মানুষের বেঁচে থাকার জন্যে যেমন আহার-বস্ত্র-বাসস্থানের দরকার তেমনি প্রয়োজন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার। সেই ভারসাম্যে পশু, পাখি, অরণ্যভূমি সব কিছু সংযুক্ত। অরণ্য ও অরণ্যপ্রাণী দেশের অন্যতম সম্পদও। এগুলির যথাযথ রক্ষা করাও মানুষের সামাজিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। বাঘ, হরিণ, ময়ূর, গণ্ডার প্রভৃতি প্রাণীকে রক্ষা করা এবং সেই সঙ্গে অরণ্যভূমিকে রক্ষা করাও সরকারি পরিকল্পনার অন্তর্গত হওয়ার ফলে এই সংরক্ষণের গুরুত্ব প্রকাশ পেয়েছে।
বন্যপ্রাণী সম্পদের মধ্যে হাতি, একশৃঙ্গী গণ্ডার, বাঘ, ময়ূর, সিংহ, বুনো শুয়োর, ভাল্লুক ও নানা ধরনের বর্ণময় পাখি, কুমির, ঘড়িয়াল, নানা শ্রেণির বানর,-হনুমান, হরিণ প্রভৃতি বন্যসম্পদের প্রাধান্য পেয়ে থাকে। এত বৈচিত্র্য একসঙ্গে অন্য কোনো দেশে আছে কিনা সন্দেহ। এই বনসম্পদের প্রজাতিকে লুপ্ত হয়ে যাবার হাত থেকে রক্ষা করার জন্যেই বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজন।
অন্যান্য দেশে যেমন শিল্পের উৎকর্ষ সাধনে বন্যপ্রাণী হত্যা করা হয়, এদেশে বন্যপ্রাণী ক্রমলুপ্তি সেই পথ ধরে হয় না। এদেশের অরণ্যসম্পদ সংকীর্ণ হবার অন্যতম কারণ হল জনবিস্ফোরণ এবং অনুপ্রবেশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে অরণ্যসম্পদের ব্যাস্তানুপাতিক ক্রমহ্রাসমানতা লক্ষ করা যায়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে আমাদের ভূ-ভাগের মাত্র ১৩.৫ শতাংশ জুড়ে অবস্থান করছে বনভূমি। যেখানে এই পরিমাণ ভূ-ভাগের ৩৩ শতাংশ থাকা সমীচীন। প্রথমত বসতি স্থাপনের উদ্দেশ্যে অরণ্য অঞ্চল সঙ্কুচিত হয়েছে। এ ছাড়াও সখের খেয়ালে বন্যপ্রাণী হত্যা, মাংসের লোভে, চামড়ার লোভে, নানাশ্রেণির প্রাণী হত্যা করা হয়েছে নির্বিচারে। হিসেবানুযায়ী সবুজ উদ্ভিদ ৯৯ শতাংশ থাকলে সেখানে ১ শতাংশ প্রাণী স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে সবুজ নিধনের ফলে অরণ্যের পরিধি কমেছে বহুলাংশে। সুন্দরবনের মতো কিছু অঞ্চল ছাড়া এদেশে স্বাভাবিক রক্ষায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। অরণ্য প্রায় নেই বললেই চলে।
বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজন পরিবেশ রক্ষা, প্রাকৃতিক ভারসাম্য সুরক্ষিত করার কারণে। মানুষের প্রয়োজনেই সৃষ্টি করতে হবে সবুজের, রক্ষা করতে হবে প্রাণী সম্পদকে। বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্যে সর্বপ্রথম কাজ হল জনবিস্ফোরণ ও অনুপ্রবেশ সংহত করা। বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে সুষম আচরণ অর্থাৎ তাদের ওপর অনাবশ্যক অত্যাচার বন্ধ করা কর্তব্য। তাদের বিকাশ ও বিবর্তনের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করা।
জলবায়ু সহ প্রকৃতি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্যে বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আবশ্যিক। এর জন্যে যথাযথ ব্যবস্থা শুধু সরকার নয় প্রতিটি মানুষকেই গ্রহণ করতে হবে। সবুজ সৃষ্টি, প্রাণী নির্যাতন ও হত্যা বন্ধ সহ প্রাণী সম্পদের বিকাশের দিকটাও ভাবা কর্তব্য। সবুজ অরণ্যকে কোনো অজুহাতেই সংকীর্ণ করলে মানব জীবনচর্যার আগামী দিনে আরও সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তাই জরুরি কর্তব্য ভিত্তিতে বন ও প্রাণীসম্পদ রক্ষা আমাদেরই করতে হবে। এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা আশু প্রয়োজন।
দ.ক.সিআর.২৫