➖
কালনেত্র ডেস্ক
সম্প্রতি যে তথাকথিত “নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের” রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, তা নিয়ে দেশে উত্তেজনা তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ এই রিপোর্টে এমন বহু প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা শুধু ইসলামী মূল্যবোধের পরিপন্থীই নয়, বরং এ দেশের ধর্মীয় ও সামাজিক বাস্তবতাকেও অগ্রাহ্য করে রচিত।
প্রথমত, নারীকে তার ন্যায্য অধিকার প্রদান নয়, বরং ‘পুরুষের প্রতিপক্ষ’ হিসেবে দাঁড় করিয়ে সামাজিক ভারসাম্য বিনষ্ট করার যে চক্রান্ত এই রিপোর্টে পরোক্ষভাবে করা হয়েছে, সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ইসলামে নারী-পুরুষের সম্পর্ক পরিপূরকতার, প্রতিযোগিতার নয়। ইসলামী শরিয়ত নারীকে যে মর্যাদা ও নিরাপত্তা দিয়েছে, তা কোনো রাষ্ট্রীয় কমিশন দ্বারা বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়, বরং তা বিকৃত করা হয় যখন এই মর্যাদাকে ‘পাশ্চাত্য সাম্যের’ মানদণ্ডে মাপা হয়।
দ্বিতীয়ত, এই কমিশনের রিপোর্টে এমন সব সুপারিশ রয়েছে যেগুলোর বাস্তবায়ন মানে পারিবারিক কাঠামোর ধ্বংস—যেমন, উত্তরাধিকার সংক্রান্ত শরিয়তভিত্তিক আইন পরিবর্তনের ইঙ্গিত, নারীর ‘ব্যক্তিস্বাধীনতা’র নামে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভিত দুর্বল করা, ইত্যাদি। এগুলো মূলত পাশ্চাত্য ফেমিনিস্ট চিন্তার প্রতিফলন, ইসলামী সমাজবোধের নয়।
হেফাজতে ইসলাম এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে কারণ তারা বিশ্বাস করে, বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এখানে আইন, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে ইসলামি ভাবনা থাকাটা যেমন যৌক্তিক, তেমনি অপরিহার্য। এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ যখন ইসলামবিরোধী কোনো নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে, তখন সেটিকে ‘মব মানসিকতা’ বলে অবমাননা করাটা শুধু অসংবেদনশীল নয়, বরং তা স্পষ্টভাবে ধর্মবিদ্বেষী মনোভাবের প্রকাশ।
হ্যাঁ, নারীর নিরাপত্তা দরকার, মর্যাদা দরকার। ইসলামই প্রথম নারীর জীবনের প্রতিটি স্তরে পূর্ণ মর্যাদা দিয়েছে—মা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে, কন্যা হিসেবে, কর্মী হিসেবে। কিন্তু সেই মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পথ পাশ্চাত্য থেকে আমদানি করা নীতিতে নয়, বরং কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সমাজ গঠনে। কাজেই রাষ্ট্র যদি সত্যিই নারীর পক্ষে হতে চায়, তবে তাকে ইসলামি মূল্যবোধকে উপেক্ষা করে নয়, বরং সেই মূল্যবোধকে ভিত্তি করেই সংস্কার চালাতে হবে।
সুতরাং আমরা জোরালোভাবে বলি—এই কমিশনকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। এতে যেসব সুপারিশ ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক, সেগুলো অবশ্যই বাতিল করতে হবে। গণতন্ত্র মানে শক্তির খেলা নয়, বরং বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা। এখন নারীবাদীরা শক্তির খেলা দেখাচ্ছে। ইসলামি মূল্যবোধের বিরোধিতা করে যে সংস্কার হবে, তা কখনোই জনগণের কল্যাণ বয়ে আনবে না।
দ.ক.সিআর.২৫