হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) নিয়ে এবার বিএনপির ভেতরে শুরু হয়েছে হেভিওয়েটদের দৌড়ঝাঁপ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৭১ সাল থেকে এই আসনটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে 'ক্ষমতার সূচক' হিসেবে বিবেচিত- কারণ প্রতি নির্বাচনে এই আসন থেকে যে দল বিজয়ী হয়, সেই দলই পরে সরকার গঠন করে।
হবিগঞ্জ জেলায় মোট ৪টি সংসদীয় আসনের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে লড়ছেন একাধিক অভিজ্ঞ ও প্রভাবশালী নেতা। এর মধ্যে রয়েছেন- শিল্পপতি ও সাবেক জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মো: ফয়সল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি এড. আমিনুল ইসলাম এবং বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ স্হানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগের মতো এবার আওয়ামী লীগ নয়, বরং বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনীতির সমীকরণ বদলে গেছে। এনসিপি, জাতীয় পার্টি, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ফ্রন্ট ও ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থীরাও মাঠে নামতে পারেন বলে জানা গেছে।
ইতিহাস বলছে, ১৯৭১ সাল থেকে আওয়ামীলীগের এনামুলক মোস্তফা শহীদ এই আসনে বিজয়ী হয়ে এমপি থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইদুল হক সুমন এই আসন থেকে ডামি প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়ে সংসদে স্থান পান।
মনোনয়নপ্রত্যাশী সৈয়দ মো: ফয়সল কালনেত্রকে বলেন, "আমি চুনারুঘাট-মাধবপুরের উন্নয়নে কাজ করেছি, অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান করেছি। দল যদি মনে করে আমি যোগ্য, তাহলে নির্বাচনে প্রস্তুত আছি।”
আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী এডভোকেট আমিনুল ইসলাম বলেন, “বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়াই যেন অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবু দল ছাড়িনি। এবার শুধু দলের মূল্যায়নের অপেক্ষায়।”
শাম্মি আক্তার বলেন, "বিগত ১৬ বছরে বার বার জেলে গেছি, নির্যাতিত হয়েছি, রাজপথে লড়াই সংগ্রাম করেছি। ত্যাগের মূল্যায়ন পেলে এই আসনে দলকে বিজয়ী করতে পারব।"
তিনি আরও বলেন, মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তিগত ইচ্ছার বিষয় নয়, এটা জনগণ ও দলের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। দল চাইলে অবশ্যই মাঠে থাকব।"
এদিকে শাম্মি আক্তার সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেত্রী হিসেবে চুনারুঘাট-মাধবপুরে বেশ পরিচিত এবং সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে জনসমাবেশ চালাচ্ছেন। তাঁর ভাষায়, “সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিন- মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মানের দৃঢ় প্রত্যয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফাভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে বিএনপির পাশে থাকুন।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হবিগঞ্জ-৪ আসনে এ বছরের নির্বাচন হতে যাচ্ছে সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ও প্রতীকী লড়াই। বিএনপি উত্তেজনাপূর্ণ ও প্রতীকী লড়াইগুলোর একটি। বিএনপি এবার কাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়, তা নিয়েই এখন সবার দৃষ্টি জাতীয় রাজনীতিতে।
আবার কেও কেও বলছেন, রাজনীতি মানে শুধু ক্ষমতা নয়- আদর্শ, ত্যাগ আর জনগণের সেবার মনোভাব। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া নেতারা যেখানে শুধু পদ-পদবির লোভে রাজনীতি আঁকড়ে থাকেন, সেখানে নেত্রী শাম্মি আক্তার হচ্ছেন নতুন প্রজন্মের আশার আলো- সাহস, সততা ও সংগ্রামের এক উজ্জ্বল প্রতীক। সময় এসেছে জনগণকে প্রকৃত নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার!
সংবাদ সংকলন: কালনেত্র