
নাজমুল ইসলাম হৃদয় : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের অন্যান্য আসনের মতো হবিগঞ্জ–১ (নবীগঞ্জ–বাহুবল) আসনেও বইছে নির্বাচনী হাওয়া। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তফসিল ঘোষণা করবে—এমন তথ্য পাওয়ার পর থেকেই এলাকাজুড়ে বেড়েছে রাজনৈতিক তৎপরতা, কর্মী–সমর্থকদের সমাবেশ ও নেতাদের দৌড়ঝাঁপ।
হবিগঞ্জ–১ আসনটি নবীগঞ্জ ও বাহুবল—এই দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী অবস্থান থাকলেও এবার ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। আসনটি নিজেদের দখলে আনতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। ফলে ভোটের মাঠে মূল লড়াইটি হতে যাচ্ছে বিএনপি বনাম জামায়াতের মধ্যেই—এমন মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
গত ৩ নভেম্বর বিএনপি প্রথম দফায় ২৩৭টি আসনের প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকা প্রকাশ করলেও সেখানে ছিল না হবিগঞ্জ–১ আসনের নাম। পরে ৪ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেন।
সব জল্পনা–কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নবীগঞ্জ–বাহুবল আসনে ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন পান সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া প্রযুক্তি ও অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া। তিনি শহীদ সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে। তাঁর প্রার্থিতা ঘোষণার পর বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নতুন উদ্যম।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে। তালিকায় হবিগঞ্জ–১ আসনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলী।
তাঁর মনোনয়ন ঘোষণার পর জামায়াতের স্থানীয় নেতাকর্মীরাও তৎপরতা বাড়িয়েছে। নবীগঞ্জ-বাহুবলের গ্রামগঞ্জে গণসংযোগ, কর্মীসভা, পোস্টারিংসহ নানামুখী প্রচারণা চলছে।
এছাড়া এখনও পর্যন্ত জাতীয় পার্টি, এনসিপি বা অন্যান্য বড় দলগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে বামপন্থি দলগুলো তাদের প্রার্থী নামিয়ে প্রচারণা শুরু করেছে।
মাঠের খবর অনুযায়ী, বড় দুই দল বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণসংযোগ চালাচ্ছেন।
কর্মিসভা করছেন, দলীয় বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন মানুষের কাছে। দলীয় প্রতীকে ভোট চাইছেন, চাইছেন দোয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচার চালানো হচ্ছে প্রার্থীদের পক্ষে। তাদের প্রচার-প্রচারণায় সরগরম হাটবাজার, মাঠঘাট। ভোট প্রার্থনা করে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা। এ দুই দলের বাইরে অন্যান্য দলগুলো তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।
নবীগঞ্জ–বাহুবলজুড়ে বাজার, হাট, চা–স্টল ও রাস্তার মোড়ে এখন আলোচনার মূল বিষয়—এই আসনে বিএনপি নাকি জামায়াত, কে জিতবে?
সব মিলিয়ে সরগরম পুরো আসন। ভোটাররা বলছেন— “এই নির্বাচন হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সরাসরি ভোটযুদ্ধ।”
হবিগঞ্জ-১ আসনে ভোটার আছেন ৪ লাখ ৬১ হাজার ২৮৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৩৩ হাজার ১৬ জন এবং নারী ২ লাখ ২৮ হাজার ২৬৮ জন। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ১৭৭টি কেন্দ্র ও ৯০৫টি ভোটকক্ষ চূড়ান্ত করেছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ–১ আসন এখন সারা দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করা আসনগুলোর একটি। দশকের পর দশক পর এবার নতুন ধরনের রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হয়েছে। ভোটযুদ্ধ কতটা উত্তপ্ত হবে—তা দেখার অপেক্ষায় নবীগঞ্জ–বাহুবলের মানুষ।
দ.ক.সিআর.২৫