নিজস্ব প্রতিবেদকঃ হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেওরগাছ ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামে গৃহবধূ সাহিদা বেগমের (৩০) বসতবাড়িতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে প্রতিপক্ষরা। এ ঘটনায় পরিবারের একাধিক সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন এবং লুণ্ঠিত হয়েছে স্বর্ণালঙ্কার, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রসহ মূল্যবান গৃহস্থালি সামগ্রী। হামলার পর গর্ভবতী সাহিদা বেগম অসুস্থ সন্তান প্রসব করলেও নবজাতকটি জন্মের দুই দিন পর মারা যায়।
বিরোধের জেরে হামলা
অভিযোগে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের রাস্তা নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধ চলছিল সাহিদা বেগমের। এরই জের ধরে গত ১৫ জুন বিকেল ৩টার দিকে বিবাদীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তার বাড়িতে হামলা চালায়।
বিবাদীরা হলেন— মোঃ ইছাক মিয়া (৫০), দিলারা খাতুন (৪০), মোঃ জাবেদ মিয়া (২৫), রিমা আক্তার (১৮), সুরুজ আলী (৪০), তাজুল ইসলাম (৩৫), আফছর আলী (৪২), শোয়েব মিয়া (২৪), শাজাহান মিয়া (৩২) ও হারুন মিয়া (৩০)। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে— “অত্যন্ত খারাপ, উগ্র, উশৃঙ্খল, সন্ত্রাসী ও ডাকাত প্রকৃতির লোক।”
গর্ভবতী নারীকে নির্দয় মারধর
অভিযোগে বলা হয়, হামলাকারীরা প্রথমেই বাড়ির গেইট ভেঙে প্রবেশ করে। এ সময় ইছাক মিয়া সাহিদা বেগমের তলপেটে লাথি মারেন। তখন তিনি নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। মাটিতে পড়ে গিয়ে কোনো রকমে দাঁড়ালে জাবেদ মিয়া লাঠি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করলে তিনি গুরুতর রক্তাক্ত জখম হন।
পরিবারের ওপর নৃশংস হামলা
সাহিদার পিতা চেরাগ আলী মেয়ে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে ইছাক মিয়া ধারালো কান্তে দিয়ে তার মাথায় কোপ দেন। এতে বড় ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং চারটি সেলাই দিতে হয়। জাবেদ মিয়া তার গলায় ছুরি ধরে হত্যার চেষ্টা করে। অন্যদিকে হারুন মিয়া ভেউ দিয়ে কোমরে আঘাত করে গুরুতর জখম করেন।
এ সময় বোন সুমি আক্তার এগিয়ে এলে ইছাক মিয়ার কান্তের আঘাতে তার হাত গুরুতর জখম হয় এবং তিনটি সেলাই দিতে হয়। পাশাপাশি দিলারা খাতুন ও রিমা আক্তার লাঠি দিয়ে সুমিকে মারধর করে মারাত্মক জখম করে। বাদীর মা আয়েশা বেগম এবং ভাই জুয়েল মিয়াও হামলাকারীদের আঘাতে আহত হন।
লুটপাট ও ভাঙচুর
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, হামলাকারীরা ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে আলমারি ও সোকেচ ভেঙে বিদেশফেরত সুমি আক্তারের দেড় ভরি স্বর্ণালঙ্কার (মূল্য প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা) এবং সাহিদা বেগমের ১ ভরি ১০ আনা স্বর্ণালঙ্কার (মূল্য প্রায় ২ লাখ টাকা) লুট করে।
এছাড়া ওয়ারড্রব থেকে জমির দলিল, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে যায়। ঘরের টিভি, ফ্রিজ, আসবাবপত্র, টিউবওয়েলসহ প্রায় সবকিছু ভাঙচুর করে আরও প্রায় ২ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করে।
পুলিশের হস্তক্ষেপ ও সেনাবাহিনীর পরিদর্শন
পরিবার জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করলে চুনারুঘাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করে। পরে শাহজীবাজার সেনানিবাসের সদস্যরাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং মামলা করার পরামর্শ দেন। সেনাসদস্যরা লুণ্ঠিত মালামাল ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিলেও বিবাদীরা তা ফেরত দেয়নি। বরং তারা বাদীপক্ষকে নানা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে এবং মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
নবজাতকের মৃত্যুতে মর্মান্তিক পরিণতি
গর্ভে আঘাতপ্রাপ্ত সাহিদা বেগম পরবর্তীতে সন্তান প্রসব করেন। কিন্তু নবজাতক জন্মের দুই দিন পর মারা যায়। সন্তান হারিয়ে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
তিনি বলেন, “আমি সন্তান হারিয়েছি, এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ন্যায় বিচারই একমাত্র ভরসা।”
সাক্ষীরা কী বলছেন
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিরা— তাজল ডাক্তার, সফিক মিয়া, দুলাল মিয়া, বর্তমান চেয়ারম্যান রুমন ফরাজী, মেম্বার মোঃ রহমান ও আলেয়া মেম্বার— সবাই আদালতে ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন।
আইনি পদক্ষেপের দাবি
বাদী সাহিদা বেগম লিখিত অভিযোগে প্রশাসনের কাছে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা এবং লুণ্ঠিত মালামাল ফেরতের জোর দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, এ ধরনের নৃশংস ঘটনা গ্রামে অশান্তি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, যাতে দোষীরা দ্রুত গ্রেপ্তার হয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়।
দ.ক.সিআর.২৫