাটি আমলে নিয়ে চুনারুঘাট থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় ৯ জানুয়ারি ভোরে মামলার প্রধান আসামী শামীম আহমেদ মামুনকে (২২) আটক করে পুলিশ।
এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর সাতছড়ি উদ্যানে প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক স্কুলছাত্রী। প্রেমিককে গাছের সাথে বেঁধে রেখে ওই ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে একদল দুর্বৃত্ত। শুধু এই দুটি ঘটনাই নয়, কিছুদিন পরপরই ঘটে এমন ধর্ষণের ঘটনা।
এদিকে, শীত মৌসুমে সাতছড়ি উদ্যানে সবচেয়ে বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিনোদনপ্রেমী নারী-পুরুষরা উদ্যানের মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে আসেন।
কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে শীত মৌসুমের শুরুতেই উদ্যানের গভীর অরণ্য থেকে বিভিন্ন ধরণের আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে র্যাব। যার কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সারাদেশের পর্যটকরা। মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকেন প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি সাতছড়ি থেকে।
পর্যটকদের অভিযোগ, সেখানে প্রতিদিনই ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার কারণে অপরাধিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে উদ্যানটি।
সাতছড়িতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে দূর্বৃত্বরা ছিনিয়ে নিচ্ছেন টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। পাশাপাশি গেল দুই বছরে উদ্যানের ভেতর থেকে কয়েকটি লাশ উদ্ধারও আতঙ্ক বাড়িয়েছে পর্যটকদের মনে- জানান পর্যটকেরা।
সাতছড়ি উদ্যানে ঘুরতে আসা এক পর্যটক বলেন, আমরা প্রায়ই পরিবার-পরিজন নিয়ে সাতছড়িতে ঘুরতে আসি। কিন্তু সম্প্রতি এখানে ছিনতাই ও ধর্ষণের একাধিক ঘটনা আমাদের মনের মধ্যে আতঙ্ক ঢুকিয়ে দিয়েছে। পরবর্তীতে আমরা পরিবার নিয়ে সাতছড়িতে ঘুরতে আসতে হলে অনেকবার ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য এখানে একটি পুলিশ ক্যাম্প বসানো উচিৎ। অন্যথায় অপার সম্ভাবনাময় এই পর্যটন স্পটটি ধ্বংস হয়ে যাবে।
তবে এসব ঘটনার জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ি করছে পুলিশ ও পর্যটকদের। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের পরিচালনা কমিটির এক শীর্য নেতা বলেন, প্রতিদিন দুই জন ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু তারা ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। পাশাপাশি পর্যটকরা ভেতরে যেতে যেতে ‘পর্যটন এরিয়ার’ বাহিরে চলে যান। যার কারণে এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেয়েছে।
একই কথা বললেন চুনারুঘাট থানার কর্মকর্তা (ওসি) নূর আলম। তিনি বলেন, সেখানে যতগুলো ধর্ষণের ঘটনা ঘটে সবগুলোর ভিকটিমই গালফ্রেন্ড। তারা ‘পর্যটন এরিয়ার’ বাহিরে চলে যাওয়ার কারণে এসব কর্মকাণ্ড ঘটে। যার ফলে পুলিশের কিছু করার থাকে না। তবে আমরা সাতছড়ি উদ্যানে একটি পুলিশ ক্যাম্প বসানোর জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে অলোচনা করছি।
দ.ক.সিআর.২৫