আসাদ ঠাকুর, অমনিবাস: সারাদেশ জুড়ে ভয়াল থাবা বিস্তার করেছে মাদক। গ্রাম থেকে শহর, চায়ের দোকান থেকে মুদির দোকান— সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে মাদকের বিষ। এমনকি গ্রামীণ লোকালয়ের ছোট দোকান কিংবা ফেরিওয়ালার হাত ধরে চুপিসারে মাদক পৌঁছে যাচ্ছে সেবনকারীদের হাতে। কোথাও কোথাও গড়ে উঠেছে মিনি-মাদকের দোকান।
তবে মাদক এখন শুধু সেবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই; এটি পরিবার ও সমাজে অশান্তির আগুন জ্বালাচ্ছে। সন্তান মাদকাসক্ত হয়ে পরিবারের মধ্যে কলহ-বিবাদ সৃষ্টি করছে। মাদকের টাকার জন্য চলছে স্ত্রী-সন্তান, পিতা-মাতা, ভাই-বোনের সঙ্গে সংঘাত, এমনকি খুনোখুনি পর্যন্ত। অভিভাবকরা অনেক ক্ষেত্রে নীরব দর্শক। কেউ কেউ আবার নিজেরাই মাদক ব্যবসায় জড়িত।
একসময় গ্রামে মোড়লতন্ত্র বা সালিশ প্রথা ছিল। গুরুজনের শাসন ও শিক্ষকের বেত্রাঘাতের মাধ্যমে সন্তানদের নিয়ন্ত্রণ করা হতো। কিন্তু আজ সেই শাসন নেই, নেই শ্রদ্ধা-সম্মানের বোধ। ছাত্রের চোখে শিক্ষক কিংবা সন্তানের চোখে পিতা-মাতা— সবারই মর্যাদা যেন হারিয়ে গেছে। এরই সুযোগ নিচ্ছে মাদক।
বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা বিশেষত ভারতের সংলগ্ন অঞ্চলগুলো মাদকের প্রবেশদ্বারে পরিণত হয়েছে। কাটাতারের সীমান্ত থাকলেও অরক্ষিত ও দুর্গম পথ ব্যবহার করে সংঘবদ্ধ চক্র প্রতিনিয়ত মাদক পাচার করছে। বিজিবি ও পুলিশের সীমিত শক্তি দিয়ে প্রতিটি পথ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। সীমান্তের সৎ মানুষগুলোও চোরাকারবারিদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
প্রশাসনকে এককভাবে দোষারোপ করে কোনো লাভ নেই। রাতের অন্ধকারে কোন পথে মাদক আসছে তা একা পুলিশের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। মাদক বিরোধী লড়াইয়ে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার, সমাজ ও জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখতে হবে। নাহলে কেবল আইনের শাসন দিয়ে এ মহামারি ঠেকানো সম্ভব নয়।
তাই আমাদের করণীয় হলো- প্রত্যেক গ্রামে মাদক প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে।
পুলিশ ও বিজিবিকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে।
যুবসমাজকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষায় সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু করতে হবে।
সীমান্ত এলাকায় বিশেষ নজরদারি ও অবকাঠামোগত ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
উল্বেখ্য যে, বাংলাদেশের যুবসমাজই আমাদের আগামী দিনের শক্তি। তাই কাউকে দোষারোপ না করে— আসুন দেশ ও ওদের রক্ষা করি।
দ.ক.সিআর.২৫