1. live@kaalnetro.com : Bertemu : কালনেত্র
  2. info@www.kaalnetro.com : দৈনিক কালনেত্র :
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন

নবী সূর্যের উদয়পূর্ব আরব বিশ্বের দৃশ্যপট

দৈনিক কালনেত্র
  • প্রকাশিত: সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৪৩ বার পড়া হয়েছে

মোঃ এহতেশামুল হক ক্বাসিমী◾

অন্ধকার যুগ। আঁধার বসুন্ধরা। বালুকাময় জনমানবহীন মরূদ্যান। কারো জানা ছিলোনা, ইয়ারব ইবনে কাহতানের দেশে একজন পয়গাম্বর আসবেন। আরবের পানিবিহীন মরুপ্রান্তরে একজন খোদায়ী দূতের আগমন ঘটবে! বালুকাময় স্থানে মানব বসতি স্থাপনের ভিত্তি প্রস্তর হবে। কারো ধারণা ছিলো না, একজন পয়গাম্বরের ঔরশ থেকে জন্ম নেবে ‘জুরহাম’ নামী আরবের সর্ব প্রথম গোত্র। কেউ ভাবতেও পারেনি, এই জুরহাম নামী সম্ভ্রান্ত গোত্রকে সূত্র ধরেই আঁধার বিশ্বে এমন এক মহামানবের আবির্ভাব হবে, যিনি হবেন অশান্ত জাহানের মহান ত্রাণকর্তা। যার দিকে অপলক নেত্রে সমগ্র বিশ্ব তাকিয়ে থাকবে চিরকাল।

জাতির পিতা ইব্রাহীম আ. বিবি হাজেরাকে নিয়ে আগমন করলেন পর্বতঘেরা আরবের রৌদ্রময় এলাকায়। সাথে ছিলেন আদরের দুলাল ইসমাঈল যাবীহুল্লাহ। শুরু হলো আরব ভূখন্ডের যাত্রাপথ। জাতির পিতার কল্যাণেই স্থাপিত হলো মানব বসতির প্রথম প্রস্তর। এখান থেকেই আরবের জুরহাম গোত্রের সূত্রপাত। ইসমাঈল আ. ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠলেন। পরিণত বয়সে পৌছা মাত্রই জুরহাম গোত্রের এক সম্ভ্রান্ত নারীর সাথে শুভ পরিণয় স্থাপন করলেন। বিাবহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। সুগম হয়ে উঠলো অনাগত শ্রেষ্ঠ মানবের আগমনের পথ। দু’টি গোত্রের মাধ্যমে শুরু হলো আরবের বসবাস। জুরহাম গোত্রের বসতি ছিলো মক্কায়। আর আমালেকা গোত্রের বস্তি ছিলো মক্কা অদূরে পাশ্ববর্তী এলকায়। হযরত ইসমাঈল আ. জীবনের শেষ পর্যন্ত মক্কায় অবস্থান করেন। তার ঔরশ থেকে বারজন ছেলে জন্ম লাভ করে। এই ১২জন থেকেই সমগ্র মক্কা নগর মানব সন্তানে ছেয়ে যায়। এক সময় মক্কার মত আরবের এই ছোট বস্তিটি আদম সন্তানের আবাসন দিতে অক্ষম হয়ে উঠে। ফলে ধীরে ধীরে সমগ্র আরব জাহানে ছড়িয়ে পড়েন যাবীহুল্লাহর বংশধর। হযরত ইসমাঈল আ. এর বংশধর থেকে ‘আদনান’ নামী আরবের এক প্রাণ পুরুষের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তাঁর থেকেই বনী ইসমাঈলের বিভিন্ন শাখা প্রশাখা জন্ম লাভ করে। আদনানের পৌত্র ‘নাযারের’ ছেলে ছিলেন চরজন। তাদের থেকেই আরবের বনী আদনান সম্প্রদায়গুলোর বিকাশ ঘটে। এই চার জনের মধ্যে মুযার ও রাবীয়া ছিলেন তৎকালীন আরবের অনেক খ্যাতিমান। মুযার সম্প্রদায়ের ‘কেনানাহ’ নামী শাখা থেকে জন্ম লাভ করেন বিশ্ব শ্রেষ্ঠ সম্প্রদায়ের প্রথম পুরুষ ফিহির ইবনে মালিক। যিনি কুরাইশ নামে সমগ্র আরবে ছিলেন পরিচিত। তার ঔরশের সপ্তম পুরুষ হলেন আবদে মনাফ। এই আবদে মনাফের ছিলেন চারজন ছেলে সন্তান। তারা হলেন : আবদে শামস, নওফেল, মুত্তালিব এবং হাশিম। হাশিমের ছেলে আরবের বাদশাহ আব্দুল মুত্তালিবের ঔরশ থেকে জন্ম নেন নিখিল বিশ্বের রাজাধিরাজ রাসূলে আরবীর পিতা আব্দুল্লাাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব যাবীহুল্লাহ।

