1. live@kaalnetro.com : Bertemu : কালনেত্র
  2. info@www.kaalnetro.com : দৈনিক কালনেত্র :
মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ১১:২৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :

দেশের সর্বত্রই ছিল হাসিনার একদলীয় নৈরাজ্যের পদধ্বনি; জিএম কুটি

দৈনিক কালনেত্র
  • প্রকাশিত: সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০২৪
  • ৫৬১ বার পড়া হয়েছে

কালনেত্র প্রতিনিধিঃ স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগের প্রথম শাসন আমলে চরম দূনীতি, নৈরাজ্য এবং চরম দলবাজীর কারনে বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করেছিল দুর্ভিক্ষ। স্বাধীনতাকামী জনগণের স্বাধীনতাযুদ্ধের চরম আত্মত্যাগকে পদদলিত করে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ দেশকে দুঃশাসন আর লুণ্ঠনের নরকরাজ্যে পরিণত করেছিল।

সেসময় বিরোধী পক্ষকে নির্বিচারে অপহরণ ও খুনের মাধ্যমে তাদের কণ্ঠরোধ করেছিল। প্রশাসনে অন্তহীন দলীয়করণ করা হয় ও মানুষের বাক স্বাধীনতা রুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। প্রবর্তন করা হয় একলীয় শাসন ব্যবস্থা ‘বাকশাল’। সরকারি দল সে সময়ে ভিন্ন মতকে দমনের জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রায় ৪০ হাজার নেতা-কর্মীকে খুন করে। আওয়ামী দুঃশাসনে ভূক্তভোগী জনগণ হারিয়েছিল স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার সকল অধিকার। স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল অতি অস্বাভাবিক চাওয়া। এত্বসত্বেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত চরম নির্লজ্জের মতো সকল অরাজকতা ও ব্যর্থতার জন্য বিরোধী পক্ষকে দোষারোপ করে মিডিয়ায় একতরফা মিথ্যা প্রচার করতো।

আওয়ামী লীগ ছিলো কিছু বিষয়ে বিশেষ পারদর্শী। তাদের বৈশিষ্ট্য হলো-
১. অপশাসন, গুম, খুন, অপহরণ, মানবতা বিদ্বেষী কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিরোধী ও ভিন্ন মতের কণ্ঠরোধ করা।
২. এক-নায়কতান্ত্রিক মতবাদ অনুসরণ করা এবং পরিকল্পিত ভাবে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সমূহ সর্বোচ্চমাত্রায় দলীয়করনের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে অকার্যকর করে ব্যক্তি ও দলীয়স্বার্থ হাছিল করা।
৩. তথাকথিত আদর্শের মোড়কে চরম ব্যক্তিবন্দনার ছদ্মাবরণে সীমাহীন অর্থলিপসা ও লুট-পাট করা।
৪. জাতীয় স্বার্থ অগ্রাহ্য করে ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধি করা।
৫. নগ্ন ও পৈশাচিক প্রতিহিংসা পরায়নতা।
৬. তাদের সকল অপকর্মের দায় বিরোধী পক্ষের উপর চাপানো এবং তাদের বিরুদ্ধে কুৎসারটনা ও মিথ্যা দোষারোপ করা।
৭. বাকস্বাধীনতা হরণ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কুক্ষিগত করে মিথ্যা দলীয় প্রচারনা মাধ্যমে জনগণকে বোকা বানিয়ে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল করার চেষ্টা করা।
৮. সর্বাগ্রাসী সন্ত্রাসের মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে সাধারণ জনগণকে রাজনীতি বিমুখ রাখা।

১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে নির্বাচিত বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ, জামাতে ইসলাম এবং জাতীয় পার্টি যুগপৎ ভাবে আন্দোলন করেছিল। আন্দোলনের মোড়কে তারা সেসময় সীমাহীন সন্ত্রাসের রাজ্যত্ব কায়েম করে, যার নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী লীগ। তাদের সীমাহীন বর্বরতা এবং সন্ত্রাসির দৌরাত্য দেশবাসী দেখেছে। তাদের আন্দোলনের কারনে এসএসসি পরীক্ষা তিন মাস পিছাতে হয়েছিল এবং চট্টগ্রাম বন্দর অচল ছিল। এসময় সামরিক বাহিনীতে উষ্কানি দিয়ে জেনারেল নাসিমের মাধ্যমে ‘ক্যু’ সংগঠনের চেষ্টা করা হয়, যা সমসাময়িক প্রচার মাধ্যমে বিশদভাবে প্রকাশিত হয়। তখনও আওয়ামী নেতৃবৃন্দের নিলর্জ্জ মিথ্যাচার ও গলাবাজী কারো অজানা নয়। জাতির বৃহত্তর স্বার্থ চিন্তা করে বিএনপি সেসময় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা মেনে নেয়।

১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং আবার তাদের পুরনো ‘বাকশালী’ দুঃশাসনের চিরায়ত রুপে স্বদম্ভে আত্মপ্রকাশ করে। শুরু হয় বিরোধী রাজনৈতিক দলের উপর অপহরণ ও খুনের সেই স্বভাবসিদ্ধ সংস্কৃতি। সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীতে চলে নগ্ন দলীয় করন। দেশ ক্রমশ গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে এক-নায়কতন্ত্রে রুপান্তরিত হতে থাকে। গণতন্ত্র ও উন্নয়নকামী জনতা সেই দুঃশসান থেকে মুক্তির জন্য ক্ষোভে ফেটে পরে। আওয়ামী লীগ সেই গণআন্দোলনকেও কালিমা লেপনের জন্য স্বভাবসিদ্ধভাবে প্রচার মাধ্যমে মিথ্যাচার ও বিরোধী দলের কুৎসা রটনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু তাদের কোনো দুরভিসন্ধিই শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়নি, জাগ্রত জনতা ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপিকে স্বত:স্ফুর্ত ভাবে পুনরায় নির্বাচিত করে।

২০০১ সালে বিএনপি নিরংকুশভাবে বিজয়ী হয় এবং আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গঠিত হয় জনগণের সরকার। কিন্তু আওয়ামী লীগ এদেশের সাধারণ মানুষ ও ভিন্নমতকে কখনোই সম্মান ও মর্যাদা দেয়নি। তারা কখনই দলীয় এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে সকলের কথা ভাবতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সাধারণ জনগণকে নিজেদের পক্ষের শক্তি মনে না করে শত্রুপক্ষের মতো মনে করতে থাকে। ফলশ্রুতিতে তারা জনগণের সম্মতি ছাড়া বাকা পথে ক্ষমতা দখলের হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সর্বোতভাবে আত্মনিয়োগ করতে শুরু করে। তারা গণতান্ত্রিক ধারার বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীকে উষ্কানী দিয়ে ২০০৭ সালে ১/১১ এর মত অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় বসায়। তারা স্বভাব সুলভ কুটিলতার মাধ্যমে জনগণকে পাশ কাটিয়ে এবং নানা ভাবে প্রভাবিত করে ১/১১ এর অবৈধ সরকারকে দিয়ে প্রহসনের ভোট গ্রহণের নামে ২০০৯ সালে ইচ্ছামত সংসদীয় আসন বণ্ঠনের নীল নকশা বাস্তবায়ন করে।

২০০৯ সালে নিরংকুশ ক্ষমতা গ্রহণের পরে আট-ঘাট বেঁধে আওয়ামী লীগ পুনরায় তাদের চির চাওয়া বিরোধী দল শূন্য রাজনীতি চর্চার পথ অনুসরণ করতে শুরু করে। আবার শুরু হয় শেয়ার মার্কেট, ব্যাংক, বিদ্যুৎসহ সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজি, টপটেররদের দৌরাত্ম, অপহরন, গুম এবং খুন। প্রশাসন, আইন শৃংখলা বাহিনী, পাবলিক সার্ভিস কমিশন ও অন্যান্য সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে নির্লজ্জ দলীয়করন অতীতের সকল মাত্রাকে অতিক্রম করে। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ জনগণের সকল প্রতিষ্ঠানে দলীয়করনের মাধ্যমে দলীয় অনুসারীদের অনৈতিকভাবে পদোন্নতি ও পদায়ন পূর্বক চরম ক্ষত সৃষ্টি করেছে। ফলশ্রুতিতে বিডিআর বিদ্রোহের মত কলংকজনক ঘটনার প্রকৃত কারন অনুদঘাটিত থেকে যায়। এ ঘটনায় সামরিক বাহিনীর ৫৭ জন চৌকষ অফিসার প্রাণ হারায় এবং তাদের পরিবারবর্গ নির্যাতনের শিকার হন। পুরনো অভ্যাস মতো তারা সকল কিছুর জন্যে সমস্বরে বিরোধী পক্ষকে দোষারোপ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার শেষ অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো।

