1. live@kaalnetro.com : Bertemu : কালনেত্র
  2. info@www.kaalnetro.com : দৈনিক কালনেত্র :
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১০:০১ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
যবিপ্রবি গবেষকের ন্যানো ইউরিয়া সার উদ্ভাবন চুনারুঘাটে ডা: নুরুল ইসলাম স্মরণে পদক্ষেপ গণপাঠাগারের স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত চুনারুঘাটে পদক্ষেপ গণ পাঠাগারের উদ্যোগে মহান মে দিবস পালন মাধবপুরে মাদ্রাসা ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু মহান মে দিবস: শ্রমজীবী মানুষের অধিকার-দাবি আদায়ের দিন আমার দেশ এর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে শ্রীমঙ্গলে মানববন্ধন হবিগঞ্জের হাওরে ধানের বাম্পার ফলন দাম নিয়ে শংকিত কৃষক! সারা দেশে এলজিইডির কাজে দুদকের অভিযান- কালনেত্র ক্লিনটেক: পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির পথচলা ও ভবিষ্যৎ চুনারুঘাটে খাল খননে জনতার বাঁধা, পরিদর্শনে ইউএনও, তোপের মুখে ইউপি চেয়ারম্যান

উপজাতি শব্দটি একটি জাতিকে পরিপূর্ণ জাতি হিসেবে স্বীকৃতি জানাতে অস্বীকার করার সামিল

দৈনিক কালনেত্র
  • প্রকাশিত: বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১৫০ বার পড়া হয়েছে

 

যোগেশ চাকমা◾

আদিবাসী শব্দটি আপেক্ষিক। Indigenous শব্দের বাংলা পরিভাষা হলো আদিবাসী। আদিবাসী শব্দটি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক যুক্তি আছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসকৃত ভিন্ন সংস্কৃতির নৃ-গোষ্ঠী যারা রয়েছে তারা কেন নিজেদের আদিবাসী বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এবং উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বললে কেন অপমানিত বোধ করে সে বিষয়ে জানা যাক। সবার আগে কথা বলতেই হয় পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস নিয়ে।

ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলো যেমন কোনকালেই ভারতের অংশ ছিলো না, তেমনিভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামও বাংলার অংশ ছিল না। ব্রিটিশরা ক্ষমতায় এসে বার্মাসহ এই পাহাড়ি অঞ্চলগুলো ব্রিটিশ ভারতের করায়ত্বে আনে। পরে ভারত বিভাগ ও ভারত পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার সময় বার্মা ( বর্তমানে মিয়ানমার) পৃথক করলেও থেকে যায় এই পার্বত্য অঞ্চলগুলো। উল্লেখ্য যে স্মরণাতীত কাল থেকে বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম ত্রিপুরা রাজ্যের তথা আধুনিক ধারণায় সেভেন সিস্টার এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। দূর্গম ও প্রান্তিক এলাকা হওয়ায় এ অঞ্চলে কোন বসতি ছিল না। চাকমা জনগোষ্ঠী এ অঞ্চলে বসবাস করার ফলে এটি Chacomas নামে পরিচিত হয় যা ষোড়শ শতাব্দীর(১৪৯৬-১৫৭০) একটি পর্তুগিজ মানচিত্রে উল্লেখ পাওয়া যায়।

৯৫৩ সালে আরাকানের এক রাজা বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম দখল করেন। পরবর্তীতে ১২৪০ সালে ত্রিপুরার রাজা এই অঞ্চল আবারও দখল করলেও, আরাকানের রাজা চট্টগ্রাম পুনরায় দখল করে নেন। মুঘলরা ১৬৬৬ থেকে ১৭৬০ সাল পর্যন্ত অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করে, এই সময়ে চট্টগ্রাম এলাকায় গৌড়বঙ্গ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাঙালির আগমন ঘটে, চট্টগ্রাম জেলার নামান্তর তাদেরই করা।

