মুহিবুর তালুকদার শিবলু: হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় মানব সম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি প্রকল্প কর্তৃক বিতরণের লক্ষ্যে টয়লেট নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যে মানের রিং বা ম্যাটারিয়ালস ব্যবহার করার নির্দেশনা রয়েছে তা মানা হচ্ছে না। নিম্নমানের মালামাল দিয়ে টয়লেট নির্মাণ করার অভিযোগে কাজে বাধা ও কাজ বন্ধ রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে আমাদের কাছে রিংয়ে ৩ এমএস তারের স্থলে ২ এমএস তার দেওয়ার অভিযোগ এসেছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিস সূত্রে জানা যায়, চুনারুঘাট উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে বিতরণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ২ হাজার ২৯০টি টয়লেট বাবদ ৭ কোটি ২৪ লক্ষ ৫৫ হাজার ৬০০ টাকা বরাদ্দ এসেছে। প্রতিটি টয়লেটের জন্য পৃথকভাবে বরাদ্দের পরিমাণ দাঁডায় ৩১ হাজার ৬৪০ টাকা। এই টাকা থেকে ভ্যাট আইটি ১২% হারে ৩ হাজার ৭৯৭ টাকা আর ঠিকাদারের পার পিস প্রফিট ২ হাজার টাকা করে বাদ দিয়ে প্রতিটি টয়লেট নির্মাণের জন্য থাকে ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা। কিন্তু কর্মশালায় সরকার কর্তৃক যে মানের টয়লেটের বর্ণনা দেওয়া হয়েছিল তাতে প্রতি টয়লেটের খরচ ধরা হয়েছে আনুমানিক ২৩ হাজার ৬৭৫ টাকা। সে হিসেবে টয়লেট করে দেওয়ার পরও প্রতি টয়লেট থেকে ২ হাজার ১৬৮ টাকা অর্থাৎ ২২৯০টি টয়লেট বাবদ মোট ৪৯ লক্ষ ৬৪ হাজার ৭২০ টাকা উদ্বৃত্ত থাকে।
ছক অনুযায়ী প্রতিটি টয়লেটের উপকরণ ও সম্ভাব্য মূল্য ধরা হয়েছে ৪টি আরসিসি প্লেট ২ হাজার টাকা, খোয়া ২৮০ টাকা, বালি ১২০ টাকা, সিমেন্ট ৫৬০ টাকা, ৪ এমএস তার ৩২৫ টাকা, সাইফুন পিভিসি ১২০ টাকা, সিরামিকের কমোড ৯৫০ টাকা, পিভিসি হোজ পাইপ ৫২০ টাকা, পিভিসি গ্যাস পাইপ ২৪০ টাকা, রং ১৫০ টাকা, বালতি বা ড্রাম/ মগ/বদনা/ টয়লেট ব্রাশ/ হারপিক ৫২০ টাকা, রিং ১০টি ৪৫০০ টাকা, ঢাকনা ২টি ৯০০ টাকা, আরসিসি পিলার ১০২’ ১৫০০ টাকা, আরসিসি পিলার ৯৬’ ১৪০০ টাকা, কাঠ ২১০০ টাকা, টিন ৪২০০ টাকা, তারকাটা ১৩০ টাকা, স্ক্রু ৩০ টাকা, কব্জা ২৪০ টাকা, ব্যারেল বোল্ট ১২০ টাকা, হ্যাজ বোল্ট ১৬০ টাকা, টিন পেরাক ৫০ টাকা ও পরিবহন এবং মজুরি বাবদ ২৫০০ টাকা।
গাজীপুরে যে মানের উপকরণ ধরে প্রতি টয়লেট বাবদ ২৩ হাজার ৬৭৫ টাকা খরচ এসেছে ওয়ার্ক অর্ডারে ম্যাটারিয়ালসের পরিমাণ এর চেয়েও কম রয়েছে বলে জানা গেছে। রিংয়ের জন্য ৪ এমএস তার (৫এমএম) ধরা হয়েছে আড়াই কেজি কিন্তু ওয়ার্ক অর্ডারে আছে ৩ এমএস তার। টিন ০.২৫ এমএমের স্থলে ওয়ার্ক অর্ডারে আছে ০.১৯ এমএম। তারপরও কাজের কোয়ালিটি মেইনটেইন না করে ভোক্তাদের ঠকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন গিয়ে কথা হয় উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের আসামপাড়া বাজারের বাসিন্দা যুবদল নেতা শামীম আহমেদ এর সাথে। তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে যেদিন দরিদ্রদের জন্য টয়লেট নির্মাণ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছিল আমি সেদিন ওই কর্মশালায় চেয়ারম্যান সাবের সাথে উপস্থিত ছিলাম। ওখানে টয়লেটগুলো যেভাবে নির্মাণ করার কথা বলা হয়েছিল সেভাবে করা হচ্ছে না। আমার এক প্রতিবেশীর জন্য করা টয়লেটটিতে দুর্নীতি চোখে পড়লে সাব-কনট্রাক্টরকে আমি এ ধরনের নিম্ন মানের কাজ করতে বাধা দেই। তিনি বলেন, ভাই, আগে বললে কাজটা আরেকটু ভালোভাবে করে দিতাম। এখন আর বাধা দিয়ে লাভ কি? ফলে ওই কাজটি বন্ধ রাখা হয়েছিল।
সাব-কনট্রাক্টরের নিকট কাজের কোয়ালিটি এবং প্রতিটি টয়লেটের জন্য কি কি ম্যাটারিয়ালস ব্যবহার করা হচ্ছে জানতে চাইলে সাংবাদিককে তিনি এ তথ্য দিতে অস্বীকার করেন এবং উর্ধ্বতনদের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
পরে এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের সহকারী প্রকৌশলী সজীব মিয়া বলেন, ঠিকাদারের কাছে আমার চাহিদা হলো প্রতিটি রিং ড্রয়িং মোতাবেক আমাকে দিতে হবে। থিকনেস ঠিক থাকতে হবে। ড্রয়িং মত কাজ বাস্তবায়ন করাই আমার দায়িত্ব। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দ.ক.সিআর.২৫