➖
জিএম তানভির◾
সেক্স ইন্ডাস্ট্রি অনেক বড় একটা ইন্ডাস্ট্রি। আমরা হয়তো গলিঘুপচির নিম্নশ্রেণির পতিতালয়ের বাইরে এর পরিসর চিন্তা করছি না কিন্তু যেসব দেশে এই ইন্ডাস্ট্রি আছে এটা কল্পনাতীত আকার ধারণ করেছে। ব্রথেল, পর্নোগ্রাফি, অনলাইন প্রস্টিটিউশন, ক্যামিং, ক্লাবিং, সেক্স-টয় সহ অ্যাডাল্ট এন্টারটেইনমেন্ট সম্পর্কীত শত শত সেক্সুয়াল সার্ভিস আর প্রোডাক্ট আছে এই ইন্ডাস্ট্রিতে। এই ইন্ডাস্ট্রি থেকে ‘বৈধ’ভাবেই অ্যামেরিকা ও ইউরোপিয়ান দেশের সরকারগুলো মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ট্যাক্স লাভ করে। আর যারা এই ইন্ডাস্ট্রি চালায় তাদের পকেট তো ভারি হয়ই।
সেকুলার সিস্টেমে ভালো-মন্দের বিবেক বলে কিছু থাকতে নেই। অর্থপ্রবাহের সম্ভাবনা আছে এমন যেকোনো কিছুকে সে এক্সপ্লয়েট করে পূজনীয় বানায়। এজন্য সে সেক্সকে ঘিরে বিরাট ইন্ডাস্ট্রি বানিয়ে ফেলেছে। একান্ত গোপন, ব্যক্তিগত, নৈতিক একটা বিষয়, যেটা মানুষের খুব জৈবিক চাহিদা — সেটাকে সে জঘন্যভাবে এক্সপ্লয়েট করেছে। এজন্য লজ্জা, গোপনীয়তা, লয়ালটি, সামাজিক দায়বদ্ধতা সবকিছুকে এক পাশে ঠেলে সেক্সকে বিক্রয়যোগ্য পণ্যে পরিণত করেছে। এটার জন্য আর্থিক, আত্মিক, মানসিক আর সামাজিক চড়া মূল্য দেয় বেশিরভাগ মানুষ আর পকেট ভারি করে এই সমাজের ‘দেবতারা’৷ এই প্রচণ্ড অমানবিক বিষয়টার স্বাভাবিকীকরণকে মেনে নিয়েছে প্রগতিশীল পুরোহিতরা।
মানুষের কাছে এই প্রোডাক্ট বিক্রি ও সহজলভ্য করার জন্য সেকুলারিজম আপনার কাছে প্রচার করে ‘মানবাধিকার’ আর ‘প্রগতি’। এই বিষ সরাসরি গিলে ফেললে নারীদেহের সর্বোচ্চ অপমানকে ‘শ্রম’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আর বাঁধে না, ‘ওনলিফ্যান্স’ এ সার্ভিস দেওয়া মেয়েটাকে মনে হয় ‘এমপাওয়ারড উম্যান’। অল্প ডোজে এই বিষ পান করলে চোখের সামনে আসা সকল অশ্লীলতা আর অপকর্মকে ‘অধিকার’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। এই বিষের জাস্ট গন্ধ নিলেও মনে হয় স্ত্রী আর মা হওয়া দুনিয়ার সবচাইতে বড় অকাজ।
এই বিষ মানুষকে দিয়ে মানুষের পূজা করায়। কিন্তু এই পূজাকে যেন মানুষ পূজা না ভেবে প্রগতি মনে করে, সেজন্য আপনার-আমার কিছু ‘সংস্কার’ প্রয়োজন। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিশ্বাস করতে হবে, ‘মানবিকতা’ মানে হোলো যৌনকর্মকে ‘শ্রম’ হিসেবে ‘মর্যাদা’ দেওয়া। (এক লাইনে অসংখ্য আয়রনি!)
কিন্তু বেইসলাইন রিয়েলিটি হচ্ছে আপনি এই ‘মানবিকতা’ চর্চা করলে বা এই কাজগুলোকে স্বীকৃতি বা মোরাল লেজিটিমেসি দিলে দেবতাদের ব্যবসা করতে সুবিধা হয়, ইন্ডাস্ট্রির আয়তন বাড়ে, ডিমান্ড-প্রোডাকশন-সাপ্লাই সবই তুঙ্গে উঠে। ক্রাইসিস হ্যান্ডেল না করে সেটাকে জিইয়ে রেখে ব্যবসা কিংবা ক্ষমতার চর্চা করা — এটা সেকুলার ব্যবস্থার কর্নারস্টোন।
আচ্ছা, কখনও কি এই প্রশ্ন আপনারা করেন না, যে পশ্চিমা সভ্যতা পুরো বিশ্বে সবচে বেশি মানুষ হত্যা করেছে, মানুষের মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত করেছে, মানুষের অধিকার সর্বোচ্চ মাত্রায় লঙ্ঘন করেছে, মানুষের ওপর অবর্ণনীয় দখলদারিত্ব চাপিয়েছে, সেই একই সভ্যতা, সেই একই লোকগুলো কেমন করে আপনার কাছে ‘মানবিকতা’, ‘মানবাধিকার’, ‘সাম্য’, ‘মর্যাদা’, ‘স্বাধীনতা’ শেখানোর জন্য একটা কল্যাণকামী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় কোনো ধান্ধাবাজির নিয়ত ছাড়া? মানে ঠিক কখন তারা তওবা করে ভালো মানুষ আর সভ্যতার পথপ্রদর্শক হয়ে উঠলো আর ওদের থেকেই ভালো-সভ্য মানুষ হওয়া শিখতে হবে?
আমরা এসব প্রস্তাবনা স্রেফ এই কারণে প্রত্যাখ্যান করি না কারণ এগুলো অমুক-তমুক ইসলামী আইনের বিরুদ্ধে যায়। বরং আমরা পশ্চিমাদের পুরো ফাউন্ডেশনাল ফ্রেইমওয়ার্কটাকেই প্রত্যাখ্যান করি। প্রগতি, মানবাধিকার, উন্নয়ন, মর্যাদা বলতে ওরা যা বোঝায় সেসবের কোনোটার সাথে একমত নই। এই উপলব্ধি থেকেই মুক্তির শুরু।
দ.ক.সিআর.২৫