 

আরবের আবহাওয়া◾

ভূমন্ডলের উচ্চস্থানে আরবের অবস্থান। সারি সারি বালি আর পাহাড় পর্বতে বেষ্টিত প্রায় সমগ্র আরব জাহান। চারেিদকে দিগন্তহীন মরু বিয়াবান। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অনাবাদি জমি। সমুদ্র উপকুলের কিছু কিছু এলাকায় আছে সবুজের সমারোহ। সাগর তীরে সশ্য শ্যামল ও সজীবতা থাকলেও আরবের মধ্যমাঞ্চলে রয়েছে পানির চরম অভাব। অপ্রতুল পানির দরুন মানব বসতির দুর্ভোগ যেনো চিরস্থায়ী। একদিকে সূর্যের প্রচন্ড তাপ। অপর দিকে পানির চরম অভাব। তাই পিপাসিত আত্মার ছিলো প্রবল আর্তনাদ। সূর্যের প্রতাপে মরুভূমির জাহাজ খ্যাত উঠগুলোও করে থাকে ছটফট। চরম অস্থিরতা তাদের মাঝেও পরিলক্ষিত হয়। এহেন পরিবেশেই উঠের দুধ আর খেজুর খেয়ে আরবের জীবন সংগ্রাম।

 

সামাজিক রীতি নীতি◾

তদানিন্তন সময়ে আরবের জনগণ ছিলো বিভিন্ন গোত্র ও সম্প্রদায়ে বিভক্ত। এই বিভক্তির মাঝেও ছিলো তাদের পরস্পর রক্তিম সম্পর্ক। আবাসনের ভিন্নতায় ছিলো সাম্প্রদায়িক বিভাজন। সংখ্যা গরষ্ঠিতার ছিলো পরম সম্মান। মানব সম্পদে যে গোত্রের সীমানা ছিলো অসীম, সেই গোত্র আপন কর্মে ছিলো চরম স্বাধীন। যেচ্ছা তাই করার অধিকার ছিলো তার শতভাগ। একারণে প্রত্যেক সম্প্রদায়ই জনশক্তি বৃদ্ধির প্রতি ছিলো বেশ খেয়ালী। তারা এব্যাপারে দু’টি পন্থা অবলম্বন করে চলতো। প্রথমতঃ তাদের প্রত্যেকে একাধিক বিয়ের পাশাপাশি অগণিত দাস দাসীও রাখতো। দাসীদের সাথে স্ত্রীদের মত সম্পর্ক গড়ে তুলতো। ফলে স্ত্রী ও দাসীদের উদর থেকে অসংখ্য সন্তান জন্ম লাভ করতো। এভাবেই তাদের জনশক্তি বৃদ্ধি পেতো। দ্বিতীয়তঃ সমপর্যায়ের দুই ব্যক্তি কিংবা সমান ক্ষমতার অধিকারী দুই গোত্র পরস্পর বন্ধুত্ব স্থাপন করে নিতো। প্রয়োজনের সময় তারা একে অন্যের সহযোগিতায় জান-মাল নিয়ে এগিয়ে আসতো। এছাড়া কবিকভা কোনো দুর্বল ব্যক্তি বা গোত্র নিজের থেকে উপরের ক্ষমতাধরদের সহযোগিতা পেয়ে শান্তি নিরাপত্তার সাথে জীবন চালানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতো।

