➖
রাসেল চৌধুরী, হবিগঞ্জ
ভারত থেকে নেমে আসা সুতাং নদী একসময় হবিগঞ্জ ও সংলগ্ন বিস্তৃর্ণ এলাকার কৃষিকাজের সেচ, যোগাযোগ, মৃত্তিকা শিল্প ও দৈনন্দিন কাজে অপরিহার্য থাকলেও শিল্পের বর্জ্যে এখন এই স্রোতস্বিনীর প্রাণ যায় যায়।
কৃষকরা অভিযোগ করছেন, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার অলিপুরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা কল-কারখানার দূষিত বর্জ্যে নদীটি এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, এর পানি সেচকাজে ব্যবহার করলে ধান গাছও মরে যায়।
কালো কুচকুচে জলের এই নদীতে মাছ, জলজ প্রাণী বা উদ্ভিদের বেঁচে থাকা তো দূরের কথা; পরিবেশ দূষণের কারণে নদীর আশপাশে মানুষের বসবাস করাও এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও জলজসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের একটি দলের গবেষণায় এ নদীর জলে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিকও পাওয়া গেছে।
নদীটির অববাহিকা অঞ্চলের নদ-নদীর মাছ ও ফসলেও এই মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করবে। যেহেতু নদীটি হাওরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত, ফলে সেখানকার বোরো ধানও নিরাপদ না- এমনটা মনে করছেন গবেষকরা।
গবেষণা প্রকল্পের প্রধান এবং হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও জলজসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো. শাকির আহম্মেদ বলছিলেন, “আমরা এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়েছি যে, পানি ও মাছের নমুনায় মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে। বর্তমানে ভারী ধাতুর উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য আরও পরীক্ষা চলছে।”
বাংলাদেশ নদী কমিশনের ১২০৬ নম্বরে রয়েছে সুতাং। বাংলাদেশ ও ভারতের এই আন্তঃসীমান্ত নদীর দৈর্ঘ্য ৮১ কিলোমিটার। হবিগঞ্জ সদর, লাখাই, শায়েস্তাগঞ্জ ও চুনারুঘাট উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এ নদী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ নদীর দৈর্ঘ্য ৮১ কিলোমিটার হলেও এর অববাহিকা প্রায় ৪০০ কিলোমিটারের। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে আসা নদীটি লাখাই উপজেলার কালনী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
সারাবছর পানি থাকায় হাওর অঞ্চলের এই নদী এক সময় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে খনন না হওয়া এবং অলিপুরে অপরিকল্পিতভাবে ইন্ড্রাস্টিয়াল পার্ক গড়ে উঠায় শিল্প বর্জ্যে নদীর রূপ পাল্টাতে থাকে।
নদী তীরবর্তী করাব, ছড়িপুর, উচাইল, রাজিউড়া, সাধুরবাজার, মির্জাপুর, ঘোড়াইল চর, রহিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীর পানি কালো কুচকুচে হয়ে আছে। পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নদীর দূষিত পানিতে মরে আছে জলজপ্রাণী।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, অলিপুরের ৩০ থেকে ৩৫টি কল-কারখানার দূষিত বর্জ্য সরাসরি সুতাং নদীতে ফেলা হচ্ছে। অধিকাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নেই প্রয়োজনীয় বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি)। যেসব কোম্পানিতে ইটিপি রয়েছে সেগুলো অতিরিক্ত খরচের ভয়ে নিয়মিত চালানো হচ্ছে না। এগুলো বন্ধ রেখে কারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সুতাং নদীতে।
ফলে নদী তীরবর্তী বুল্লা, করাব, লুকড়া, নূরপুর, রাজিউড়াসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রামে মানবিক বিপর্যয়কর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
দ.ক.সিআর.২৫