মো: শফিকুলইসলাম,রংপুরবিভাগীয়প্রধানঃ রংপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ও রংপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকুর আকস্মিক মৃত্যুতে। বুধবার ৮ অক্টোবর ২০২৫ সকাল ৭টা ১০ মিনিটে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। তিনি বৈবাহিক জীবনে দুই কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আসন্ন ১৪ অক্টোবর রংপুর জেলা বিএনপির সম্মেলন উপলক্ষে দলীয় প্রস্তুতিমূলক সভা ও বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রম শেষে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে রংপুর ফেরার পথে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। গাড়িতেই তিনি বুকের ব্যথা অনুভব করেন। সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা দ্রুত তাঁকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকরা জানান,আগেই তাঁর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
রংপুর জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাহ জিল্লুর রহমান জেমস সকালেই তাঁর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন। সংবাদটি ছড়িয়ে পড়তেই রংপুর জুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। রাজনৈতিক অঙ্গনের বাইরে সাধারণ মানুষও মর্মাহত হয়ে পড়েন তাঁর মৃত্যুতে। আনিছুর রহমান লাকুর মরদেহ সকাল সাড়ে ১০ টায় লাশবাহী গাড়িতে করে রংপুর নগরীর নুরপুরে তাঁর নিজ বাড়িতে আনা হলে এলাকাবাসীর আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে আত্মীয়স্বজন, রাজনৈতিক সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ী, প্রতিবেশী সবাই ভিড় করেন শেষবারের মতো প্রিয় নেতাকে দেখার জন্য। ছাত্রজীবন থেকেই আনিছুর রহমান লাকু ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সক্রিয় সংগঠক। পরে তিনি রংপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক,কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দলের তৃণমূল থেকে উঠে আসা এই নেতাকে ২০২২ সালে রংপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব পদে মনোনীত করা হয়। দলের ভেতরে ও বাইরে সৎ, ত্যাগী, এবং কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে তিনি সর্বজনবিদিত ছিলেন। আসন্ন জেলা সম্মেলনে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন বলে জানা গেছে।
বুধবার বাদ আছর রংপুর ঈদগা কালেক্টর মাঠে অনুষ্ঠিত হয় তাঁর প্রথম জানাজা। জানাজায় বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজারো নেতা-কর্মী অংশ নেন। এসময় গোটা মাঠ পরিণত হয় শোকার্ত মানুষের সমাবেশে। অনেকেই কান্না ধরে রাখতে পারেননি। তাঁদের চোখেমুখে ফুটে উঠেছিল এক নিবেদিতপ্রাণ নেতাকে হারানোর বেদনা। পরে রাতে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় নিজ এলাকা নুরপুর ছোট মাঠ। জানাজা শেষে নুরপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। দাফনের সময় পুরো এলাকা শোকে নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে।
এছাড়াও স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন,লাকু ভাই ছিলেন ত্যাগী,সৎ ও জননন্দিত নেতা। সংগঠনের প্রতিটি পর্যায়ে তাঁর অবদান অম্লান থাকবে।
তাঁরা তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এক বিবৃতিতে বলেন,আনিছুর রহমান লাকু ছিলেন সংগঠনের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী,যিনি দল ও গণতন্ত্রের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর মতো আদর্শবান নেতা হারানো বিএনপির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। রংপুরের রাজনীতিতে তাঁর মৃত্যু যেন এক যুগান্তকারী শূন্যতা তৈরি করেছে। এলাকাবাসীর চোখে-মুখে এখনো একটিই প্রশ্ন লাকু ভাইয়ের মতো নেতা আর আসবে কি?
জানাজার দিন রংপুর শহরজুড়ে যেন থেমে গিয়েছিল জীবনের গতি। শহরের রাজপথ, অলিগলি, দোকানপাট সবখানেই ছিল শুধু শোক আর স্মৃতিচারণা। আনিছুর রহমান লাকু শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নয় তিনি রংপুরবাসীর কাছে একজন মানবিক ব্যাক্তিত্বের আইকন।
ভালো মানুষ কখনো মরে না। তার রেখে যাওয়া মহৎ কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন চিরকাল।
দ.ক.সিআর.২৫