1. live@kaalnetro.com : Bertemu : কালনেত্র
  2. info@www.kaalnetro.com : দৈনিক কালনেত্র :
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০২:৪১ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
চুনারুঘাটে ডা: নুরুল ইসলাম স্মরণে পদক্ষেপ গণপাঠাগারের স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত চুনারুঘাটে পদক্ষেপ গণ পাঠাগারের উদ্যোগে মহান মে দিবস পালন মাধবপুরে মাদ্রাসা ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু মহান মে দিবস: শ্রমজীবী মানুষের অধিকার-দাবি আদায়ের দিন আমার দেশ এর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে শ্রীমঙ্গলে মানববন্ধন হবিগঞ্জের হাওরে ধানের বাম্পার ফলন দাম নিয়ে শংকিত কৃষক! সারা দেশে এলজিইডির কাজে দুদকের অভিযান- কালনেত্র ক্লিনটেক: পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির পথচলা ও ভবিষ্যৎ চুনারুঘাটে খাল খননে জনতার বাঁধা, পরিদর্শনে ইউএনও, তোপের মুখে ইউপি চেয়ারম্যান মাধবপুরে মরিচের বস্তায় মিলল গাঁজা, ২ কারবারি গ্রেপ্তার 

ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ মুলত আইনের প্রয়োগ না থাকা!

দৈনিক কালনেত্র
  • প্রকাশিত: রবিবার, ৯ মার্চ, ২০২৫
  • ৪৩ বার পড়া হয়েছে

আসাদ ঠাকুর, অমনিবাস 

 

বাংলাদেশে ধর্ষণের মাত্রা বেড়েছে। বছরটা শুরুই হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে কুর্মিটোলা হাসপাতালের পাশে ধর্ষণের মাধ্যমে! এই এলাকাটি কড়া নিরাপত্তা দিয়ে ঘেরা, সেনাবাহিনীর ঘাঁটি এবং আবাসিক এলাকা। তারপরও এক ট্যাক্সি ড্রাইভার এই কাজটি করতে পেরেছে।

 

ফিন্যান্স বাংলাদেশের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০ সালে শুধুমাত্র জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬০১ জন ধর্ষণের শিকার– নারী ও শিশু। শিশু মানে শুধু কন্যাশিশু না, ছেলে শিশুরাও।

 

দেশের শীর্ষ সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, যখন লকডাউন চলছিলো, তখন ৬৩২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, ১৪২টি ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়, ২৯জন ধর্ষণের ফলে মারা যান বা ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয় এবং ৫ জন আত্মহত্যা করেন। যা পুলিশ রিপোর্ট কিংবা নারী অধিকার সংস্থার মারফত পাওয়া। এর মধ্যে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র।

 

তবে- গ্রামাঞ্চলের দিকে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে দেওয়া হয়, অথবা ভিক্টিমের পরিবারকে টাকা দিয়ে মীমাংসা করা বা ভয়ভীতি দেখিয়ে কেস তুলে নেয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, পাহাড় থেকে সমতল, আধুনিক থেকে পর্দানশীন নারী, ২/৩ মাসের শিশু থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধা– কেউই পুরুষের হাত থেকে নিরাপদ নয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায়, বা নাম ব্যবহার করে অনেক অপরাধী পারও পেয়ে যায়।

বর্তমানে ধর্ষণের সংস্কৃতি মহামারীর মতো ছড়িয়ে গেছে সারা বাংলাদেশে। একের পর এক ঘটতে আছে ঘটনা। সিলেট এমসি কলেজের ছাত্র-হোস্টেলে স্বামীকে বেঁধে রেখে তার সামনে তার স্ত্রীকে গণধর্ষণ করে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে মারধর এবং যৌনাঙ্গ নির্যাতনের ভিডিও ৩২ দিন পরে ভাইরাল হলো। ভিডিওতে দেখা যায় নারীটি “বাবা বাবা” ডেকে করুণা ভিক্ষা চাইছে!

 

অভিযোগ আছে, এই নারীকে তার আগে গণধর্ষণও করা হয়। ৩২ দিন ধরে নারীটির পরিবারকে ভিডিও ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত অন্যতম আসামি দেলোয়ার স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিল। এছাড়া কয়দিন আগে সাভারের কিশোর গ্যাং দুই বান্ধবীকে ধর্ষণ করে এবং পুরো ব্যাপারটার ভিডিও তৈরি করে। সবচেয়ে ভয়ংকর ট্রেন্ড তৈরি হয়ে উঠেছে এই ভিডিও করে ছেড়ে দেয়া।

 

ধর্ষণ বা অত্যাচারের প্রমাণ রেখে দিতে কেউই আর ভয় পাচ্ছে না। ক্ষমতাধরদের ছত্রছায়ায় এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হবার কারণে ধর্ষকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আবার মাদ্রাসাগুলোতে ছেলে শিশুরা পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। আখেরাতের ভয় দেখিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ধর্ষণ মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবার কারণে সহজে কেউ মাদ্রাসার ধর্ষণ সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলতে চায় না। সরকার কিংবা ক্ষমতাসীন সরকারি দল এসব ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের নিজেদের দলের নয় বলে দাবী করলেও, বড় একটা অংশের ধর্ষক হয় সরাসরি সরকারি দলের রাজনীতির সাথে জড়িত, নয়তো কোন না কোনভাবে রক্ষাকবচ হিসেবে দলকে পাশে পেয়ে যায়!

ধর্ষণের ঘটনা মহামারীর মতো বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে মূলত আইনের প্রয়োগ না থাকা, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাব, ক্ষমতাসীন দলের আশ্রয় এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া অনেক সাধারণ মানুষ মনে করেন, এর জন্য দায়ী নারীর পোশাক কিংবা আধুনিক চালচলন। পর্নোগ্রাফি কিংবা নাটক সিনেমাকেও কেউ কেউ দায়ী করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক যৌন শিক্ষার অভাব, এবং সেইসাথে পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য ধর্ষণ বেড়ে যাচ্ছে।

 

একটার পর একটা ঘটনায় সাধারণ নারীরা এবং সচেতন নাগরিকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। দেশজুড়ে শুরু হয়েছে মিছিল সমাবেশ, গণ অবস্থান। প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে অনলাইন এবং অফলাইনে। ঘরেবাইরে কোথাও নারীরা নিরাপদ নয় ৷ এই অনিরাপত্তার দায় রাষ্ট্রকে নিতে হবেই।

 

প্রতিটি ধর্ষণের পরে নারীর চরিত্র কিংবা পোশাকের দিকে আঙুল না তুলে, দ্রুত বিচার চালুর দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে শুরু করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায়।

সরকার ঘোষণাও দিয়েছে, যে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে। কিন্তু এই আন্দোলন চলাকালীন সময়ে প্রতিবাদকারীদের উপর পুলিশের হামলা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

আবার প্রশ্নও উঠছে, শুধুমাত্র মৃত্যুদণ্ড দিলেই কি ধর্ষণ কমবে? নাকি ধর্ষণের পরে হত্যার পরিমাণ বেড়ে যাবে? সমাজের সমস্ত স্তরে নারীপুরুষদের মানসিকতায় আমূল পরিবর্তন না আনতে পারলে, সবকিছুতে ধর্মের দোহাই দিয়ে অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করে গেলে, যৌনতা নিয়ে ট্যাবু বা বিপরীত লিঙ্গ নিয়ে অশ্রদ্ধা বা অসম্মানজনক ভুল ধারণা কাটাতে না পারলে ধর্ষণ বাড়বে বই কমবে না।

নারীবাদীরা বলছেন, নারীকে মানুষ হিসেবে দেখা উচিত। তাকে মা-বোন ইত্যাদি বলে করুণার পাত্র বানিয়ে ধর্ষকের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা উচিত নয়। নির্দিষ্ট দল বা রাজনৈতিক এজেন্ডার ঊর্ধ্বে গিয়ে, এই আন্দোলন নারীবাদী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন, সাংস্কৃতিক জোট এবং সাধারণ মানুষরা মিলে করছেন – এতে আশা জাগে, পরিবর্তন আসবেই।

আসাদ ঠাকুর কবি ও সাংবাদিক
সম্পাদক দৈনিক কালনেত্র

দ.ক.সিআর.২৫

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© 𝐰𝐰𝐰.𝐤𝐚𝐚𝐥𝐧𝐞𝐭𝐫𝐨.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট