
নাজমুল ইসলাম হৃদয়, বাহুবল : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ও শ্রীমৎপুর গ্রামসংলগ্ন নিতনি কান্দি এলাকার ধানক্ষেতের নিচে ৮৩ বছর ধরে লুকিয়ে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক নীরব সাক্ষী—বিধ্বস্ত একটি জাপানি যুদ্ধবিমান। ১৯৪২ সালে ভয়াবহ যুদ্ধের এক সংঘর্ষে ভূপাতিত হওয়া বিমানটি আজও স্থানীয়দের কৌতূহল ও গবেষণার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সরেজমিনে নবীগঞ্জের শ্রীমৎপুর এলাকার ওই হাওড়ে দেখা যায়, ধানক্ষেতের মাটির গভীরে অযত্ন-অবহেলায় চাপা পড়ে আছে ঐতিহাসিক বিমানটির ধ্বংসাবশেষ। সময়ের সাথে জলাশয়টি ধানক্ষেতে পরিণত হলেও যুদ্ধবিমানটি যেন ইতিহাসের বুক চিরে আজও নীরবে অতীতকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
স্থানীয় প্রবীণদের তথ্যমতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে একটি জাপানি ফাইটার জেট আক্রমণের উদ্দেশ্যে এই অঞ্চলের আকাশসীমায় প্রবেশ করে। হঠাৎ ইঞ্জিন বিকল হয়ে সেটি নিতনি কান্দি জলাশয়ে বিধ্বস্ত হয়। প্রচণ্ড আঘাতে বিমানটি কাদা ও পানির গভীরে তলিয়ে যায়। যুদ্ধ শেষে বিমান উদ্ধারের চেষ্টা হলেও গভীর কাদার কারণে তা আর সম্ভব হয়নি। কয়েকজন পরে বিমানের ডানার অংশ খোলার চেষ্টা করলেও মূল অংশ আজও মাটির গভীরে অটুট অবস্থায় রয়ে গেছে।
ঘটনাটিকে ঘিরে এলাকায় নানা লোককথাও প্রচলিত রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ডেবরা গ্রামের এক ব্যক্তি একসময় মাছ ধরতে গিয়ে ছিটকে পড়া একটি বোমা খেলনা ভেবে বাড়িতে নিয়ে আসেন। রোদে শুকাতে দিলে হঠাৎ বিস্ফোরণে কয়েকজন আহত হওয়ার কথাও তারা উল্লেখ করেন।
বিধ্বস্ত বিমানটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে মানুষের ব্যক্তিগত স্মৃতিও। মরহুম আব্দুল মন্নান চৌধুরীর পরিবার জানান, যুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটিশ বিমান বাহিনীতে যোগদানের প্রক্রিয়ায় ছিলেন। একই সময়ে তাঁর আত্মীয় মারফত উল্লাহ সৈনিক পদে রিক্রুট হয়ে গ্রামে পৌঁছালে জাপানি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন তোলে। নিহত জাপানি পাইলটের দগ্ধ দেহের বর্ণনা শুনে পরিবার মন্নান চৌধুরীকে বিমান বাহিনীতে যোগ না দিতে অনুরোধ করে। পরে তিনি বিমান বাহিনীতে না গিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগে যোগদান করেন।
দীর্ঘ আট দশক পার হলেও ধানক্ষেতের নিচে লুকিয়ে থাকা এই বিমান ইতিহাসের অমূল্য দলিল হয়ে আছে। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ ঘটনাস্থলে এসে দাঁড়িয়ে যান সময়ের সাক্ষী হতে।
স্থানীয়রা জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এ নিদর্শনটি সংরক্ষণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাদের দাবি, দ্রুত বিমানটি উদ্ধার করে হবিগঞ্জে সংরক্ষণাগারে নিয়ে যাওয়া হোক। এ বিষয়ে তারা জেলা প্রশাসনের জরুরি উদ্যোগ কামনা করেছেন।
দ.ক.সিআর.২৫