1. live@kaalnetro.com : Bertemu : কালনেত্র
  2. info@www.kaalnetro.com : দৈনিক কালনেত্র :
মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৭ অপরাহ্ন

মাদক আতংক; তারুণ্যের ভবিষ্যৎ কোন পথে?

দৈনিক কালনেত্র
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

 

মহিবুর তালুকদার শিবলু: এখন সর্বজনবিদিত যে, অর্থলিপ্সু মানবরূপী হিংস্র দানবদের কদর্য অভিপ্রায়ে পুরো সমাজ যেন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। তরুণ সমাজের সৃজনশীল উচ্ছ্বাস–মননশীল প্রজ্ঞা ও মেধা ধূসর মেঘের আড়ালে ক্রমান্বয়ে মুখ লুকোচ্ছে। মূলতঃ এসবের মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে ঘৃণ্য মাদক বাণিজ্য।

মাদকের বেপরোয়া বিস্তার শুধু বাংলাদেশ নয়; সমগ্র বিশ্বকে গভীর অন্ধকারে নিপতিত করার কুৎসিত ভূমিকা পালন করছে। একদিকে বিজ্ঞান–তথ্যপ্রযুক্তি–আধুনিক শিক্ষার মোড়কে স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী–গবেষক উন্নয়ন অগ্রগতির ধারাকে প্রবল শাণিত করছে; অন্যদিকে সমাজের বৃহত্তর অংশ মাদকের বেড়াজালে মনুষ্যত্ব–মানবিকতার চরম বিপর্যয়ে সর্বনিকৃষ্ট অতিমারীর ভয়াবহ রূপ ধারণে সহায়তা করছে। পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ–তদারকি–আইনের প্রয়োগ–সমাজ ও পরিবারের উদাসীনতায় দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার–যোগ্য–মেধাবী–দক্ষ মানবসম্পদ উৎপাদন কোন পর্যায়ে সভ্যতাকে পথ দেখাচ্ছে তা নিবিড় বিশ্লেষণের দাবী রাখে। আগামী দিনের জাতিরাষ্ট্র পরিচালনা ও সুষ্ঠু–স্বাভাবিক–সাবলীল সমাজ পরিক্রমায় সুস্থ দেহ–মনের অধিকারী যথার্থ অর্থে সমাজ প্রকৌশলী হিসেবে গড়ে তোলতে ব্যর্থ হলে বিকৃত–অসংলগ্ন–অসংযত পরিবেশ সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণে দুর্ভেদ্য প্রাচীর নির্মাণ করবেই – নিঃসন্দেহে তা বলা যায়। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান–সরকারি–বেসরকারি সকল সংস্থা সর্বোপরি বিরাজমান পরিস্থিতি কঠোর নিয়ন্ত্রণে আনা না হলে মাদকের ভয়ংকর থাবা বিস্তৃত হওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনাকে কোনভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে এখন পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া মাদকের মধ্যে ৩২ ধরনের মাদকের সন্ধান পাওয়া যায়। এসব মাদকের মধ্যে রয়েছে ইয়াবা, ফেন্সিডিল, হেরোইন, গাঁজা, চোলাই–দেশি–বিদেশি মদ, দেশি–বিদেশি বিয়ার, রেক্টিফাইড স্পিরিট, ডিনেচার্ড স্পিরিট, তাড়ি, প্যাথেডিন, বুপ্রেনরফিন (টি.ডি জেসিক ইঞ্জেকশন), ভাং, কোডিন ট্যাবলেট, ফার্মেন্টেড ওয়াশ (জাওয়া), বুপ্রেনরফিন (বনোজেসিক ইঞ্জেকশন), মরফিন, আইচ পিল, ভায়াগ্রা, সানাগ্রা, টলুইন, পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট ও মিথাইল–ইথাইল কিটোন ইত্যাদি। কালক্রমে নতুন করে আবির্ভাব হয়েছে এলএসডি, ব্রাউনি, ক্রিস্টাল মেথ বা আইস, এমফিটামিন পাউডার, ডায়েমেখিল ট্রাইপ্টেমিন, এস্কাফ ও ম্যাজিক মাশরুমের মত ভয়ানক আরও বেশকিছু মাদক। উক্ত সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আইস একটি শক্তিশালী আসক্তি সৃষ্টিকারী মাদক। এতে আসক্ত ব্যক্তির ক্ষুধামান্দ্য ও প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়। অতিরিক্ত উত্তেজনা সৃষ্টি করে উচ্চ রক্তচাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে অনেকে সহিংস আচরণও করে থাকে।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, মোট মাদকাসক্তদের মধ্যে ৪৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেকার, ৬৫ দশমিক ১ শতাংশ আন্ডার গ্রাজুয়েট, ১৫ শতাংশ উচ্চ শিক্ষার্থী, ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ ব্যবসায়ী, ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ চাকরিজীবী, ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ ছাত্র এবং ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ শ্রমিক। সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্রটি হচ্ছে ইয়াবা গ্রহণকারী ৮৫ শতাংশই দেশের তরুণ যুবসমাজ। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্রানুসারে দেশে ইয়াবা আসক্তির সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে। দেশের তরুণ প্রজন্মের এক–চতুর্থাংশই কোনো না কোনো ধরনের নেশায় আসক্ত। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের প্রতি ১৭ জনে একজন তরুণ মাদকাসক্ত। ছিন্নমূল শিশু–কিশোররাও জুতা তৈরির গাম দিয়ে নিয়মিত নেশায় মত্ত রয়েছে। সম্প্রতিকালে ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে ভয়ংকর মাদক আইস সেবনকারীর সংখ্যাও। এছাড়া প্রায় ৫৭ শতাংশ মাদকাসক্ত যৌন অপরাধী, যাদের ৭ শতাংশ এইচআইভি ভাইরাসে সংক্রমিত। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মাদকাসক্তরা নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্তসহ মস্তিস্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বিজ্ঞজনদের দাবি, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্বে শিথিলতায় অসাধু মাদক কারবারীদের বেপরোয়া কর্মকান্ডে মাদক দেশে ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করেছে। দেশের প্রতিটি নগর–শহরের অলিগলিতে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। শহরের বাইরে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও মাদক এখন সহজলভ্য।

