1. live@kaalnetro.com : Bertemu : কালনেত্র
  2. info@www.kaalnetro.com : দৈনিক কালনেত্র :
সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
হবিগঞ্জে নবাগত পুলিশ সুপার ইয়াছমিন খাতুনের যোগদান চুনারুঘাট প্রেসক্লাবে মিথ্যাচারের অভিযোগে সাংবাদিক সম্মেলন মাধবপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় স্কুলছাত্রের মৃত্যু লাখাইয়ে ২০-২৫ জন প্রতিবন্ধী ভাতা বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে হবিগঞ্জে বিজিবির হাতে ভারতীয় ইস্কফ সিরাপসহ এক জন আটক লাখাইয়ে নির্মাণের ২ মাসেই বেহাল, পাকা রাস্তা এখন জনদুর্ভোগের প্রতীক  স্কুলে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা! প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি অনলাইন জুয়ায় আসক্তি: ফায়ার সার্ভিস কর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার  লাখাইয়ে কাইঞ্জা বিলে ইজারাদারের নৌকায় আগুন ও হামলা আহত ৬ মিরাশিতে বসতবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় প্রতিবাদ সমাবেশ

‘চা-বাগানের মেয়ে’ প্রিয়াংকার বৈষম্যের প্রাচীর ডিঙানোর গল্প

দৈনিক কালনেত্র
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫

 

ভোরের আলো ফোটার আগেই ভাড়াউড়া চা-বাগানের সরু পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে যিনি কাজে যেতেন, তিনি প্রিয়াংকা গোয়ালার বাবা। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সারাদিনের পরিশ্রম শেষে যে মজুরি পেতেন, তা মাত্র ১০২ টাকা। এই সামান্য আয়ে সংসার চলত না, পড়াশোনা তো অনেক দূরের কথা। তারপরও তিনি মেয়ের চোখে লুকানো স্বপ্নগুলো পড়তে পারতেন। প্রিয়াংকার বই হাতে সোজা হয়ে হাঁটার ভঙ্গিতে তিনি বুঝতেন—এই মেয়েটি অন্য রকম।

প্রিয়াংকার শৈশবটা ছিল চা-বাগানের প্রতিদিনের সংগ্রামের সঙ্গে জড়ানো—টিনের ঘর, খাটের পাশে স্কুলব্যাগ ঝুলে থাকা আর চারদিকে দারিদ্র্যের গন্ধ। তবু তার ভেতরে ছিল এক অদ্ভুত আলো। স্কুল থেকে ফিরে টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ জোগাত, আর মা-বাবার চেহারায় ক্লান্তি দেখলেই মনে মনে বলত, “একদিন আমি পারব… একদিন সব বদলাবো।”

কিন্তু চা-বাগানের মেয়েদের স্বপ্ন দেখার অধিকার যেন জন্মের আগেই সীমাবদ্ধ করে দেওয়া। পঞ্চম শ্রেণির পর অনেকেরই পড়াশোনা থেমে যায়। প্রিয়াংকার পথও যেন ঠিক সেদিকেই ধাবিত হচ্ছিল। কলেজে উঠতেই আত্মীয়দের চাপ শুরু—”মেয়ের বয়স হয়েছে, বিয়ে দিলে ভালো হয়।” হঠাৎ যেন স্বপ্নের ওপর ভারী পাথর পড়ে গেল।

রাতের দিকে যখন সবাই ঘুমিয়ে যেত, চুপচাপ খাটের ওপর বসে থাকত প্রিয়াংকা। ভাবত—এ কি তবে তার জীবনের শেষ? চা-বাগানের মেয়ে হওয়াটা কি এতটাই বড় অপরাধ? কিন্তু তার ভেতরে আরেকটা শক্ত কণ্ঠ বলত—”না, তুমি থামবে না।”

এই কণ্ঠই একদিন সাহস দিল। নিজের বিয়ে নিজেই ঠেকিয়ে দিল সে। ঠিক করল—শিক্ষার পথে আর এক পা-ও পেছাবে না।

গোপনে আবেদন করল চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (AUW)-এ। আবেদন পাঠানোর সময় তার হাত কাঁপছিল, কিন্তু মন ছিল দৃঢ়। কিছুদিন পরই খবর পেল—সে নির্বাচিত হয়েছে, সঙ্গে মিলেছে মেয়েদের জন্য বিশেষ বৃত্তি। সেদিন চা-বাগানের আকাশ যেন অন্য রকম লাগছিল।

শুধু AUW নয়; প্রথম আলো ট্রাস্ট ও IDLC থেকেও পেল অদ্বিতীয় বৃত্তি। যে মেয়েটি কখনো দুপুরে শুধু রুটি খেয়ে দিন পার করেছে, সেই মেয়েটি আজ ভবিষ্যতের দিকে দৃঢ় পায়ে হাঁটছে—এটাই যেন তার সবচেয়ে বড় অর্জন।

AUW-এ জনস্বাস্থ্যে স্নাতক সম্পন্ন করে প্রিয়াংকা ইন্টার্নশিপ করেন ইনস্টিটিউট অফ ওয়েলবিয়িং-এ। এখন তিনি ব্রাদার্স ফার্নিচার লিমিটেডে কমিউনিটি সেলস অফিসার।

তাঁর বাবা যেদিন কাঁপা হাতে মেয়ের স্নাতক সনদ ছুঁয়ে বলেছিলেন—”তুই পারলি মা…” সেদিন প্রিয়াংকার মনে হয়েছিল, পৃথিবীর সব কষ্ট, অপমান, সামাজিক চাপ—সবই যেন কোনো মূল্য পেয়েছে।

প্রিয়াংকার গল্প কেবল একটি মেয়ের সংগ্রামের কাহিনি নয়। এটি চা-বাগানের শুকনো পাতার ওপর ফুটে ওঠা এক নরম সবুজ কুঁড়ির গল্প—যে কুঁড়ি প্রমাণ করেছে, দারিদ্র্য কোনো মেয়ের স্বপ্ন কেড়ে নিতে পারে না, পারে না পাহাড়, সমাজ বা রেওয়াজও।

শেষবার যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ভবিষ্যতে তার স্বপ্ন কী—হাসিমুখে বলেছিল—”আমি চাই চা-বাগানের প্রতিটি মেয়ে স্কুলে যাক। তারা যেন জানে—শ্রমিকের সন্তান বলে কেউ ছোট নয়। তারা-ই হতে পারে আগামী দিনের নেতা, শিক্ষক, চিকিৎসক… বা শুধু নিজের জীবনের নায়ক।”

চা-বাগানের মাটিতে জন্ম নিলেও প্রিয়াংকার স্বপ্ন এখন আকাশ ছুঁয়ে। আর তার গল্পটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—স্বপ্ন কখনও ছোট হয় না, আমরা ছোট করে ভাবি।

দ.ক.সিআর.২৫

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© 𝐰𝐰𝐰.𝐤𝐚𝐚𝐥𝐧𝐞𝐭𝐫𝐨.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট