➖
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি
এই যে প্রচন্ড দুপুরের তপ্ত রোদে দাড়িয়ে আন্দোলনরত মলিন মূখখানা দেখছেন, সেটা দেখেও আপনাদের বোধশক্তির উদয় হোক; যেখানে দু মুঠো ডাল ভাত খাওয়াটা অনিশ্চিত সেখানে পড়শোনা করাতো বিলাসিতা।!
সেই ব্রিটিশ সাল থেকে আজ অবধি যে সরকারই ক্ষমতায় এসেছে তারা কোনোদিন চা শ্রমিকদের জীবন মানের উন্নয়ন নিয়ে গভীরভাবে, গুরুত্বের সাথে, সুচিন্তিতভাবে এবং বাস্তবিক দিক থেকে যুক্তিসংগত ভাবে ভাবেনি, কোনোদিন ভাববে বলে মনেও হয় না! সবাই মালিক পক্ষের হয়ে কথা বলে, সবাই মালিকের অর্থাৎ চা কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের সাথে কোনো না কোনো স্বার্থে জড়িত।
চা শ্রমিকদের দূঃখ দুর্দশা নিয়ে কেউ কথা বলে না, সবাই সুখটা দেখে সুখের পিছনে তার দূঃখ, কষ্ট, বেদনা, নির্যাতন ও নিপীড়ন আছে তা আর দেখে না, কেন দেখে না? কেননা দুঃখ দেখলে তো আর তাদের স্বার্থ হাসিল হবে না।
উল্লেখ্য, ২০ সপ্তাহ ধরে বেতন, রেশন বন্ধ সিলেটের কালাগুল, বুরজান, ছড়া-গাং বুরজান চা খারখানা সহ ৪ টি চা বাগানে।বেতন ভাতা মজুরীর অভাবে অনেক কষ্টে দিনানিপাত করছে তারা, না খেয়ে থাকতে হচ্ছে, অনেকে বাগানের বাইরে অল্প মজুরীতে কাজ করে সংসার চালাচ্ছে।
বাংলাদেশ চা শিল্প ধ্বংস করছে মালিক পক্ষের সিন্ডিকেটরা। অবিলম্বে তাদের লিজ বাতিল করে অন্য কাউকে দেওয়া হোক।
৫ মাস ধরে কাজ করে চা শ্রমিকরা মজুরি পায় না। কেন পাই না? আধুনিক যুগে এসেও এমনটা হয়! ভাবা যায়? কেন বেতন পাই না? কেন বেতন পাবে না? তার সঠিক কারণ দেখানো হোক? যখন চা কোম্পানির মালিকরা লাভ করে তখন তো কখনও সেই লাভের কথা শ্রমিকদের বলেনা, লাভের বিন্দু মাত্র অংশও চা শ্রমিকদের দেই না, তবে এখন কেন লসের (ক্ষতির) কথা বলে বেতন দেওয়া হবে না, তার সঠিক তদন্ত করে সেই বাগান মালিকদের বিরোদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
গতকালের মিছিলে সেনাবাহিনীর একজন সদস্য এই শ্রমিকদের অপমান করেছে। সেনাবাহিনীর সাথে শ্রমিক নেতাদের আলোচনা করার এক পর্যায়ে একজন সেনাবাহিনীর সদস্য তাচ্ছিল্যের সুরে বলেছে, আপনারা (চা শ্রমিকদের উদ্দেশ্য করে) দাপ্তরিক কার্যক্রম এর মানে বুঝেন? এমন প্রশ্ন আমাদের এটা ইঙ্গিত দেই যে, দেশের নিরাপত্তা বাহিনীরা ( সেনাবাহিনীরা) চা শ্রমিকদের কতটা ক্ষুদ্র মন -মানসিকতার চোখে দেখে, তারা যদি এমন করে চিন্তা করে থাকে তাহলে আরো যে দেশের অন্যান্য সুনাগরিকগন আছে তারা কেমন আর কিভাবে এবং কোন দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা ভাবনা করে বুঝতেই পারছেন?
এমন যদি হয় দেশের অবস্থা তাহলে শান্তি আর ন্যায্য অধিকার আশা করা এবং বৈষম্য দুর করা বিলাসিতা বলে মনে করা হবে? তবুও আমরা চা শ্রমিকরা আর দেশের সকল সুনাগরিক-গন সেনাবাহিনীর উপর একটা আলাদা ভরসা করি, তারা গতকালকে যে ভরসা আর আশার কথা বলেছে, পরবর্তীতে যে সিদ্ধান্ত দিবে, আশা করি তা যেন চা -শ্রমিক-বান্ধব হয়।
সবশেষে একটা প্রশ্ন থেকেই যায় মনের মধ্যে আর সেটা হলো— এটাই কি বৈষম্য হীন বাংলাদেশ? নাকি এটাই সংস্কার? নাকি এটাই লাল স্বাধীনতা যেখানে ৫ মাস কাজ করার পরেও চা শ্রমিকরা বেতন পায়না?
দ.ক.সিআর.২৫