➖
একটি বকুল ফুল গাছের নি:শব্দে ঝরে যাওয়ার আত্মকাহিনী—
::
আমি বকুল ফুলের গাছ। আমি দীর্ঘদিন ফুলের সুবাস ছড়াই মানুষের জন্য, এতেই আমার জীবনের সার্থকতা।
আমি বীজ থেকে অংকুরিত হওয়ার পরপরই আদর করে নাম রাখা হয় বকুল। আমাকে বাড়ির পুকুরের উত্তর – পূর্ব কোনায় লাগানো হয়েছে।। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকি। একসময় যৌবনে উপনীত হলে আমার ফুলের সুবাসে আকুল হয়ে সবাই গলার মালা বানিয়ে নিজের কাছে রেখে দিতে চাইলো, কিন্তু আমি মুক্ত আকাশে বেড়ে উঠতে পছন্দ করি। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভালো লাগেনা। সবাইকে আনন্দ দেওয়াতেই আমার খুশি। তবে আমার ভালো লাগার বিষয়গুলো অনেকেই বুঝতে পারেনি। বুকের ভিতর চাপা পড়ে যায় কষ্ট, তবুও মানুষের উপকার করি স্রষ্টাকে খুশি করার জন্য। জানো পরম মমতায় যে আমার যত্ন নিতো সে আমাকে রেখে চলে যায়। আমার বুকের যন্ত্রনা কাউকে বুঝতে দেইনি। এরই মাঝে যার গর্ভে জন্ম আমার সেও আমাকে ফেলে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলো। এবার আমি আর কষ্টের বুঝা নিতে চাচ্ছিলাম না। স্রষ্টাকে বললাম, আমি আর গাছের ডগায় থাকতে চাই না। আমি দূর আকাশের তারা হতে চাই। আমাকে মাটিতে ঝরে পড়ার সুযোগ দেন, যার ভালো লাগে সে কুড়িয়ে নিবে। আমার কথা শুনেছো আল্লাহ, রাতের আঁধারে আমাকে তোমার কাছে ডেকে নিয়েছো। শান্তিতে বিশ্রাম নিয়েছি, আমি আমার জন্মদাতার পাশে!
লেখাটি কোন কাল্পনিক আত্মকথন নয়, এক আদরের ভাই বকুলের ঝরে পড়ার কাহিনি। সত্য কাহিনি, তার জীবনটা এমনই ছিলো। পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে সত্যিকারের বকুল ফুলের গাছটি। তার পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছে আমাদের আদরের রত্ন বকুল ভাই!
ভীষণ আদরের ভাই বকুল গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে অর্থাৎ শুক্রবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আমাদের ছেড়ে মহান রবের কাছে চলে গিয়েছে। মহান রাব্বুল আল আমিন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন, আমিন।
লেখক: জেবিন আক্তার
সহকারি অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ
এমসি কলেজ, সিলেট
দ.ক.সিআর.২৪