বিশেষ প্রতিবেদক: শিক্ষকদের দীর্ঘ দিনের যৌক্তিক দাবি ও পরামর্শের ভিত্তিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রদত্ত নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রশ্ন প্রণয়নের কাজ করছেন চুনারুঘাট উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা। নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করার কথা স্কুল/ক্লাস্টার ভিত্তিক। এর তত্ত্বাবধানে থাকার কথা সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। বিগত দিনগুলোতে এভাবেই হয়ে আসছিল। কিন্তু এ বছর চুনারুঘাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা নীতিমালার তোয়াক্কা না করে নিজে প্রশ্ন প্রণয়ন করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
শিক্ষকগণ নীতিমালার আলোকে কাজ করার কথা বললেও তিনি তা আমলে নেননি। নিজ ক্ষমতা বলে তিনি প্রশ্ন প্রণয়ন করতে খরচ করেছেন বিগত যেকোনো সময়ের চাইতে দ্বিগুণ । গত বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ক্লাস্টারের প্রধান শিক্ষকগণকে ফোন করে বলেন, সকল প্রধান শিক্ষকগণ যেনো আগামী রবিবার (১৭ আগস্ট) চুনারুঘাট উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে দ্বিতীয় প্রান্তিক পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র সংগ্রহ করেন। এবং ১ম ও ২য় শ্রেণির জন্য ৮টাকা ও ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির জন্য ১৫টাকা হারে চাহিদা অনুযায়ী প্রশ্ন পত্রের মূল্য পরিশোধ করেন।
বিষয়টি সকল প্রধান শিক্ষকদের জানা হলে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। যেখানে স্থানীয় ভাবে (হবিগঞ্জ জেলার ভিতরে) দুমাস আগেও প্রশ্ন পত্র প্রণয়নে সর্বোচ্চ খরচ হয় ১ম ও ২য় শ্রেণির জন্য ৫টাকা এবং ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির জন্য ৮টাকা হারে সেখানে ঢাকা থেকে ছাপানো হলে আরও কম খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে দ্বিগুণ বেড়ে গেল কিভাবে? কাগজ কিংবা কালি কোনোটার দামও বাড়েনি। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকগণ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে চাইলে সুযোগ দেওয়া হয়নি।
রবিবার (১৭ আগস্ট) সকালে উপজেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জড়ো হন। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা তাদেরকে ৮টাকা ও ১৫টাকা হারে প্রশ্ন পত্র সংগ্রহ করতে বললে তারা তাতে আপত্তি জানান। শিক্ষকদের বক্তব্য মতে, যতটা পারা যায় কম খরচে মান সম্মত ক্রয় এবং কাজ করাণোর আদেশ রয়েছে তাদের প্রতি। কোনো কারণ ছাড়াই প্রশ্ন পত্র ব্যয় খরচ দ্বিগুণ দেখানো হলে এর কৈফিয়ত তাদের উপর বর্তাবে। এরই মাঝে ঘটনা স্থলে কয়েকজন সংবাদ কর্মী পৌঁছান। শিক্ষকদের কাছে দীর্ঘ সময়ের আলোচনার বিষয় জানতে চাইলে তারা বিস্তারিত খুলে বলেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিকরা চুনারুঘাট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিলেট বিভাগের সব জায়গাতেই প্রশ্ন পত্র প্রণয়নের খরচ ৮টাকা ও ১৫টাকা হারে। শিক্ষকদের আপত্তির কারণে তিনি ৫টাকা ও ৮টাকা হারেই প্রশ্ন পত্র দিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু অন্যান্য উপজেলায় ৮টাকা ও ১৫টাকা হারেই নেওয়া হচ্ছে । হবিগঞ্জ জেলার ভিতরে প্রশ্ন পত্র প্রণয়নে করলে ফাঁস হয়ে যেতে পারে। তাই তিনি ঢাকা থেকে প্রণয়ন করেছেন। তবে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার একাধিক প্রধান শিক্ষককে ফোন করলে তারা বলেন, তারা ১ম ও ২য় শ্রেণির জন্য ৫/ টাকা হারে ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণির জন্য ৮ টাকা হারে দিতে ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার বলেছেন।প্রশ্ন পত্র প্রণয়নের খরচের হিসাব জানতে চাইলে নাজনীন সুলতানা বলেন, এখনো বিল পরিশোধ করা হয়নি।
শিক্ষক গণ আরও বলেন, নাজনীন সুলতানা চুনারুঘাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগদানের পর থেকেই নিয়মিত গড় হাজির থাকেন। সপ্তাহে গড়ে ২দিন অফিস করেন। কোনো কোনো সময় পুরো সপ্তাহেই অনুপস্থিত থাকেন। তিনি বিদ্যালয়ের স্লিপের বরাদ্দকৃত টাকার চেকে স্বাক্ষর নিতে ৫/১০ হাজার টাকা ঘুষ নেন (এটিইওদের মাধ্যমে) বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পরিদর্শন করে সিএনজি ভাড়ার কথা বলে টাকা নিয়ে থাকেন। শিক্ষকদের চাকুরী স্থায়ী করণের জন্য জনপ্রতি মোটা অংকের টাকা নিয়েও দীর্ঘ দিন পার হয়েছে অথচ এখনও স্থায়ীকরণের ২/১টি ফাইল উনার কাছেই পরে রয়েছে। শিক্ষকদের উচ্চতর গ্রেডের কাজ করতেও মোটা অংকের টাকা উৎকোচ দাবী করেন। এতে শিক্ষকরা ওনার চাহিদামতো বেশী টাকা দিতে না পারায় ফাইল আটকে রাখা হয় । উনার অনেক অনিয়ম সম্পর্কে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, হবিগঞ্জও অবহিত আছেন।
দ.ক.সিআর.২৫