➖
কালনেত্র প্রতিবেদন
কোন প্রকার খারাপ কাজে বা মন্দ কথায় লিপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে সেটা খারাপ মৃত্যু বা মন্দ মৃত্যুর আলামত হিসাবে গণ্য হয়। মন্দ কথায় বা কর্মেরত হয়ে মৃত্যুবরণ করার আলামত সমূহই মন্দ পরিণতির ও অশুভ মৃত্যুর কারণ। যেমন, ইসলামী আকীদার পরিবর্তে ভ্রান্ত আকীদায় বিশ্বাসী হয়ে মারা গেলে, আখিরাতমুখী না হয়ে দুনিয়াবি বিষয়ে মত্ত থাকাবস্থায় মারা গেলে, হিদায়াতের বাণী গ্রহণ না করে শিরক, কুফর, নিফাক, বিদআত ও অন্যান্য গুনাহের সাথে জড়িত থাকা অবস্থায় মারা গেলে সাধারনভাবে মন্দ মৃত্যু বা অশুভ মৃত্যুর কারণ। আর অশুভ মৃত্যু থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অবশ্যকর্তব্য।
ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ্ ‘আল-জাওয়াবুল কাফী’ গ্রন্থে মন্দ মৃত্যুর একটি আলামত বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তিকে তার মৃত্যুর সময় ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলতে বলা হয়েছিল। সে উত্তরে বলল, তা আমার কোন উপকার করবে না। কারণ, আমি আল্লাহর জন্য কোন সালাত আদায় করেছি আমার তা জানা নেই। এ কথা বলে, সে কালিমা পাঠ করল না। তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, কোন এক ব্যক্তি গানকে খুব ভালবাসত এবং সে গান করত। তার মৃত্যুর সময় তাকে বলা হলো, তুমি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বল। কিন্ত সে কালিমা পাঠ না করে গানের দ্বারা বিদ্রূপ করে বলতে লাগলো, তাতানা তানতানা। এমতাবস্থায় সে মারা গেল।
ইসলামের ইতিহাসে সবচাইতে অশুভ মৃত্যু ছিল রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চাচা আবু তালিব এর মৃত্যু। সায়ীদ ইবনু মূসাইয়্যাব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ তালিব এর মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাছে আসলেন। তিনি সেখানে আবূ জাহল ইবনু হিশাম ও আবদুল্লাহ ইবনু উমাইয়্যা ইবন মুগীরাকে উপস্থিত দেখতে পেলেন। (রাবী বলেন) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবূ তালিবকে লক্ষ্য করে বললেন, চাচাজান! ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালিমা পাঠ করুন, তা হলে এর অসীলায় আমি আল্লাহর সমীপে আপনার জন্য সাক্ষ্য দিতে পারব। আবূ জাহল ও আবদুল্লাহ ইবনু আবূ উমায়্যা বলে উঠল, ওহে আবূ তালিব! তুমি কি আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম থেকে বিমুখ হবে? এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাছে কালিমা পেশ করতে থাকেন, আর তারা দু’জনও তাদের উক্তি পুনরাবৃত্তি করতে থাকে। অবশেষে আবূ তালিব তাদের সামনে শেষ কথাটি যা বলল, তা এই যে, সে আবদুল মুত্তালিবের ধর্মের উপর অবিচল রয়েছে, সে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে অস্বীকার করল। [সহীহ বুখারী ১২৭৭/১৩৬০]।
এভাবে হিদায়াতের আলোকবর্তিকা স্বীয় ভাতিজাকে সবকিছুর বিনিময়ে আমৃত্যু আগলে রেখেও শেষ মুহূর্তে এসে পরকালীন সৌভাগ্যের পরশমণি হাতছাড়া হয়ে গেল। স্নেহসিক্ত ভাতিজার প্রাণভরা আকুতি ব্যর্থ হলো এবং শয়তানের প্রতিমূর্তি গোত্রনেতাদের প্ররোচনা জয়লাভ করল। পিতৃধর্মের বহুত্ববাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেই তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় হলেন। এ দৃশ্য যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য কত বেদনাদায়ক ছিল, তা আখিরাতে বিশ্বাসী প্রকৃত মুমিনগণ উপলব্দি করতে পারেন। কেননা যে চাচা দুনিয়াবী কারাগারের অবর্ণনীয় দুঃখ-দূর্দশা থেকে সর্বদা ঢালের মত তাঁকে রক্ষা করেছেন এবং নিজে অমানুষিক কষ্ট ও দুঃখ সহ্য করেছেন, সেই চাচা দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণের পরে পুনরায় জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হবেন, এটা তিনি কিভাবে ভাবতে পারেন? বলা বাহুল্য এভাবেই সর্বদা তাকদীর বিজয়ী হয়ে থাকে। [সীরাতুর রাসূল (ছা:)]
আল কুরআনুল কারীম ও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীস থেকে আল্লাহর সাহায্যে আমরা বোঝার চেষ্টা করবো মন্দ পরিণতি ও অশুভ মৃত্যুর কারণসমূহ। ইনশা’আল্লাহ্!
দ.ক.সিআর.২৫