সমম্পাদকীয়—
প্রযুক্তির উন্নতির ফলে সাংবাদিকতায় কিছু নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। সাংবাদিকের রিপোর্ট তৈরির যে ফাইভ ডব্লিউ ওয়ান এইচ ফর্মুলা, সেই ফর্মুলা এখন চলছে না। কারণ, এই ডিজিটাল যুগে কখন কোথায় কী ঘটছে, তা খুব তাড়াতাড়ি ইন্টারনেট ও বেতার-টিভির সৌজন্যে দ্রুত সবাই জেনে যাচ্ছেন। সকালবেলায় পত্রিকা পাঠকের কাছে সেটা পুরনো বা বাসি খবর। তাই এই বিষয়টি সাংবাদিকতার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। কারণ, যে তথ্য জানা হয়ে গেছে, সাংবাদিক তা আর জানতে চাইবে না, বাড়তি কিছু চাইবে। পাঠককে নতুন কিছু দিতে ঘটনার বিশ্লেষণ ও অনুসন্ধান চালাতে হবে। যে তথ্যগুলো এখনো জানা যায়নি, সেগুলো বের করে আনতে হবে। শুধু তথ্য দিলে হবে না, তথ্যগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে, ব্যাখ্যা দিতে হবে। কথা বলতে হবে ঘটনার ভেতরের-বাইরের, চারপাশের পক্ষের-বিপক্ষের মানুষের সঙ্গে, নির্মোহ ও নিরপেক্ষভাবে। এখন সাংবাদিকতাকে হতে হবে বিশ্লেষণী ও ব্যাখ্যামূলক; প্রতিটা খবরই হতে হবে অনুসন্ধানমূলক।
সাংবাদিকদের আশা করা ঠিক নয় যে, সব পাঠক সব বিষয়ে আগ্রহী হবে। অধিকাংশ পাঠকের সিরিয়াস বিষয়ে আগ্রহ কম থাকে। একুশ শতক নিউজ বিজনেসের নয়; ট্রাস্ট বিজনেসের, অর্থাৎ আস্থার ব্যবসার যুগ এটা। তাই প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে দরকার আধুনিক শিক্ষা ও চিন্তা-চেতনা সমৃদ্ধ জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রগামী সাংবাদিক। যারা সব সময় তথ্য ও তত্ত্বে এগিয়ে থাকবেন, ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করবেন, তথের প্রমাণ ও অনুসন্ধানে সদা ব্যস্ত থাকবেন। ভালো সাংবাদিক ছাড়া ভালো সংবাদপত্র হবে না। কিন্তু এখনো আমাদের সমাজে সৎ, শিক্ষিত ও ভালো সাংবাদিকের বড় অভাব। ভালো সাংবাদিক বেশি দরকার, যারা সবকিছু ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করবেন, সঠিক তথ্য ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ তুলে আনবেন।
আসলে সংবাদমাধ্যমের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সৎ, সত্যনিষ্ঠ, পক্ষপাতমুক্ত সাংবাদিকতা। সংবাদপত্রকে প্রমাণ করতে হবে কারও প্রতি পক্ষপাত নেই, কারও বিরুদ্ধে বা কারও পক্ষে কোনো অ্যাজেন্ডা নেই। সেটা সম্ভব হলেই সর্বস্তরের পাঠক সেই পত্রিকাকে গ্রহণ করবেন। গণমাধ্যমকে সব সময় মনে রাখতে হবে, সেই অন্যকে সুন্দর ও সঠিক পথে প্রভাবিত করবে। কিন্তু নিজে কখনো ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হবে না। অন্যায়-অসত্যের কাছে নতি স্বীকার করবে না।
আসাদ ঠাকুর
সম্পাদক, দৈনিক কালনেত্র
দ.ক.২৫