অনলাইন ডেক্স◾ সদ্য গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার কৃতি সন্তান। যিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের সাথে বলিষ্ঠ কন্ঠে আওয়াজ তুলেছিলেন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পেশায় একজন আইনজীবি ও পরিবেশকর্মী।
তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের “পরিবেশ পুরস্কার” প্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব। এমনকি প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ ও “হিরোজ অফ এনভায়রনমেন্ট” খেতাব প্রাপ্ত তিনি। এছাড়াও ২০১২ সালে রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার, ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার পান তিনি।
সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এরআগে তিনি ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও হলিক্রস কলেজের ছাত্রী ছিলেন। এলএলএম সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশের বাইরে বেশ কয়েকটি ফেলোশিপ কোর্স সম্পন্ন করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আইজেনহাওয়ার ফেলোশিপও করেন তিনি।
শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৯৩ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)-তে। বর্তমানে তিনি বেলা’র প্রধান নির্বাহি।
১৯৯৭ সালে বেলা’র সংগঠক ও প্রধান জনাব মহিউদ্দিন ফারুক মৃত্যুবরণ করলে রিজওয়ানা ‘কমনওয়েলথ বৃত্তি’র সুযোগ হাতছাড়া করে বেলা’র প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নেন। বেলা’র হাত ধরেই লড়ে চলেন পরিবেশের ক্ষতিসাধনকারী নানা চক্র আর ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। ১৯৯৪ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা অন্যায়ভাবে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে প্রচার কাজ চালাচ্ছিলেন। বেলা’র মাধ্যমে জনস্বার্থে আদালতে মামলা করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তৈরি করলেন একটি মাইলফলক। আদালত এই কাজকে জনস্বার্থের বিপরীত বলে রায় দেয়।এরপর থেকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ এজাতীয় কাজ বন্ধে উদ্যোগ নেয়। এরপর তিনি জাহাজ ভাঙা শিল্পের মাধ্যমে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনা ব্যবসায়ীদের বিপক্ষে লড়াই শুরু করেন। তিনি বেলা’র মাধ্যমে জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডগুলোর বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করেন, এই শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশের নিরাপত্তাহীনতা, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তাহীনতা, এ শিল্প থেকে যথেচ্চ বর্জ্য নিঃসরণ ইত্যাদি কারণে মামলা দায়ের করেছওলেন। এরপর শ্রমিকদের অধিকার আদায়, বিষাক্ত পণ্যবাহী জাহাজ বাংলাদেশে প্রবেশ বন্ধে করেছেন আরো তিনটি মামলা। ২০০৩ সালেই আদালতের রায়ে ‘পরিবেশগত ছাড়পত্র’ ছাড়া জাহাজ ভাঙার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। এছাড়াও জলাশয় ভরাট করে আবাসন তৈরি, পলিথিনের যথেচ্চ ব্যবহার, পাহাড় কাটা, বন ধ্বংস, চিংডির ঘের, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে যেখানেই পরিবেশের ক্ষতি সাধিত হচ্ছে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানেই তিনি এবং তার নেতৃত্বে বেলা, পরিবেশ রক্ষায় আইনিভাবে এগিয়ে এসেছে। তিনি বেলার প্রধান নির্বাহী হওয়া ছাড়াও ফেডারেশন অফ এনজিওস ইন বাংলাদেশ এর সহ-সভাপতি, আরডিআরএস এর সভাপতি, এসোসিয়েশন অফ ল্যান্ড রিফর্মস এন্ড ডেভলপমেন্ট-এর একজন সদস্য।
বেসরকারি এসব কাজ ছাড়াও তিনি সরকার কর্তৃক গঠিত বিভিন্ন কমিটির সদস্য। এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিকভাবে ফ্রেন্ডস অফ আর্থ ইন্টারন্যাশনাল-এর নির্বাহী সদস্য; এনভায়রনমেন্টাল ল’ এলায়েন্স ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এবং এনভায়রনমেন্টাল ল’ কমিশন অফ দ্যা আইইউসিএন-এর সদস্য।
এছাড়া তিনি দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করছেন সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অফ এনভায়রনমেন্টাল এক্টিভিস্ট এ।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান চুনারুঘাট উপজেলার অহংকার ও দেশের গর্ব। আমরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করি।
কেসিআর/২৪