তারপর ৫’ জানুয়ারি ২০১৪ সালের ভোটার বিহীন একদলীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের কুকর্মের প্রদর্শন করে। আইন শৃংখলা বাহিনী, প্রশাসন ও দলীয় লোকদের যৌথ প্রচেষ্টায় মঞ্চস্থ হয় ইতিহাসের ঘৃণিত ভোট জালিয়াতি আর কারসাজির নির্বাচন। জনগণের ভোটের অধিকার পুর্নবার লুন্ঠিত হয়। স্বাধিনতা প্রিয় জনগণ হয়ে পরে আওয়ামী দুঃশাসনের অধীন। স্বাধীন জীবন, মুক্ত চিন্তা হয়ে পড়ে শৃংখলিত। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনচেতা জনগণ এই দমনপীড়ন ও জবরদখল মেনে নিতে পারছিল না। জনগণ ক্ষোভে ফুঁসে উঠে, তারা স্ব-শাসন ও মুক্তির প্রতীক ‘‘গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার” ফিরে পেতে চাচ্ছিলো। চাচ্ছিল একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।

অংশগ্রহণমুলক নির্বাচনই কেবলমাত্র জনগণের ক্ষমতাকে সংরক্ষণ ও উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে পারে। তাই সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে সমগ্র দেশবাসীর সমর্থন ছিল। ৮৫% এর অধিক জনগণ ছাত্র-জনতার এই গণআন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেয়। এই গণআন্দোলনকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে সরকারি দল ও আইন শৃংখলা বাহিনীকে তাদের অনুগত ব্যক্তি দ্বারা বিভিন্ন নাশকতা ও নির্বিচারে আন্দোলনকারীদের মারা শুরু করে দেয়।

আইন শৃংখলা বাহিনীকে দলীয় বাহিনীর মতো অপকর্মের জন্য ‘মৌখিক ইনডেমনিটি’ দেওয়া হয়েছিল। জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছিল। দলীয় কর্মী ও অনুগত আইন শৃংখলা বাহিনীর যোগসাজশে বাংলাদেশ ছিল গুমের নরকরাজ্য। দলীয়কর্মী ও গুন্ডাবাহিনী দিয়ে প্রকাশ্যে ও গোপনে বিরোধী মতাদর্শের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষকে অপহরণ, গুপ্তহত্যা এবং আইন শৃংখলা বাহিনী দিয়ে ক্রসফায়ারের মত পৈশাচিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছিল। এবং দেশবাসী প্রত্যাক্ষ করছে আওয়ামী লীগ কিভাবে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে মিথ্যাচার করে যাচ্ছিল। তাদের নিয়োজিত একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবি অসত্য কথা অবলিলায় কিভাবে বলে চলছিল। মানুষ বিরক্ত হচ্ছে জেনেও লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে বারবার অসত্য তথ্য শুনতে জনগণকে বাধ্য করছিল। তাদের এই দ্বৈতসত্তা আজ সবার সামনে উন্মুক্ত। যেকারণে চলমান ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার জন্য ইতোমধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থন অর্জন করে। গণঅতভূথ্যানে আওয়ামী দু:শাসনের হাত থেকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার আন্দোলন ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথ তৈরির লড়াই সফল হয়।

তবে মূলধারার আদর্শ অনুসরণ করায় বিএনপি ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় বিএনপিকে দমন অথবা নির্মুল করার কোনো অপচেষ্টাই সফল হয়নি।

কে/সিআর/২৪

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
© 𝐰𝐰𝐰.𝐤𝐚𝐚𝐥𝐧𝐞𝐭𝐫𝐨.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট