তানভীর আহমদ রাহী, কালনেত্র
২১ মে আন্তর্জাতিক চা দিবস। এ দিনে বিশ্বব্যাপী উদ্যাপন করা হয় চায়ের জনপ্রিয়তা, ঐতিহ্য এবং এর পেছনের মানুষের অবদানকে সম্মান জানানোর লক্ষ্যে। কিন্তু আমরা যখন প্রিয় এক কাপ চায়ের ধোঁয়া ওঠা স্বাদে হারিয়ে যাই, তখন কি একবারও ভাবি—এই পাতাগুলো আমাদের টেবিল পর্যন্ত পৌঁছাতে কতটা কঠিন বাস্তবতার ভেতর দিয়ে এসেছে? বাংলাদেশের চা শিল্পে কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিক প্রতিদিন সূর্যোদয়ের অনেক আগে ঘুম থেকে উঠে নামেন বাগানে। সারাদিনের কঠোর পরিশ্রম শেষে তারা পান মাত্র ১৭০ টাকা। এই অল্প অর্থ দিয়ে কি একজন মানুষ নিজের এবং পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে পারেন? যখন দেশের অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষের গড় মজুরি দৈনিক ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, তখন চা শ্রমিকদের এই বৈষম্যমূলক মজুরি আমাদের বিবেককে প্রশ্ন করে না?
চা বাগানগুলোতে শ্রমিকদের অধিকাংশই প্রজন্মান্তরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু জীবনমানের উন্নয়ন তাদের ছুঁয়ে যায় না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন সবখানেই রয়েছে অবহেলা আর অবজ্ঞা। অথচ এই শ্রমিকদের ঘামে ভিজেই দেশের অর্থনীতিতে এক খাত সমৃদ্ধ হচ্ছে, বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে লাখ লাখ কেজি চা।
চা দিবস মানে শুধু উৎসব নয়, এটি হোক প্রতিবাদ ও দাবি জানানোর দিন। চা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা হোক, বছরে বছরে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের আয় বৃদ্ধি করা হোক। তাদের জন্য আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হোক এটাই হোক আজকের অঙ্গীকার। এক কাপ চা আমাদের যতটা তৃপ্তি দেয়, তার অন্তরালে যে মানুষগুলো দিনভর ঘাম ঝরায়, তাদের মুখেও যেন একদিন তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে—এই হোক আন্তর্জাতিক চা দিবসের মূল বার্তা।