আসাদ ঠাকুর◾
হলফ করে বলা যায়, বাংলাদেশের কোনো পেশায় এত সংগঠন নেই, যা রয়েছে সাংবাদিকতা পেশায়। তবে বেশির ভাগই সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে ধান্ধার সরল পথ হিসেবে এ সংগঠনকে ব্যবহার করে। হাতিয়ার বানায়। মূল ধারার সাংবাদিকরা কখনই সংগঠনের ধার ধারেন না। তারা তাদের কাজ নিয়েই ব্যস্ত। শুধুমাত্র পেশাগত কারণে সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন। আর ভুয়া, নামধারী, ধান্ধাবাজ সাংবাদিকরা সংগঠন তৈরিই করে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে। আর এ উদ্দেশ্য তারা প্রতিমুহূর্তে বাস্তবায়ন করে। তারা নেমে পড়ে চাঁদাবাজিসহ নানা ফন্দি-ফিকিরে।
আসলে এত সংগঠনের প্রয়োজন কেন? যারা মূল ধারার সাংবাদিক তারা জেলা বা উপজেলায় একটি প্রেস ক্লাবের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবেন। একসঙ্গে লড়াই করবেন। তাদের মধ্যে রিপোর্টের প্রতিযোগিতা থাকবে। কিন্তু আমরা কি দেখি? প্রতিটি উপজেলায় একাধিক সাংবাদিক সংগঠন। প্রেস ক্লাবের বাইরে নামধারীরা নানা নামে সাংবাদিক সংগঠন গড়ে তোলেন। আর সংগঠনের নামে তারা অসৎ কাজে নেমে পড়েন। এমনটা হওয়ার কারণ, সাংবাদিক সংগঠন তৈরির কোনো নীতিমালা নেই। কোনো গাইডলাইন নেই। এ সুযোগটিই কাজে লাগায় তারা। আর তাদের দাপটে তটস্থ থাকে সাধারণ মানুষ। হেন কাজ নেই যেখানে তাদের ছোঁয়া নেই। সাধারণ মানুষ তাদের দেখে সাংবাদিকতা পেশাকে ঘৃণা করতে থাকেন। তারা মনে করেন সাংবাদিকরা বুঝি এভাবেই চলেন। ভয়ঙ্কর তথ্য হলো- বর্তমানে ঘিরে ফেলছে এমন সাংবাদিক সংগঠনগুলো। যারা সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে ফিকিরে ব্যস্ত।
সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিকতাই তাদের লক্ষ্য। আর এ লক্ষ্য পূরণে তারা শুরুতেই টার্গেট করে পুলিশকে। তারা পুলিশের দালাল রূপে আবর্তিত হয়। গলায় কার্ড ঝুলিয়ে থানায় ঘোরাফেরা করে। কোনো মানুষ দেখলেই তাদের সমস্যা সমাধানের কথা বলে চুক্তি করে। কিছু অংশ নিজে নেয়। বাকিটা দেয় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যকে। এক কথায় এরা সাংবাদিক নয়। এরা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। কখনো কখনো তারা টার্গেটকৃত ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদা আদায়ে ব্যর্থ হলে নারী সদস্যদের দিয়ে কল্পিত অভিযোগ তুলে থানায় সাধারণ ডাইরি করে। পরে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা, প্রতিবাদ, মানববন্ধনের হুমকি দিয়ে চাহিদামাফিক অর্থ হাতিয়ে নেয়। এমন নজিরও রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে প্রশাসনের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছেন একাধিক ব্যক্তি।
দেশে সাইনবোর্ডসর্বস্ব বহু সংগঠন রয়েছে। প্রেস ক্লাব ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা প্রেস ক্লাব, ন্যাশনাল প্রেস ক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ রিপোর্টার্স ক্লাব, ক্রাইম রিপোর্টার্স সোসাইটি, সাংবাদিক ফোরাম, সাংবাদিক কল্যাণ-অপারেটিভ লি ও মেট্রোপলিটন প্রেস ক্লাব নামের কথিত সংগঠনের ব্যানারে দাবড়ে বেড়াচ্ছে তারা। শুধু তাই নয়, ভুঁইফোঁড় এসব সংগঠন টাকার বিনিময়ে সারা দেশে শাখা-প্রশাখা পর্যন্ত অনুমোদন দিয়ে চলছে।
এসব সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকেই পদবি ধারণ করে রঙ বেরঙের ভিজিটিং কার্ড বিলিয়ে বেড়ান। এরা মাদক ব্যবসায়ি, চোরাকারবারি, আবাসিক হোটেল ও আদম পাচারকারীদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা আদায় করেন।
শেষ কথা হলো- সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় স্বাস্থ্যসেবার যাবতীয় প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে নিবন্ধন দিচ্ছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় দেয়া হচ্ছে এনজিওসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সমূহের নিবন্ধন। তেমনি শ্রম অধিদপ্তরের মাধ্যমে শ্রমিক সংগঠন, সমবায় অধিদপ্তরের মাধ্যমে সমবায়ী সংগঠনসমূহের নিবন্ধনভুক্ত করা হয়। তাহলে মিডিয়াভুক্ত কর্মী ও সাংবাদিক সংগঠনসমূহকে কেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনের আওতায় আনা হচ্ছে না? যথাযথ মন্ত্রণালয়ের আওতায় সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নিবন্ধন ব্যবস্থা না থাকায় ভুয়া আর প্রতারকরা এ সুযোগের অপব্যবহার করে চলছে। সাংবাদিক সংগঠন খোলে চালিয়ে যাচ্ছে বহুমুখী বাণিজ্য।
এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে মূলধারার সাংবাদিকদেরকেই উদ্যোগ নিতে হবে। আর সেটা নিজেদের স্বার্থেই নিতে হবে।
দ.ক.সিআর.২৪