কালনেত্র প্রতিবেদকঃ
প্রিয় শেখ হাসিনা, আপনাকে করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছে আপনার অত্যাচারী হয়ে উঠার কারণে। দমন-পীড়ন, বিরোধী দলের উপর ক্ষুধার্ত হায়নার মতো ঝাঁপিয়ে পড়াই ছিলো আপনার রাজনীতি। আপনার দলিয় বাহিনীও এতো অত্যাচারী হয়ে উঠেছিল তাদেরকে ট্যাক্স দেয়া ছাড়া গ্রামে কেউ পুকুরে মাছ পর্যন্ত চাষ করতে পারেনি। এদের অন্যায়কে আপনি প্রশ্রয় দিয়েছেন।
অফিস আদালত ঘুষ খোরের আখড়া হয়ে উঠেছিলো। আপনার অফিসারেরা আপনার সামনে ধনাঢ্য হয়ে উঠলো আপনি ইগনোর করলেন। তবুও আমার মতো অনেকেই আপনাকে ভালোবাসলো কারণ কিছু ব্যাপারে আপনি দারুণ করেছেন। শিক্ষার ব্যাপক প্রসার করেছেন, নারীশিক্ষার প্রতি, নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি, নারীর প্রতি সুবিচার করার জন্য আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করেছেন। কিন্তু দমন পীড়ন আপনার অমূল্য অর্জনটিকে নস্যাৎ করে দিয়েছে।
আমরা জানি- নারী মাত্রই মমতাময়ী। কিন্তু আপনার মমতা কোথায়? জয়কেও মানবিক করতে পারলেন না, পুতুলকেও না। তারা প্রতিবন্ধীর মতো বেড়ে উঠেছে।
আপনি মা হতে পারলেন না মমতাময়ী কীভাবে হবেন? তাই আয়না ঘর বানিয়েছেন। সেখানে নিয়ে যাকে অত্যাচার করা প্রয়োজন করেছেন। বছরের পর বছর আঁটকে রেখেছেন। ডিবি পুলিশ, এনএসআই এদেরকে সন্ত্রাসী হতে বাধ্য করেছেন। এদেরকে আপনি সঠিক ভাবে ব্যবহার না করে দুর্নীতিবাজ বানিয়েছেন। তাই আজ যে জনগণ স্বপ্রণোদিত হয়ে আপনার পতন নিয়ে এসেছে এর জন্য দায়ী আপনিই।
আপনার ঘরে, আপনার দলীয় লোকদের ঘরে লক্ষ লক্ষ টাকার বান্ডিল। কোথায় পেলেন এসব? আপনাকে কোটি কোটি টাকা না দিলে আপনি নিয়োগ, পদোন্নতি দেন নাই। আপনার কাছে সৎ অফিসারেরা মূল্যয়ন পায়নি পেয়েছে দুর্নীতিবাজ অফিসার’রা
আপনি কত কত লোকের জীবন খেয়েছেন। বিরোধী দলের নেত্রীকে, ড. ইউনুসকে আপনি অহেতুক মামলায় কী হেনস্তাই না করলেন। আপনার কাছে সততা মূল্যহীন। তাই আপনার আশেপাশের সব মানুষ দেশটাকে লজেন্স ভেবে চুষতে চুষতে জিরো বানিয়ে দিয়েছে।
এরপরও ভাবতাম আমার জন্য আপনি দুঃশাসক হলেও দেশের জন্য বোধহয় ডায়নামিক। কিন্তু জানেন তো দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য। তাই জনগণ আপনাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
ছাত্ররা যখন হাততালি দিয়ে, ছবি এঁকে, গান গেয়ে, শ্লোগান দিয়ে আন্দোলন করছে, আপনি তখন মিসাইল, পিস্তল, রিভলবার, বন্দুক, গান পাউডার, সাথে আপনার পুলিশ ডিবি সব লেলিয়ে দিলেন। তাও পারলেন না থামাতে! ছাত্রদের হাততালিতেই আপনি কুপোকাত!
আপনি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় গিয়েছেন, মানুষের সেবার জন্য যাননি। আপনি মুক্তিযুদ্ধ -মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কী খেলাই না খেললেন। আপনি যুদ্ধ করেননি। যে যুদ্ধ করেছে তাকে খুনী হত্যাকারী কতই গালি দিলেন। রাজাকার রাজাকার নামতা পড়তেন!
শুধু তাই নয় আপনার দলের অনেক বিদগ্ধ নেতা আছে, আপনাকে ভালোবাসে কোন শর্ত ছাড়াই আপনি তাঁদেরকেও মাইনাস করেছেন! যার টাকা আছে তার নমিনেশন আছে। আপনি নিজেই চোরের সর্দারনি ছিলেন।
আয়না ঘরের অভিশাপ কান পেতে শুনুন। আয়না ঘরের দেয়ালে দেয়ালে অতৃপ্ত আত্মার হাহাকার। আপনার নামে অভিশাপ জপ হচ্ছে। সে জপের আওয়াজ শুধুই একটা- আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দাও, আমার বাবাকে ফিরিয়ে দাও। পারবেন ফিরিয়ে দিতে?
আপনি ব্যাংকগুলোকে জিরো বানিয়েছেন। শিক্ষাব্যবস্থাকে জনগনের নাগালের বাইরে নিয়ে গেলেন। ভাবলেন না এই জনগন, এই শিক্ষক এই ক্যারিকুলাম বাস্তবায়ন করতে পারবে কিনা? শিক্ষকদের ট্রেনিং কোর্সকে মুসলমানি করিয়ে দিয়েছেন। জানেন এ সবই ছিলো উন্নয়নের হাজার কোটি টাকা লোপাট করার ধান্ধা।
আপনি জানেন? এই স্টুডেন্ট মুভমেন্টে কত ছাত্র শহীদ হয়েছে, তাদের বয়স কত, তাদের স্বপ্ন কী ছিলো জানেন কিছু? হাতির ঝিলের লেকে যে শিশু কিশোরদের আপনার বাহিনী মেরে ফেলে দিয়েছে তাদের একশ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি, গণ কবরে যাদের শুয়ে দিয়েছেন এ লিস্টে তারাও নেই।
এদেশের জন্য আপনার পরিবারের কেউ যুদ্ধ করেনি, মরেওনি। আপনাদের পরিবার তখন পাক হানাদারদের দেয়া রেশনে চলতো। তবুও আপনারা মুক্তিযোদ্ধা। এদেশের ৯৯% জনগণ নানান ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ছিল। তবুও সবাইকে কথায় কথায় রাজাকার আলবদর তকমা দিতেন। যা শুনতে শুনতে এদেশের মানুষ ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। আপনার তৈরি করা ষাণ্ডারা যাকে তাকে যখন তখন রাজাকার তকমা দিয়ে দেশটিকে জাহান্নাম বানিয়েছেন! যেকারণে ভিক্ষুক পর্যন্ত আপনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে! কী লজ্জা!
মোঃ তারেক মিয়া তালুকদার সুজন
সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী, চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ
কে/সিআর/২৪