➖
কামরুল উদ্দিন ইমন,বাহুবল প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিজেই রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন এ সংকটের কারণে উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হয়ে পড়েছে। নেই বিভিন্ন সেলাইন, ইনজেকশন ও প্রয়োজনীয় অনেক ঔষধ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুইটি এ্যম্বুলেন্স থাকলেও গত দুই সপ্তাহ যাবত যান্ত্রিকক্রুটি মেরামতের বরাদ্দ না থাকায় বন্ধ রয়েছে।
এ হাসপাতালে মোট ১১৩ পদের বিপরীতে বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন মাত্র ৬৫ জন। এখনো ৪টি পদ দীর্ঘদিন যাবৎ শূন্য রয়েছে। সহসাই এসব পদ পূরণের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না কর্তৃপক্ষ। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন শূন্য পদ পূরণে আমরা কয়েক দফায় ঊধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট চাহিদাপত্র দিয়েছি। সরকার জনবল নিয়োগ করলে এসব ভোগান্তি আর থাকবে না।
জানা যায়, ২০১৬ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। ৫০ শয্যায় উন্নীতের পর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১১৩ জন মোট জনবল অপরিহার্য হয়। কিন্তু বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এখনো ৪৩ জন জনবল ঘাটতি রয়েছে। এর মাঝে জনবল সংকটে রয়েছে ডাক্তার ৮ জন, ডেন্টাল সার্জন ১ জন, নার্স ৫ জন, মাঠকর্মী ১৭ জন, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৯ জন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ৩ জন। এ জনবল সংকটের কারণে বিদ্যমান কর্মরত জনবল দিয়ে আড়াই লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যষিত উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা পুরোপুরি দিতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ।
আউটডোর ও ইনডোরে উভয় ক্ষেত্রেই সেবাপ্রত্যাশী অসংখ্য নারী পুরুষ ও শিশুরা যথাযথ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আবাসিকে ভর্তিকৃত রোগীদের ক্ষেত্রেও বিষয় ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় অনেক রোগী প্রকৃত সেবা পাচ্ছে না। শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় খুব জটিল রোগীদেরকে প্রায় সময়ই রেফার করতে দেখা যায়। হাসপাতালে সিজার চালু হওয়ার এক মাস পর বন্ধ হয়ে পড়ে গাইনি ডাক্তার বদলী হওয়ার কারণে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এসব জনবল ঘাটতির হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতার অভাব ও পানি সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। এদিকে উপজেলার আব্দানারায় থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সুমি আক্তার জানান- নামেই হাসপাতাল, সঠিক চিকিৎসা পাওয়া যায় না, আগে যে ঔষধ হাসপাতালে পাইতাম এখন বাহির থেকে কিইন্না আনতে হয়। এভাবেই বিরূপ মন্তব্য করেন আগত সেবাপ্রত্যাশী সুমন মিয়া, ফারুক মিয়া ও দিলারা খাতুন সহ আরো অনেক।
এবিষয়ে আউটডোরে চিকিৎসা সেবা দেওয়া মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মিজানুর রহমান শাহিন বলেন, একটনা ৪৮ঘন্টা ডিউটি করতে হয়। হাসপাতালটি মহাসড়কের পাশে থাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় পার্শ্ববর্তী নবীগঞ্জ উপজেলার রোগীরা এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। তাছাড়া মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা হলে সকল রুগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে হয়। বর্তমানে দুজন ডাক্তার দিয়েই চলছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহেল মারুফ ফারুকী কালনেত্র কে জানান, জনবল সংকটে আছি। আমরা জনবল পূরণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট চাহিদাপত্র দিয়েছি। সীমিত জনবল দিয়েই আমরা চিকিৎসা সেবা দিতে সর্বাত্বক চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেন, এই হাসপাতালে দুইটি এ্যম্বুলেন্স একজন ড্রাইভার। বরাদ্দ আসলে মেরামত কাজ করাতে এক মাস সময় লাগতে পারে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. রত্নদ্বীপ বিশ্বাস এ প্রতিনিধিকে জানান, বাহুবল হাসপাতালটি মহাসড়কের পাশে হওয়ায় জেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি হাসপাতাল। দুইজন ডাক্তার দিয়েই চিকিৎসা সেবা চলাটা খুবই কঠিন। একজন ডাক্তার অর্ডার হয়েছে, অচিরেই যোগদান করবেন। আর আমি সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি জনবল সংকট সমাধানের জন্য। প্রতিটি হাসপাতালেরই জনবল পূরণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
দ.ক.সিআর.২৫