➖
আসাদ ঠাকুর, অমনিবাস
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য (Rema Kalenga Reserved Forest) বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক বনাঞ্চল হিসাবে খ্যাত। ১৯৮২ সালে প্রায় ১৭৯৫ হেক্টর আয়তনের এ বনভূমি রেমা কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। বনবিভাগের কালেঙ্গা রেঞ্জের অন্তর্ভুক্ত রেমা, কালেঙ্গা ও ছনবাড়ীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যের পরিধি বিস্তৃত।
জাতীয় উদ্যান সাতছড়ির ন্যায় কালেঙ্গা অভয়ারণ্যের বনের ভিতরে পর্যটদের যাওয়ার জন্য টিকেট কেটে নিতে হয়। টিকেট মূল্য ৩০ টাকা। অবশ্য হবিগঞ্জের অন্য দর্শনীয় স্থানগুলোতে টিকিট করার নিয়ম চালু হয়নি।
প্রায় ১৬ হাজার একরজুড়ে অবস্থিত রেমা-কালেঙ্গার বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য মূলত তরফ পাহাড় সংরক্ষিত বনভূমির অংশ, যা দেশের অবশিষ্ট পার্বত্য বনভূমির মধ্যে সর্ববৃহৎ। অভয়ারণ্যটি চুনারুঘাট উপজেলার অন্তর্গত গাজীপুর ও রানীগাঁও ইউনিয়নে অবস্থিত এবং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বরাবর বিস্তৃত। অপেক্ষাকৃত দুর্গম স্থানে অবস্থিত বলে এই সমৃদ্ধ মিশ্র চিরহরিৎ বনটি এখনো টিকে রয়েছে।
অভয়ারণ্যটির আশেপাশে রয়েছে ৩টি চা-বাগান, ৩৭ প্রজাতির স্তণ্যপায়ী, ১৬৭ প্রজাতির পাখি, ৭ প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ত্রিপুরা, সাঁওতাল ও উড়ংরা এই বনভূমির আশেপাশে এবং অভ্যন্তরে বসবাস করছে।
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে ৩০ মিনিট, ১ ঘন্টা ও ৩ ঘন্টার তিনটি ট্রেইল রয়েছে। একনজরে বনের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আছে একটি সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। আর পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ঘিরে রয়েছে একটি মনোরম লেক। আছে ত্রিপুরা, সাঁওতাল, তেলেগু ও উড়ং সম্প্রদায়ের আদিবাসীদের পাড়া। এছাড়া বনের বিজিবি ক্যাম্পের কাছে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ নায়েক আব্দুল মান্নান বীরউত্তমের সমাধি রয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এই স্থানে এই বীর যোদ্ধা শাহাদাৎ লাভ করেন। সমাধির পাশে সেগুন গাছে এখনও গুলির চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়।
রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে আছে বিরল প্রজাতির বড় কাঠবিড়ালী, কুলু, রেসাস ও লজ্জাবতী বানর, মায়া হরিণ, মুখপোড়া হনুমান, উল্লুক, চশমা হনুমান, মেছোবাঘ, গন্ধগোকুল, বন্যশুকর, সজারু, বেজি ও নানা প্রজাতির সাপ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মধ্যে হিল ময়না, মথুরা, ভীমরাজ, লাল মাথা কুচকুচি, টিয়া, সিপাহি বুলবুল, চিল, বসন্তবৌরি, শকুন, বনমোরগ, বন্যশুকর, পেঁচা, ঈগল ও মাছরাঙ্গা অন্যতম।
কিভাবে যাবেন—
বাংলাদেশের যেকোন প্রান্ত থেকে বাস বা ট্রেনে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ আসতে হবে। শায়েস্তাগঞ্জ হতে চুনারুঘাট মধ্যবাজার পৌঁছে সেখান থেকে সরাসরি ৭০ টাকা সিএনজি ভাড়ায় কালেঙ্গা বাজার নেমে ১০-১৫ মিনিট হাঁটলেই রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য মেইন গেট পৌঁছে যাবেন। এছাড়া ঢাকা হতে বাস বা ট্রেনে শ্রীমঙ্গল নেমে সেখান থেকে জিপ নিয়ে রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে আসতে পারবেন। শ্রীমঙ্গল থেকে কালেঙ্গা যাওয়ার পথটি বেশ সুন্দর।
কোথায় থাকবেন—
কালেঙ্গায় থাকার জন্য বনবিভাগের একটি ডাকবাংলো আছে, যেখানে থাকতে হলে জেলা প্রশাসক বা সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া বেসরকারী তিনটি রিসোর্ট আছে সিএমসি রিসোর্ট (01719-470988), রেমা-কালেঙ্গা ইকো রিসোর্ট ও নিসর্গ তরফ হিল ইকো রিসোর্ট (01731-977807)।
এছাড়া হবিগঞ্জ থাকতে চাইলে হোটেল সোনারতরী, হোটেল আমাদ কিংবা বাহুবল উপজেলায় অবস্থিত ৫ তারকা দ্যা প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টে থাকতে পারবেন।
দ.ক.সিআর.২৫