➖
আসাদ ঠাকুর◾
একমাত্র মানুষকেই বেঁচে থাকার জন্য অন্য সব প্রাণ-প্রজাতির ওপর নির্ভর করতে হয়।
অথচ মানুষ বন্যপ্রাণীর প্রতি অনেক বেশি নির্মম, উপমহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশেই এই নির্মমতা বেশি! কোথাও আমরা বন্যপ্রাণী দেখলে সেটাকে হত্যা করতে বহু মানুষ জড়ো হই৷ সেটিকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের আগ্রহ অনেক কম৷
মানুষ ভোগবিলাস আর বেহিসাবি জীবনের জন্য লুণ্ঠন আর বৈষম্য চাঙ্গা রেখেছে। নিষ্ঠুরভাবে প্রতিদিন খুন করছে বন্যপ্রাণী, দূষিত করছে বাস্তুতন্ত্র। অথচ এই গ্রহে মানুষই একমাত্র প্রজাতি বেঁচে থাকার জন্য যাকে সব প্রাণ-প্রজাতির ওপর নির্ভর করতে হয়। শ্বাস নেওয়া থেকে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, বিনোদন, চিকিৎসা সবকিছুই চলে প্রাণী আর উদ্ভিদ আছে বলে। কিন্তু মানুষ প্রকৃতির এই অবদান মনে রাখে না। প্রতিনিয়ত বিশ্বাসঘাতকতা করে বন্যপ্রাণীর সঙ্গে। দখল ও ছিনতাই করে বন্যপ্রাণীর আবাস, খাদ্য, পরিবার। কিন্তু এসব প্রকৃতি সহ্য করে না।
বাস্তুতন্ত্রের এই ব্যাকরণ থেকে একমাত্র মানুষই কোনো শিক্ষা গ্রহণ করেনি। তাই ভোগান্তি আর যন্ত্রণা মানুষের সমাজেই বেশি। প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য প্রজাতি হিসেবে লড়াই একটা মৌমাছিও করে, মানুষও করে। কিন্তু মৌমাছি নিজের খাবার ফলানোর নামে মানুষকে বিষ দিয়ে হত্যা করে না। মানুষ ছাড়া মৌমাছি বাঁচতে পারবে। কিন্তু কোনো নির্ভরতা ছাড়া মানুষ বাঁচবে না। মৌমাছি না থাকলে পরাগায়ন ও উদ্ভিদের বংশবিস্তার রুদ্ধ হবে, হাতি না থাকলে খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়বে। কিন্তু মানুষ ছাড়া পৃথিবী হয়তো টিকবে বহুকাল। তাহলে মানুষ এমন প্রকৃতিবিরুদ্ধ আচরণ করছে কেন? কেন নির্বিচারে বিনাশ করছে জীবজগত? কারণ মানুষ নিজেকে ‘ক্ষমতাধর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। অন্যকে ‘দুর্বল’ আর নিজেকে ‘সবল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার অন্যায় রাজনীতি জিইয়ে রাখে। নিষ্ঠুরভাবে প্রশ্নহীন আঘাত চাঙ্গা রেখে ‘যোগ্যতমের টিকে থাকার’ বানোয়াট মিথ্যাচার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। প্রকৃতিতে কেউ এভাবে টিকে থাকার যোগ্যতা অর্জন করে না।
তাই জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য নিয়মিত প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে— বন্যপ্রাণী পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখে।
দ.ক.সিআর.২৫