
সম্পাদকীয় ভাবনা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ভোটব্যাংকের হিসাব বদলে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে তরুণ ভোটাররা হতে পারেন সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল শক্তি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতের নির্বাচনী ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ভোটের সমীকরণ আর যৌক্তিক নয়। বর্তমান বাস্তবতায় তরুণ প্রজন্মের ভোটই হবে নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে প্রধান প্রভাবক। তবে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো এই বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত হালনাগাদ করা ভোটার তালিকা অনুযায়ী, দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ৬২ লাখ। এর মধ্যে ১৮ থেকে ৩৭ বছর বয়সী ভোটার প্রায় ৫ কোটি ৪৪ লাখ, যা মোট ভোটারের প্রায় ৪৩ শতাংশ। গত এক দশকে নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে সোয়া তিন কোটি, যার মধ্যে একেবারে নতুন ভোটার প্রায় অর্ধকোটি। এই বিপুল সংখ্যক তরুণ ভোটার, যাদের অনেকেই অতীতে ভোট দিতে পারেননি, আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত! বহু বছর ধরে প্রভাবহীন থাকা একটি সংগঠন হঠাৎ করেই ধারাবাহিক বিজয়ের মাধ্যমে আলোচনায় এসেছে। এটি শুধু একটি সংগঠনের উত্থান নয়, বরং ক্যাম্পাস রাজনীতিতে এক নতুন ধারা গঠনের ইঙ্গিত বহন করে।
শিক্ষার্থীদের ভোটের বার্তা :
বিশ্ববিদ্যালয় সবসময়ই সমাজের রাজনৈতিক তাপমাত্রা মাপার সবচেয়ে নির্ভুল থার্মোমিটার। শিক্ষার্থীরা যখন কোনো নতুন বিকল্পের দিকে ঝুঁকে পড়েন, তখন সেটি শুধু ক্যাম্পাস রাজনীতির সীমায় থাকে না— সেটি ভবিষ্যৎ জাতীয় রাজনীতির দিকও নির্ধারণ করে।
এবারের নির্বাচনে দেখা গেছে, অনেক শিক্ষার্থী প্রথাগত দলের ছায়া রাজনীতি থেকে সরে এসে নিজেদের মূল্যবোধ ও নীতির জায়গা থেকে ভোট দিয়েছেন। এটি তরুণ সমাজের নতুন চিন্তাধারার প্রতিফলন।
নেতৃত্বের দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ :
বিজয় অর্জন করা যতটা সহজ, আস্থা ধরে রাখা তার চেয়ে অনেক কঠিন। এখন দায়িত্ব এই নতুন নেতৃত্বের—
– তারা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাস্তব সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করে,
– মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও একাডেমিক পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখে,
– এবং অতীতের ভুল ও বিতর্ক থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি ইতিবাচক রাজনীতির সংস্কৃতি গড়ে তোলে।
যদি তারা দায়িত্বশীলভাবে কাজ করতে পারে, তাহলে আগামী দশকে এই নেতৃত্বই জাতীয় রাজনীতির নতুন রূপরেখা নির্ধারণ করবে। কিন্তু যদি ক্ষমতার অপব্যবহার বা একগুঁয়েমির পথে হাঁটে, তবে শিক্ষার্থীদের সেই আস্থা এক মুহূর্তেই ভেঙে যেতে পারে।
ভবিষ্যতের বার্তা :
আজকের ক্যাম্পাস রাজনীতি আগামী দিনের জাতীয় রাজনীতির আয়না। তাই এই পরিবর্তন শুধু একটি নির্বাচনের ফল নয়— এটি একটি মানসিকতার পরিবর্তন। তরুণরা চাইছে ভিন্ন ধারা, স্বচ্ছ নেতৃত্ব ও বাস্তবমুখী কর্মসূচি।
এখন সময় এসেছে, এই আস্থা ও পরিবর্তনের বার্তাকে কাজে রূপ দেওয়ার। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারলে, ইতিহাস নতুন করে লেখা হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, যে রাজনৈতিক দল তরুণ ভোটারদের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারবে, তারাই আগামী নির্বাচনে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। তরুণদের মন জয় করতে হলে পুরোনো বয়ান ছেড়ে নতুন, গতিশীল ও সময়োপযোগী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন।
নতুন প্রজন্মের ভোটাররা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে। তবে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি ও কৌশলের পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি।
দ.ক.সিআর.২৫