স্টাফ রিপোর্টার: হবিগঞ্জের সীমান্তবর্তী উপজেলা চুনারুঘাট। ভারত সীমান্তঘেঁষা এই অঞ্চলের অনেক পথ মাদক পাচারের জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে বহুদিন ধরে। নানা কৌশলে সীমান্ত পার করে গাঁজা ঢুকিয়ে তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। পাচারকাজে এখন পুরুষের পাশাপাশি সুন্দরী তরুণী, শিশু ও কিশোরদেরও ব্যবহার করছে মাদককারবারিরা। এমন এক ঘটনায় এবার হাতেনাতে ধরা পড়েছে চাচাতো শালী ও দুলাভাই।
পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বিকেলে এসআই রিপটন পুরকায়স্থের নেতৃত্বে একদল পুলিশ চুনারুঘাট-শায়েস্তাগঞ্জ সড়কের জাজিউরা এলাকায় একটি চেকপোস্ট বসান। সেখানে শায়েস্তাগঞ্জগামী একটি সিএনজিকে থামিয়ে তল্লাশি চালানো হলে যাত্রীবেশে থাকা এক তরুণ ও তরুণীর ব্যাগে পাওয়া যায় ৩ কেজি গাঁজা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক দুইজন নিজেদের পরিচয় দেন চাচাতো শালী-দুলাভাই হিসেবে। তাদের নাম করিমুল হক (৩২) ও মোছাঃ জুই আক্তার (১৯)।
করিমুল ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল পৌরসভার ভান্ডারা গ্রামের বাবুল সরকারের ছেলে। জুই নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার সাইফুল ইসলামের মেয়ে। বর্তমানে তারা গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার সালনা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন। পুলিশ জানায়, ধৃতরা এর আগেও একাধিকবার গাঁজা বহনে জড়িত ছিল। তারা কখনো স্বামী-স্ত্রী, কখনো ভাই-বোন, আবার কখনো আত্মীয় পরিচয়ে সিএনজি বা বাসে ভ্রমণ করে মাদক পরিবহন করত। তারা সাধারণত চুনারুঘাটের ভারত সীমান্ত এলাকা থেকে গাঁজা সংগ্রহ করে দেশের ভেতরে সরবরাহ করত।
চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুর আলম বলেন, “তারা অত্যন্ত কৌশলে একাধিক পরিচয় দিয়ে মাদক বহন করত। নারীদের ব্যবহার করে সন্দেহ এড়িয়ে যাওয়াই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। এই চক্রের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে শুক্রবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আমরা তদন্তের মাধ্যমে তাদের পেছনের নেটওয়ার্ক খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মুহিতুর রহমান বলেন, চুনারুঘাটের সাতছড়ি সড়কের চন্ডি, গুইবিল, আমরোড ও চাকলা ভারত সীমান্তবর্তী দীর্ঘদিন ধরে গাঁজাসহ নানা মাদকের প্রবেশপথ হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয়দের মতে, সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত অনেক সময় ‘চোরাপথে’ সীমান্ত পেরিয়ে আসে মাদক। নানা কৌশলে তা ভেতরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ চক্র। স্থানীয় গরিব মানুষ থেকে শুরু করে বাইরের জেলা থেকে আসা অপরাধীরাও যুক্ত হচ্ছে এই চক্রে। বিশেষ করে সুন্দরী তরুণী, শিক্ষার্থী বা কিশোর-কিশোরীদের ব্যবহার করা হচ্ছে পাচার কাজে। সাধারণ যাত্রীবেশে চলাচলের কারণে তাদের সন্দেহ কম হয়। এমনকি কিশোরদের দিয়ে কখনো স্কুলব্যাগ বা ছোট প্যাকেটে গাঁজা পরিবহন করানো হয়। তবে পুলিশ বলছে, নিয়মিত অভিযানে ভাঙছে চক্র “আমরা নিয়মিত টহল, চেকপোস্ট ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালাচ্ছি। বেশ কয়েকটি চক্র ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তবে তারা বারবার কৌশল পাল্টে আবার সক্রিয় হয়। তাই জনসচেতনতা, গোয়েন্দা নজরদারি ও সীমান্তে কঠোর তদারকি জরুরি।
দ.ক.সিআর.২৫