 

সামাজিক জীবন ও অর্থনৈতিক রীতি◾

তখনকার আরবে ছিলো দুই ধরনের মানুষের বসবাস। একদল অধিবাসী ছিলো ধন দৌলত এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকে চরম বঞ্চিত। দারিদ্রসীমার একদম নিচুতলায় ছিলো তাদের বসবাস। ইতিহাসের পাতায় তারা বদ্ধু বা বেদুঈন বলে আখ্যায়িত। আরেক দল ছিলো শহরের কিংবা উপশহরের অধিবাসী। তাদেরকে তৎকালীন আরবের সভ্য বা ভদ্রজাতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তাদের প্রায় সবাই ছিলো ধনবান। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন পেশায় ছিলো জড়িত। তারা লাভ করেছিলো সুখ সাচ্ছন্দময় জীবনের যাবতীয় উপকরণ। বিলাস বহুল প্রশস্ত বাড়ী ঘর ছিলো তাদের আবাসন। পানাহার সামগ্রী ছিলো মান সম্মত। তাদের খাবারের তালিকায় থাকতো রুটি-গোশত, দুধ-ঘী এবং খেজুরসহ রকমারি ফলমুলের আম্বার। সূতি ও রেশমী কাপড় ছিলো তাদের পরিধেয় বস্ত্র। উঠ, গাধা, খচ্চর ও ঘোড়া ছিলো তাদের বাহন। দূর দূরান্তের সফরে এগুলো ব্যবহার করা হতো। মোট কথা, তাদের জীবন পথ ছিলো সুন্দর ও মসৃণ। অন্যদিকে বেদুঈনদের বসবাস ছিলো বালুকাময় মরু প্রান্তরে। মানবেতর জীবন ছিলো তাদের নিত্য সঙ্গী। ছিন্নমূল ও যাযাবরদের ন্যায় তারা চলাফেরা করতো। তাদের স্থায়ী কোনো ঘর বাড়ী ছিলোনা। ‘‘যেখানে রাইত সেখানেই কাইত ’’ এই ছিলো তাদের অবস্থা। তাদের জীবিকা নির্বাহের উপায় ছিলো উঠ, ভেঁড়া, ছাগল ইত্যাদির প্রতিপালন। উঠের দুধ খেয়ে খেয়ে তারা বেঁচে থাকতো কোনোরকম। জীব জন্তুর পশম দিয়ে তৈরি করতো ব্যবহৃত কম্বল ও পরিধেয় বস্ত্র। তাদের বাহন ছিলো শুধু মাত্র উঠ। দূর দূরান্তের যাতায়াতে এটাই ছিলো তাদের একমাত্র সম্বল। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভাজন থাকার পরেও আরবের এই দুই অধিবাসীদের মাঝে কিছু কিছু বিষয়ে ছিলো ঐক্যের সুর। যেমন, বংশীয় আত্মমর্যাদায় তাদের মাঝে কোনো ফারাক ছিলো না। রাজনৈতিক রীতিনীতও ছিলো প্রায় সমান। সবচে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো তাদের উভয়ের মাঝে আরবের সভ্যতা ও সংস্কৃতি ছিলো সমভাবে বিরাজমান। রুসম ও রেওয়াজ ছিলো এক ও অভিন্ন। আবেগ, বিবেক ও মানবিক বিশেষণগুলোতেও তারা ছিলো এক জাহাজের অভিযাত্রী।

 