দেশের অর্থনীতিতেও মাদকের বিপুল প্রভাব পরিলক্ষিত। শুধু মাদকের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৫ হাজার ৮৪১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ পাচার হয়ে যায়। অবৈধ মাদক কারবারের মাধ্যমে অর্থপাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম এবং এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

সফল রাষ্ট্রের কাতারে উপনীত হতে হলে আমাদের এই তরুণ সমাজকে অবশ্যই মাদক থেকে মুক্ত রাখতে হবে। মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনের কারণে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

সার্বিক পর্যালোচনায় এটি সুস্পষ্ট যে, ধর্ষণ–হত্যা–ছিনতাই–রাহাজানিসহ বহুমাত্রিক অপরাধের মূলে রয়েছে এই মাদক। বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত মাদকবিরোধী অভিযানে ভয়াবহ এসব মাদকের চালান–বাহকেরা গ্রেপ্তার হলেও মূল হোতা ও মাদক কারবারির পৃষ্ঠপোষকরা হাতের নাগালের বাইরেই থেকে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে থামানো যাচ্ছে না মাদকের বিস্তার।

দেশের সচেতন–বিজ্ঞজনের দাবি, মাদক পাচার–সেবন বন্ধ করতে মাদকের চাহিদা কমানোর পাশাপাশি জোগানও হ্রাস করতে হবে। নিতে হবে মাদকের বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

বিশেষ করে সীমান্ত এলাকা সুরক্ষিত করে মাদক চোরাচালান কমানো বেশি জরুরী।

দ.ক.সিআর.২৫

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
© 𝐰𝐰𝐰.𝐤𝐚𝐚𝐥𝐧𝐞𝐭𝐫𝐨.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট