কালনেত্র ডেক্স▪️ পাবনা জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে রুপন্তী। তাদের আট সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন তার বাবা। তিনি পেশায় ছিলেন একজন কামার। বাবার সীমিত আয়ের কারণে সহজ ছিল না রুপন্তীর শিক্ষার্জনের যাত্রা। এলাকার খুবই সাধারণ একটি স্কুলে পড়তো সে, প্রাইভেট পড়ার সামর্থ্যও ছিল না তার। তবুও ক্লাস ৫- এর পিএসসি পরীক্ষায় তাদের স্কুল থেকে অংশগ্রহণ করা ৪০+ শিক্ষার্থীদের মধ্যে A+ পাওয়া ২ জন শিক্ষার্থীর একজন ছিল রুপন্তী।
বাসা থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০ মিনিট হেঁটে স্কুলে যেত রুপন্তী। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়, যেমন পরিস্থিতিই হোক না কেন, কোনদিনও স্কুল কামাই দিত না সে। জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায়ও A+ পায় রুপন্তী। পরবর্তীতে রাজশাহী কামরুজ্জামান সরকারি ডিগ্রি কলেজে ভর্তির সুযোগ পায় সে। কিন্ত সেখানে থাকা, খাওয়া, টিউশন, এতো খরচ বহন করা ওর বাবার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিলো না। তাই সেখান থেকে ছাড়পত্র নিয়ে এলাকার ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ এ ভর্তি হয় সে।
এসবের মাঝে শুরু হয় করোনা। তাদের পরিবারের উপর নেমে আসে কঠিন দুর্ভোগ। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে রুপন্তী। পরিবারের কঠিন সময়ে লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারছিল না সে। তখন তার পাশে দাঁড়ায় এক বড় ভাই, রুপন্তীকে বিনামূল্যে নিজের কোচিং সেন্টারে পড়ার সুযোগ করে দেন তিনি। কঠোর পরিশ্রমের যথাযথ ফল পায় সে। তার এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্টও আসে গোল্ডেন A +।
এরপর সে প্রস্তুতি নিতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য। আর্থিক সঙ্কটের কারণে কোন কোচিং করতে পারেনি রুপন্তী, নিজেই একা একা বাসায় পড়তে থাকে। অনলাইনের ফ্রি ক্লাস এবং প্রস্তুতি পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ করে সে। প্রথমবার কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়না রুপন্তী। এতে করে পাড়া-প্রতিবেশীদের নানান কটু কথা শুনতে হয় তার। কিন্তু হার মানে না তার মনোবল। দ্বিতীয় বার পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আরও বেশি পরিশ্রম করে সে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়।
ভর্তির পর থেকেই থাকা-খাওয়া, বইপত্র এবং আনুষঙ্গিক খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে রুপন্তী। কেননা এতো খরচ একা বহন করা তার বাবার উপর খুব চাপ হয়ে যাচ্ছিলো। তারপর সে ফেসবুক এর মাধ্যমে U-Go নিবেদিত JAAGO Women Scholarship এর ব্যাপারে জানতে পারে। সৌভাগ্যবশত সে স্কলারশিপটা পেয়ে যায়। জাগো এবং U-Go এর প্রতি কৃতজ্ঞ রুপন্তী। এই স্কলারশিপের কারণে এখন মাসিক খরচ নিয়ে সে অনেকটাই চিন্তামুক্ত। লেখাপড়া করে বাবা-মায়ের সব কষ্ট দূর করতে চায় সে। সকল কষ্টের প্রতিদান হিসেবে বাবা-মাকে সে যেন খুশি ও সুখ দিতে পারে এটাই তার প্রার্থনা।
রুপন্তী কর্মকার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
কে সিআর/২৪