কালনেত্র, ঢাকা◾
২০২৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনামলকে উৎখাত করেছে।
এই গণঅভ্যুত্থানে রাষ্ট্রীয় বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের দলীয় বাহিনীর হাতে প্রাণ হারানো সকল শহিদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি এবং দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের কাঁধে চেপে বসা ফ্যাসিবাদী শক্তিকে উৎখাত করার জন্য সংগ্রামী শিক্ষার্থী-জনতাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। পাশাপাশি এ কথাও স্মরণে রাখার আহ্বান জানাচ্ছি যে, ফ্যাসিস্ট শাসক বিদায় নিলেও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে।
বিগত এক দশকজুড়ে আওয়ামী শাসনামল পদ্ধতিগতভাবে গুম, খুন, গণগ্রেফতার ও জুলুমের মাধ্যমে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করে শেখ হাসিনার সরকার যে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিল তা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় ছিল গণঅভ্যুত্থান।
কোটা-সংস্কারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা বৈষম্যবিরোধী এই আন্দোলন দমন করতে আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের আন্দোলনের ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করেছে। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ দলীয় ক্যাডার বাহিনীর হাতে মাত্র ২০ দিনে পাঁচ শতাধিক শহিদ হয়েছেন। কোনো কোনো হিসাবে নিহতের সংখ্যা আরও বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ব্যতীত আর কোনো আন্দোলনে রাষ্ট্রীয় সহিংসতায় এত হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করেছি, রাষ্ট্রীয় সহিংসতাকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও জনতা কোনো ধরনের ভ্যানগার্ড পার্টি ছাড়া এক নজিরবিহীন গণঅভ্যুত্থানের জন্ম দিয়েছে, যার ফলস্বরূপ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হোন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই গণঅভ্যুত্থান এক নতুন যাত্রার পথ সুগম করেছে।
এরই মধ্যে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। আমরা আশা করবো, বর্তমান সরকার বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকারের বিধানগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক বিদ্যমান আইনসমূহ বাতিল করবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে কথা বলার স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে; নাগরিকের মৌলিক অধিকার সমুন্নত রাখবে। ক্রসফায়ার ও গুমের মতো ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড চিরতরে বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
পাশাপাশি এ কথাও স্মরণ করা আবশ্যক যে, ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলন যেভাবে বেহাত হয়ে উর্দি পরা স্বৈরাচারের স্থলে উর্দিহীন স্বৈরাচার বসেছিল, তার পুনরাবৃত্তি যেন এবার ঘটতে না পারে সেজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থাকে চিরতরে উচ্ছেদ করাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক কর্তব্য।
এছাড়াও গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পুনর্গঠন এই মুহূর্তের সবচেয়ে জরুরি কাজ। ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর জন্য সংবিধান সভার আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য গণক্ষমতাতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। পাশাপাশি, এই গণঅভ্যুত্থানে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকর্তৃক যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
কে/সিআর/২৪