চার্লস অ্যালেন, যিনি ১৯০০ সালে চিটাগং সার্ভে ও সেটেলমেন্ট রিপোর্ট তৈরি করেছেন, এই অঞ্চলের নামের উৎস খুঁজতে গিয়ে তিনি বেশ কয়েকটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। প্রথমে উদ্ধৃত করেছেন বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের ভাষ্য, চৈতকিয়াং কিংবা চৈতাগ্রাম, চৈতার অর্থ হলো বুদ্ধের স্মৃতিসৌধ, সেই থেকে এই অঞ্চলের নাম চট্টগ্রাম। মৌর্য সম্রাট অশোক (খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩-২৩২) কর্তৃক স্থাপিত ৮৪ হাজার বৌদ্ধ ধাতু চৈত্যের মধ্যে রামুর চৈত্যটি অন্যতম, আরাকানি শাসনামলে এই চৈত অনুসারে চৈতকিয়াং বা চা-টি-কিয়াং থেকে মুঘল আমলে বাঙালিদের আগমনের পর এই নামটির চট্টগ্রাম নামান্তর হয়। ইংরেজ শাসনামলে চট্টগ্রামকে চিটাগাং নামকরণ করে এবং চিটাগাং ও চাকোমাসকে পার্শ্ববর্তী কিছু অঞ্চলসহ চিটাগাং হিল ট্রাক্টস নামকরণ করে। অর্থাৎ ইংরেজদের আগমনের আগেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চট্টগ্রামের অংশ ছিল না।

একটি রাজ্য ক্ষমতাবলে অধিকার করা এবং ঐ রাজ্যের আদি বাসিন্দাদের মাইনরিটি বা ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী ট্যাগ লাগিয়ে দিয়ে সংখ্যাগুরুরা ঐ অঞ্চলের আদিবাসী দাবি করা নেহাত ক্ষমতার অপপ্রয়োগ।

আদিবাসী যুক্তির বিপক্ষে অনেকেই বলে বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই। থাকলেও চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা প্রভৃতি ভিন্ন সংস্কৃতির জনগোষ্ঠী যারা পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করছে তারা এদেশের আদিবাসী না, বাঙালিরাই এদেশের আদিবাসী। এটার বিপক্ষে স্পষ্ট বিবৃতি হলো পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকৃত বিভিন্ন গোষ্ঠী যারা রয়েছে তারা পার্বত্য অঞ্চলেরই আদিবাসী। খুলনা, বরিশাল কিংবা ঢাকা প্রভৃতি অঞ্চলের আদিবাসী দাবি করছে না। এখন পার্বত্য অঞ্চল কি বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমানার বাইরে? অবশ্যই নয়।

এখন প্রশ্ন হলো সরকার তাহলে কেন আদিবাসী স্বীকৃতি দিতে নারাজ?

-১৯৭২ সালে Indigenous and Tribal Population Convention 1957,Convention 107 of 1957 অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ সরকার। আশির দশকে জাতিসংঘে লিখিতভাবে বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে যে আদিবাসী রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রেক্ষিতেও এটি বলা হয়েছে। এমনি গত কয়েক সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে প্রধানমন্ত্রীরা যে শুভেচ্ছাবাণী পাঠিয়েছেন সেখানেও আমাদের আদিবাসী বলে সম্বোধন করা হয়েছে।
তাহলে এখন সমস্যাটি কোন জায়গায়?

– সমস্যা দেখা দিয়েছে ২০১০ সালের পর। ২০০৭ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬১ তম অধিবেশনে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে একটি ঘোষণাপত্র অনুমোদিত হয়। সেখানে ১৪৪ টি দেশ এর পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ সহ আরো ১৩ টি ভোটদান থেকে বিরত ছিল। কারণ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করা মানে এটি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রতি দেওয়ার একটি বাধ্যবাধকতা থেকে যায়। এছাড়া কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এই চারটি দেশ এর বিপক্ষে ভোট দিলেও পরবর্তীতে তারা এই ঘোষনাপত্রকে সমর্থন দেয়।

ঘোষণাপত্রে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পয়েন্ট হলো-
*ভূমি ও ভূ-খণ্ডের অধিকার।
*আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি ও ভূ-খন্ডের উপর সামরিক কার্যক্রম বন্ধের অধিকার।
* আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সম্মতি ছাড়া যেসব ভূমি, সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে সেগুলী পুনরুদ্ধার ও ফেরত পাওয়ার অধিকার।

সরকার এসব বাস্তবায়নের ভয়ে স্বাক্ষর দেওয়া থেকে বিরত ছিল। আর আদিবাসী জনগোষ্ঠী যখন নিজেদের আত্নপরিচয়ের জন্য সাংবিধানিক স্বীকৃতি চাইল তখন সরকারও নড়ে চড়ে বসে। আর ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীতে আদিবাসীদের “ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী” বলে আখ্যায়িত করে আদিবাসীদের আত্মপরিচয়কে অস্বীকার করেছেন, বিকৃত করেছেন। অথচ সরকারই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সংবিধানে আমাদের আদিবাসী বলে স্বীকৃতি দিবেন।

এবার আসি “ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী” বা “উপজাতি” শব্দটি নিয়ে। Tribe শব্দের বাংলা পরিভাষাকে উপজাতি বলা হয় যা যথার্থ নয় এবং একই সাথে একটি গোষ্ঠীর জন্য অপমাণজনক। উপজাতি শব্দটি অনেকটা Sub-Human এর মতো। বাংলা ব্যাকরণের ব্যসবাক্যে “উপ” শব্দটিকে ন্যায় বা ক্ষুদ্র অংশে বোঝানো হয়। যেমন:
১.উপজেলা- জেলার ন্যায় বা জেলার ক্ষুদ্র
২.উপনদী – নদীর ক্ষুদ্র
একই ভাবে উপজাতি শব্দটি দাঁড়াবে জাতির ন্যায়। অর্থাৎ উপজাতি শব্দটি ব্যবহার করা মানে একটি জাতিকে পরিপূর্ণ জাতি হিসেবে স্বীকৃতি জানাতে সম্পূর্ণ অস্বীকার করার সামিল। যেখানে একটি জাতির নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, বর্ণমালা, ঐতিহ্য রয়েছে ঐ জাতিকে আপনি কোন যুক্তিতে উপজাতি বলে অপমাণ করবেন?

আর Ethnic Minority ‘র বাংলা পরিভাষা করা হয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। এবং এটিও যথার্থ না। যথার্থ বাংলায় এটি হবে জাতিগত সংখ্যালঘু। কিন্তু একটি জাতিকে আপনি পরিচয় করিয়ে দেওয়ার আগেই যদি ক্ষুদ্র শব্দটি ব্যবহার করেন তাহলে বিষয়টি উপজাতি বলার মতোই হলো।ঠিক একারণেই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে আপনি উপজাতি বা ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী বলে সম্বোধন করলে তারা তা অপমানের দৃষ্টিতে দেখে।

অর্থাৎ Tribe,Ethnic Minority শব্দটি নিয়ে আমাদের অভিযোগ নেই, অভিযোগ এর বিকৃত বাংলা পরিভাষা নিয়ে। আবার যারা আদিবাসী শব্দের বিরোধিতা করেন তারা এই ভেবেও খুশি হইয়েন না যে Tribe, Ethnic Minority মানেই আদিবাসী(Indigenous) না। জাতিসংঘের ILO(International Labour Organisation) এর মতে Indigenous People হচ্ছে-

“a) tribal peoples in independent countries whose social, cultural and economic conditions distinguish them from other sections of the national community and whose status is regulated wholly or partially by their own customs or traditions or by special laws or regulations;

b) peoples in independent countries who are regarded as indigenous on account of their descent from populations the which inhabited the country, or a geographical region to which the country belongs, at the time of conquest or colonization or the establishment of present state boundaries and who irrespective of their legal status, retain some or all of their own social, economic, cultural and political institutions.” (ILO Convention No. 169)

ILO এর বিবৃতি থেকে আরও পরিষ্কার যে, Nearly all tribal people are Indigenous এবং Iindigenous People বলতে কেবল যে আদিকাল থেকে বসবাস করা লোকজনকে বুঝাবে আইএলও সেটা বলছে না। যাদের অর্থনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক ও বৈশিষ্ট্য দেশের অন্যদের থেকে আলাদা এবং ওদের নিজেদের প্রথা, বিশেষ আইন বা বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, ওদেরকেও indigenous people বলতে হবে। ঐটাকেই আমাদের এখানে আদিবাসী হিসাবে অনুবাদ করা হয়েছে। অর্থাৎ চাকমা ছাড়াও মারমা, ত্রিপুরা,রাখাইন, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমি, ম্রো প্রভৃতি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীও আদিবাসী এবং তাদেরও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিস্তৃত ইতিহাস রয়েছে।

Image courtesy: Tufan Artbin

 

কেসিআর-২৪

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
© 𝐰𝐰𝐰.𝐤𝐚𝐚𝐥𝐧𝐞𝐭𝐫𝐨.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট