হাসান লাখাই : লাখাই উপজেলা, ঐতিহ্য ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের এক পরিচিত জনপদ। অথচ সম্প্রতি এই জনপদের পবিত্রতা বারবার প্রশ্নের মুখে পড়ছে কিছু অসাধু চক্রের কারণে। অলি-আউলিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী বা ওরসগুলো, যা মূলত আধ্যাত্মিক আলোচনা ও দোয়ার মাধ্যমে পালিত হওয়ার কথা, তা আজ মেলার নামে পরিণত হয়েছে প্রকাশ্য জুয়া এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলার কেন্দ্রে।
অত্র এলাকায় পূর্বের অভিজ্ঞতা বলে—এই ধরনের ওরসকে ঘিরে আয়োজিত বাউল গান, সার্কাস ও লটারির নামে যে সঙ্ঘবদ্ধ জুয়া পরিচালিত হয়, তা প্রায়শই গ্রামে গ্রামে সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে মারামারি ও হানাহানির জন্ম দেয়। গত ১০ ডিসেম্বরের মনতৈল কোনাবাড়ির মেলার দিন-রাত জুয়া চলার অভিযোগ স্থানীয়দের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। যখন একটি ধর্মীয় আয়োজন মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা কেড়ে নেয়, তখন এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, ওরসের নামে মেলায় নারী-পুরুষের অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত রাতের বেলা আসা-যাওয়া পরিবার ও সামাজিক নৈতিকতার ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করছে। এর আড়ালে যে অবৈধ ব্যবসা ও ধান্দা গড়ে উঠে, তা যুব সমাজকে দ্রুত বিপথে চালিত করছে।
শান্তির পথে সমাধান
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবিটি অত্যন্ত যৌক্তিক এবং সময়োপযোগী: এই ধরনের ওরসের নামে মেলা বন্ধ হোক, এবং এর পরিবর্তে বিশুদ্ধ ধর্মীয় পরিবেশে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হোক।
প্রশাসনের কাছে আমাদের সুস্পষ্ট আবেদন ভবিষ্যতে যেকোনো মেলা বা ওরসের অনুমোদন দেওয়ার আগে স্থানীয় প্রশাসনের উচিত হবে এলাকার অতীতের বিশৃঙ্খলা এবং সংঘাতের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে অত্যন্ত কঠোর শর্তারোপ করা। জুয়া বা অনৈতিকতার ন্যূনতম সুযোগ রয়েছে এমন কোনো আয়োজনের অনুমোদন দেওয়া উচিত নয়।যারা ওরসের নামে ধর্মীয় পরিবেশকে কলুষিত করে জুয়া বা অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। প্রয়োজনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিকদের নিয়ে কমিটি করে নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে।
ওরসের নামে মেলা বন্ধ করে প্রকৃতপক্ষে পবিত্রভাবে উরস পালনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যই প্রধান থাকবে।
লাখাইয়ের শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার জন্য এই ওরসের নামে মেলা বন্ধ করা অতীব জরুরি। নতুবা, ভবিষ্যতে মেলাকে কেন্দ্র করে যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, তবে সেই দায় কেবল আয়োজক নয়, বরং প্রশাসনের নজরদারির অভাবকেও নিতে হবে। সমাজকে কলুষমুক্ত করতে প্রশাসনকে দ্রুত এবং কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দ.ক.সিআর.২৫