মানবিক চরিত্র◾

ইতিহাস সাক্ষী, তখনকার আহলে আরব সেচ্চাচারিতায় ছিলো একদম নিমগ্ন। অন্যান্য জাতির উন্নতি ও সমৃদ্ধি থেকে তারা ছিলো বেমালূম-বেখবর। একারণে বহির্বিশ্বের সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাথে তারা আদৌ মিশতে পারে নি। কঠোর পরিশ্রম, দীর্ঘ বেকারত্ব এবং সেচ্ছাচারিতা তাদেরকে বিপথগামী করে তুলেছিলো। মারামারি, হানাহানি তাদের চিরায়িত অভ্যাসে রূপ নিয়েছিলো। কথাকাটাকাটি নিয়ে চলতো তুমূল ঝগড়া-বিবাদ। সামান্য বিষয় বা স্তুল বস্তু নিয়ে লেগে যেত প্রচন্ড লড়াই। চলতো যুগ যুগ ধরে। সমগ্র আরব তখন গোত্রে গোত্রে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলো। সব গোত্রই একে অন্যের প্রতি তাক করে বসে থাকতো। একজন আরকেজনকে মেরে ফেললে মৃতের গোত্র প্রতিশোধ নেওয়াকে ফরজ মনে করতো। বছরের পর বছর গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ বিগ্রহ লেগেই থাকতো। এতে হাজার হাজার মানুষের প্রাণনাশ ঘটতো। এসব যুদ্ধের মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে বাহাদুর জ্ঞান করতো। আত্মম্ভরিতা ও ধাম্ভিকতা প্রচারে আত্মনিয়োগ করতো। তীরান্দাযী, নেযাবাযী ও তরবারি চালনায় যার দক্ষতা বেশি হতো, সমাজে তার সম্মান ছিলো আকাশচুম্বী। যুদ্ধাস্ত্রকে তারা খুব বেশি গুরুত্ব ও সমীহ করতো। শয়নে স্বপনে সবসময় তাদের পাশে থাকতো তরবারি, তীর ও বল্লম। চেহারায় ফুটে উঠতো সবসময় যুদ্ধের ভাব।

 

চুরি ডাকাতি ও ছিনতাই◾

শহর কিংবা উপশহরের অধিবাসীগণ চুরি ডাকাতির মতো গর্হিত কাজে আদৌ জাড়িত ছিলোনা। শহরের বাইরে যারা বসবাস করতো, যাযাবরের ন্যায় মানবেতর জীবন ছিলো যাদের চির সঙ্গী তারাই চুরি ডাকাতি ও ছিনতাইয়ে লিপ্ত ছিলো। তাদের সংখ্যা শহরের অধিবাসীদের তুলনায় অনেক বেশি। লুটপাট ছিলো তাদের অভ্যাসের দাস। মুসাফিরদের মাল সামানা লুটে নিতো তারা। প্রতিবাদের দুঃসাহস কারো ছিলো না। কোনো আগস্তুক প্রতিবাদ বা প্রতিহতের পন্থা অবলম্বন করতে চাইলে তাকে মেরে ফেলা হতো। কাফেলা থেকে বিচ্ছিন্ন কাউকে পেলে প্রথমে তার সর্বস্ব লুট করা হতো। অতঃপর তাকে গোলাম হিসেবে বাজারে বিক্রি করে ফেলতো লোটেরা বাহিনী। রাস্তার ঝর্ণা ও জলাশয় গুলোকে ঘাস-পাতা দিয়ে ঢেকে ফেলতো ডাকাতের দল, যাতে মরুপ্রান্তরে আগন্তুক কাফেলা পানির পিপাসায় মারা যায় এবং মালামাল বিনা কষ্টে হাতে চলে আসে। ডাকাতিও ছিনতাইয়ের পাশাপাশি চুরির অভ্যাসও ছিলো তাদের খুব বেশি। সমাজে চুরি ডাকাতিকে যারা পেশা হিসেবে গ্রহণ করে নিতো তাদের শান শওকত ছিলো পাহাড়সম। সমাজের অবস্থা ছিলো সম্পূর্ণ তথৈবচ। আচরণ ছিলো একেবারে ধ্বংসাত্মক। মদপান, নাচগান, মাস্তানী, রাহযানী, সুদখোরী, ঘোসখোরী, উম্মত্ততা ও চরিত্রহীনতা সহ অর্থ লিপ্সা ছিলো তাদের সমাজের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তাদের নির্দয়তা ও নিষ্ঠুরতা আপন বোন ও কন্যাসন্তানকে জীবন্ত পূঁতে ফেলার পর্যায়ে গিয়ে উপনীত হয়েছিলো। জুয়ার বাজার ছিলো প্রচন্ড গরম। সমাজে রকমারি জুয়ার আসর বসতো। কোনো কোনো জুয়ারী প্রয়োজনে নিজের স্ত্রী-সন্তানকেও জুয়ায় বাজি ধরে ফেলতো। যিনা ও ব্যভিচারের বাজারও ছিলো সরগরম। তখন তো আর পর্দার বিধান ছিলোনা, তাই বিনা বাধায় যুবতি মেয়েরা পরুষের সামনে আসা যাওয়া করতো। যে যাকে পায় ধরে নিয়ে যৌন ক্ষুধা মিটাতে পারতো নির্দ্বিধায়। কাজের স্বল্পতা, অল্প ব্যস্ততা, স্বাধীন মনোভাব, কবিতা আবৃত্তি ও সেচ্ছাচারিতার পাশাপাশি সমাজের গরম আবহাওয়া তাদের যৌন শক্তিকে বেগবান করে তুলতো। ফলে তারা অনায়াসে যিনার দরিয়া প্রবাহিত করতে সক্ষম হয়ে উঠতো। তাদের যৌনতা সৎ মাকেও রেহাই দেয়নি। পিতার মৃত্যুর পর সৎ মাদেরকে দাস দাসীর মতো ব্যবহার করা হতো। মীরাস হিসেবে তাদের ভাগবাটোয়ারা চলতো। অবৈধ প্রেম-প্রীতি ও এশকবাজীর অধ্যায় থেকেও তারা পিছিয়ে ছিলোনা। কিছু কিছু গোত্রে প্রেমের বাজার ছিলো খুব সরগরম। এশকের উত্তাল সাগরে তারা ছিলো ভাসমান। অবৈধ প্রেম দিয়ে জয় করে নিয়েছিলো সমগ্র আরব জাহান। সমাজে তারা হয়ে উঠেছিল অনেক খ্যাতিমান।

 

