এফএমখন্দকারমায়া,চুনারুঘাট◾
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় চৌদ্দ হত্যায় বিদায় নিল ২০২৪ সাল।সীমান্তবর্তী এ উপজেলায় চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে ৩০ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪টি খুনের ঘটনা ঘটেছে।এ সকল হত্যা বেশির ভাগই সড়ক দুর্ঘটনা,গলা, হাত, পা, রগ কাটা অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া ৫-৭টি মরদেহ গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনা,ঘাতকদের আঘাত ও ডাকাতির ঘটনায় অশান্ত ছিল এ বছর চুনারুঘাট উপজেলা। তন্মধ্যে ডাকাতির ঘটনায় কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।শ্রমিক থেকে জনপ্রতিনিধির বাড়িসহ রোড ডাকাতি হয়েছে একাধিক।চোরাচালান ও মাদক ব্যবসায়ি ছিলো সক্রিয়। গত মাসে কেবল বিজিবি জওয়ানরা প্রায় আড়াই কোটি টাকার গাঁজা আটক করেছে। প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার মাদক পাচার হয় চুনারুঘাট থেকে।
তথ্য মতে বছর শুরু হয় হত্যার মধ্য দিয়ে। যেমন ১লা জানুয়ারি রাণীগাঁও ইউনিয়নে আইনজীবী সহকারী হারুন মিয়ার (৪০) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয় একটি ফসলি জমি থেকে। ২৪শে জানুয়ারি উবাহাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এজাজ ঠাকুরের বাড়িতে ডাকাতি সংঘটিত হয়। লুট করে নেয়া হয় নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ ৩০ লাখ টাকার মালামাল। ১১ই ফেব্রুয়ারি উবাহাটা ইউনিয়নের বালিয়ারী গ্রামের টমটম চালক দরিদ্র আতাউর রহমান (৫০)কে খুন করে ছিনতাই করা হয় টমটম। ২২শে ফেব্রুয়ারি আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের চিমটিবিল খাস গ্রামের বিষু মাল (৪০)কে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। মাদকের টাকা পাওনার ঘটনা নিয়ে ঘটে এ ঘটনা। ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ৮টায় চুনারুঘাট সাটিয়াজুরী বাইপাস সড়কে পীরেরগাঁও রাহি ব্রিকস সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনায় নিহত হন ৯নং রানীগাঁও ইউনিয়নের ফরিদ মিয়া (৩৫)। তিনি আবুধাবি প্রবাসী ছিলেন।২৭শে মার্চ চুনারুঘাট পৌরশহরের দক্ষিণাচরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে খামারবাড়ী থেকে স্বপন (১০) নামের এক কিশোরকে মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। শিশুকে গলাকাটা অবস্থায় পাওয়া যায়। স্বপনের বাবার নাম কবির মিয়া। ২১শে মে মিরাশি ইউনিয়নের লাতুরগাঁও গ্রামের আব্দুল হাসিম (৬০)কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তার ভাই মহিবুল হোসেনকে ২০১৮ সালে হত্যা করা হয়। হাসিম ওই মামলার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন। ৭ই জুলাই গাজীপুর ইউনিয়নের গণকিরপার গ্রামের আফরোজ মিয়া (৫০)কে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী।
এছাড়া, ১৭ জুলাই রাতে সাতছড়িতে লাশবাহি গাড়ীসহ অর্ধ শতাধিক যানবাহনে ডাকাতি সংঘটিত হয়। ১০ আগষ্ট রাণীগাঁও ইউনিয়নের একটি এগ্রোফার্মে ডাকাতি সংগঠিত হয়। ১৫ আগষ্ট রাণীগাও গ্রামে ডুবাই প্রবাসি রাসেল মিয়ার বাড়িতে ডাকাতরা হানা দেয় এবং রাসেল মিয়াকে হত্যা করে মালামাল লুট করে। ১৮ আগষ্ট চুনারুঘাট পৌর এলাকার নয়ানী গ্রামে চেতনা নাশক প্রয়োগ করে বন্ধুর কন্যাকে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় বিল্লাল ও ফয়সল নামের দুই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২৯শে আগস্ট রাণীগাঁও গ্রীনল্যান্ড পার্কের একটি কাঁঠাল গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় আব্দুল মতিন (৬০) নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ১০ই সেপ্টেম্বর রঘুনন্দন হিল থেকে অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।১৫ সেপ্টেম্বর সাতছড়ি রামগঙ্গা ব্রীজ সংলগ্ন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সুদিয়াখলা গ্রামের মৌলদ মিয়ার ছেলে ও শায়েস্তাগঞ্জ পৌর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হাফিজ সরকার (২৭) এবং একই উপজেলার তালুগড়াই গ্রামের হাজী কিম্মত আলীর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (২৬) নিহত হোন। ৩রা অক্টোবর শায়েস্তাগঞ্জ-পঞ্চাশ সড়কে ডাকাতি হয়। ১১ই অক্টোবর রেমা চা বাগানে প্রতিবন্ধী জামাল মিয়াকে খুন করে দোকানের মালামাল লুট করা হয়। ১৩ই অক্টোবর দেউন্দি চা বাগানের ফুলছড়ি টিলা থেকে অভিজিৎ সাঁওতাল (৪৫)কে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ১৭ই অক্টোবর উবাহাটা গ্রামে প্রবাসী রাজু মিয়ার বাড়িতে ডাকাতি হয়। ২৫শে অক্টোবর পৌর শহরে শিক্ষিকা দিলরুবা শিকদারের বাসায় চুরি হয়। ২৭শে অক্টোবর রাণীগাঁও গ্রামের ওয়াহিদুর রহমানের কন্যা রুমির (১৮) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ৩০শে অক্টোবর কালেঙ্গার চামলতলী এলাকাতে আইনজীবী সহকারী আক্তার হোসেনকে পিটিয়ে জখম করে একদল সন্ত্রাসী। ১লা নভেম্বর সমন্বয়ক পরিচয়ে ভারতীয় চিনি ভর্তি ট্রাক ছিনতাই করা হয় শানখলা-শায়েস্তাগঞ্জ সড়ক থেকে। ১৭ই নভেম্বর পিস্তল থেকে জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ার অপরাধে রংপুরের জাপা নেতা রানা মো. সোহেলকে পাকুরিয়া গ্রাম থেকে আটক করে পুলিশ। পরে সেনাবাহিনী এসে রানাকে তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়। ২১শে নভেম্বর গাজীপুর ইউনিয়নের হাপ্টার হাওর গ্রামে রাজু মিয়া (৫০)কে খুন করা হয়। ২৮শে নভেম্বর চণ্ডীছড়া চা বাগানে পানির কূপ থেকে দেড় বছরের শিশু রনি বাড়াইকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ১৪ই ডিসেম্বর রাণীগাঁও রিজার্ভ টিলা থেকে সূচিত্রা সাঁওতালের (৪৫) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।২০শে ডিসেম্বর চন্ডী মাজার সংলগ্ন বালু বুঝাই ট্রাক চাপায় নিহত হয় লাখাই উপজেলার সজল মিয়া (৩০) নামে এক যুবক।
সর্বশেষ ২৭ডিসেম্বর মফিল মিয়া চৌধুরী (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হাত পায়ের রগ কেঁটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২০২৪ সালে চুনারুঘাটের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। কয়েকটি স্থানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের চেষ্টা করা হয়।
এ বিষয় চুনারুঘাট থানা অফিসার ইনচার্জ নুর আলম সাথে কথা হলে জানান, তিনি এ থানায় নবাগত। তাই এই মুর্হুতে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আমাদের প্রতিনিধি সরাসরি উপস্থিত হলে অফিসার কর্তৃক তথ্য প্রদান নিশ্চত করবেন।