➖
মোহাম্মদ সুমন◾
টানা ৮ সপ্তাহ ধরে মিলছে না মজুরি। মালিকপক্ষের কাছে একেকজন শ্রমিকের পাওনা বাকী পড়েছে ৯৫২০ টাকা। ঘরে খাবার নেই, হাসপাতালে নেই চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত ঔষধ। সংসার চালাতে কেউ বিক্রি করেছেন যত্নে লালনপালন করা শখের পশু, কেউ বিক্রি করেছেন বসতবাড়ির ছায়া দানকারী ফলজ বৃক্ষ। যাদের এসব কিছুই নেই তাদের অভুক্তই থাকতে হচ্ছে।
এরইমধ্যে শুরু হয়েছে ৫দিন ব্যাপী দীপাাবলি উৎসব। অন্যান্য বাগানগুলোতে দুর্গাপূজা প্রধান উৎসব হলেও চন্ডিছড়ায় এটাই সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। কিন্তু এবছর উৎসবে প্রাণ নেই। উৎসব এলে বেতন থেকে আগেই কর্তন করে রাখা টাকা দিয়ে শ্রমিকদের বোনাস দেয় কর্তৃপক্ষ। এবছর বোনাস তো দূরের কথা বেতনই ভাগ্যে জুটেনি। ফলে উৎসবের আনন্দ বেদনায় পর্যবসিত হয়েছে। চা শ্রমিক মিঠাইলাল তাঁতী বলেন- হাতে টাকা না থাকায় বাচ্চাদের কিছুই কিনে দিতে পারিনি, প্রতিবছর উৎসবে আত্মীয়স্বজন বাড়িতে আসে, তাদেরকে যে ঠিকমতো খাতিরযত্ন করবো সেই সক্ষমতাও আমরা হারিয়ে ফেলেছি।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দোকান নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। নানানরকম পসরা সাজিয়ে বসলেও বেচাকেনা প্রায় নেই বললেই চলে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আগত ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন জানান- কাঙ্খিত বেচাকেনা না থাকায় এবছর আমাদের লোকসানে পড়তে হবে।
নারী চা শ্রমিক স্বরলিপি মুন্ডা জানান- “বাগান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সপ্তাহে শুধুমাত্র সাড়ে তিন কেজি আটা ছাড়া আর কিছুই পাচ্ছি না আমরা। সরকারি বরাদ্দ হিসেবে দশ কেজি আতপ চাল পেয়েছি এটা খেয়ে কোনরকম প্রাণটা বাঁচাতে পারলেই হলো”। মূলত এভাবেই চলছে ছন্ডিছড়া চা বাগানের ৯৫৪ জন শ্রমিকদের সংসার। একই অবস্থা এনটিসির সবগুলো চা বাগানে।
এ বিষয়ে ছন্ডিছড়া চা বাগানের ম্যানেজার সেলিমুর রহমান সেলিম এবং বাংলাদেশ চা বোর্ডের সহকারী উন্নয়ন কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান আখন্দ বলেন- আমরা অর্থ সংকটে ভুগছি। লোন পেয়ে গেলে শীঘ্রই শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হবে।
চা-শ্রমিক নেত্রী খাইরুন আক্তারের সাথে কথা হলে তিনি জানান- অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের প্রাপ্য মজুরি পরিশোধ করা না হলে আমরা সবকটি বাগানে একযোগে আন্দোলন শুরু করবো। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত টানা ১৬ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে ছন্ডিছড়া চা বাগানের সকলপ্রকার উৎপাদন কার্যক্রম।
দ.ক.সিআর.২৪