ধর্মের দূরাবস্থা ও আক্বীদা বিশ্বাসের চিত্র◾

ইসলাম পূর্ব আরব বিশ্বে ধর্ম বিশ্বাসের ছিলো চরম দূরাবস্থা। কিছু কিছু গোত্র সৃষ্টিকর্তার অস্বীকার করতো। পুনুরুত্থান বিশ্বাস করতো না। পরকাল ও বিচার দিবসের অস্বীকার করতো অকপটে। বেশিরভাগ মানুষ ছিলো ভূতপুজারী। অগ্নিপূজাও চলতো অহরহ। নবী সূর্যের আগমনের চারশো বছর আগে খাযাআ গোত্রের সরদার আমর ইবনে লুহাই সর্বপ্রথম আরব বিশ্বে ভূতপূজার আমদানি করে। এর আগে শাম দেশ ছিল ভূত পূজার তীর্থস্থান। ইবনে লুহাই শাম দেশ থেকেই ভূতপূজা শিখে এসেছিল। সর্বপ্রথম এই ভূতপূজারীই ‘হুবাল’ নামী একটা মূর্তিকে খানায়ে কাবার ছাদে স্থাপন করলো। ইসাফ এবং নায়েলা নামী আরো দু’টি মূর্তি যমযম কুপের সন্নিকটে রেখে দিলো। অতঃপর মানুষকে এ মূর্তিগুলোর প্রতি আকৃষ্ট করা শুরু করলো। তার ডাকে সাড়া দিয়ে আরবের মানুষ মূর্তি পূজায় লেগে গেলো। একসময় এমনই আসলো, যে খানায়ে কাবাকে এক আল্লাহর ইবাদতের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল সেই পবিত্রস্থানে অপবিত্র ৩৬০টি দেবতার পূজা শুরু হলো। ভূত পূজা ছাড়াও তারা চন্দ্র্্র, সূর্য এবং তারকারাজীর পূজাও করতো তবে কেউ কেউ প্রাকৃতিক বিশ্বাসেও ছিলো বিশ্বাসী। কিছু মানুষ ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা সন্তান বলে অখ্যায়িত করতো। দেব দেবীকে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের উপায় জানতো। সে সময় গণকের ও ছিলো বেশ প্রভাব। তারা অদৃশ্য জ্ঞানের দাবী করতো। নেক ফালী ও বদফালী তথা শুভ ও অশুভ লক্ষণের প্রতিও মানুষের বিশ্বাস জন্ম নিয়েছিলো। যাদু বিদ্যা শিখার পাশাপাশি জিন্নাত ও শয়তানকে বস করতে দীর্ঘ সাধনায় তারা লেগে থাকতো।

 

আরবের কাতিপয় গুণাগুণ◾

আলোচিত মন্দ সভাবগুলো থাকার পাশাপাশি তাদের মাঝে বেশ কিছু ভাল গুণও ছিলো। দানশীলতা ও বীরত্ব গাঁথা ইতহিাস তাদের ঐতিহ্যের স্বর্ণালী অধ্যায়। ভয়ভীতি বলতে কিছুই ছিলোনা তাদের ভিতরে। অতিথিয়েতায় তাদের জুড়ি আজও নেই। ওয়াদা পালন ও চুক্তি বাস্তবায়নে তারা ছিলো বদ্ধপরিকর। স্বাধীন মনোভাব নিয়ে জীবন যাপন করতো। কর্ম ও সাধনায় ছিলো কঠুর পরিশ্রমী। তাদের কবিতা আবৃত্তিতে ছিলো সমগ্র দুনিয়ায় মাশহুর। মূর্খতাকে পিছনে ফেলে ভাষা সাহিত্যে তারা ছিলো পরম পারদর্শী। ভাষা সাহিত্যে তারা ছিলো সবযুগে অনুপম। তাদের আকর্ষণীয় একটা গুণ হলো যাকে তারা আশ্রয় দান করতো জানমাল কুরবান করে হলেও তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকতো হরদম। নিজেদেরকে ইব্রাহীমী ধর্মের দিকে নিসবত করতো। মোট কথা, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর আগমন পূর্বে আরবের অবস্থা এমনই ছিলো যার সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত ইতিমধ্যে তুলে ধরা হলো। এমন ভূখন্ডের জন্যই আল্লাহপাক বিশ্ব ত্রাণকর্তা নবী মুহাম্মদ সা.কে নির্বাচন করলেন। এ নির্বাচন ছিলো শতভাগ স্বার্থক। আঁধার বিশ্বকে আলোকময় করে তুলতে প্রয়োজন ছিলো একজন শ্রেষ্ঠ মানবের, দাঈ ইলাল্লাহর। আল্লাহপাক রাসূলে আরাবীর দ্বারা সেই প্রয়োজন পূরণ করলেন। মক্কা মুয়াযযামায় নবুওয়াতের সূর্য উদিত হলো। উদয়ান্তেই আপন দীপ শিখায় হিরন্ময় করে তুললো সমগ্র জাহান।

দ.ক.সীরাতুন্নবী সা: স্বারক

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© 𝐰𝐰𝐰.𝐤𝐚𝐚𝐥𝐧𝐞𝐭𝐫𝐨.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট