চুনারুঘাট প্রতিনিধি: চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দাশ নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড গোপনে পরিচালনা করছেন বঙ্গবন্ধু কর্মী কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যানারে— এমন তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, তিনি দেশি-বিদেশি কর্মীদের নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে গোপনে নানা রাজনৈতিক পরিকল্পনা ও নাশকতার ছক আঁকছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজনৈতিক পদ-পদবির আড়ালে নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করেন সজল দাশ। চুনারুঘাট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে শুরু করে উপজেলা আওয়ামী লীগ পর্যন্ত— সর্বদাই তিনি ছিলেন প্রভাবশালী পদে। এই পদ-পদবি ব্যবহার করে তিনি গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, যার মূল নিয়ন্ত্রণও তার হাতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চুনারুঘাট উপজেলায় বালু ব্যবসা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাণিজ্যিক খাতে দীর্ঘদিন ধরে তার প্রভাব বলয় বিস্তৃত। কেউ তার “আশীর্বাদ” ছাড়া এলাকায় ব্যবসা করতে গেলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া হিন্দু ধর্মীয় নেতা পরিচয়ে ভারতের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে তিনি গড়ে তুলেছেন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি অবৈধভাবে আসামপাড়া সীমান্ত ঘেঁষা খোয়াই নদীপথ দিয়ে পাচার করেছেন মূল্যবান দেশীয় মাছ, ইট, সিলিকা বালু ও সিমেন্ট— এমন অভিযোগও রয়েছে। আর ভারত থেকে অবৈধভাবে আমদানি করতেন ইন্ডিয়ান টায়ার, চা পাতা, পিঁয়াজ, রসুন। ২০২২ সালে আহম্মদাবাদের বনগাঁও গ্রামে খোয়াই নদী দিয়ে আসা টায়ারের বড় একটি চালান আটক করে বিজিবি।
দেশের ভেতরেও তিনি নামে-বেনামে কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলে সরকারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করেছেন বলে জানা যায়। চুনারুঘাটের রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণে তার প্রভাব ছিলো সরাসরি। নিজের বাবার নামে চুনারুঘাট বাজারে নির্মাণ করেছেন বহুতল ভবন ‘নিরঞ্জন সিটি’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, “আমরা দলের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছি, কখনও সুবিধার কথা ভাবিনি। কিন্তু সজল দাশ ক্ষমতার কাছাকাছি থেকেই কোটিপতি হয়েছেন। এখন মানুষ তাকে ‘শিল্পপতি’ বলে চেনে।”
তিনি আরও বলেন, “সজল দাশ রাজনীতির সৌন্দর্য খুব ভালোভাবে কাজে লাগাতে জানেন। চুনারুঘাটে যখন যিনি এমপি বা উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন, তিনিই কোনো না কোনোভাবে সজল দাশের ব্যবসার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। সকালে তিনি ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লস্করের ঘনিষ্ঠ, রাতে আবার আবু তাহের চেয়ারম্যানের প্রিয়জন— এই দ্বৈত রাজনীতি তিনি দক্ষতার সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন।”
স্থানীয়রা বলছেন, এখনো অদৃশ্যভাবে তিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন চুনারুঘাটের একাধিক সিন্ডিকেট ব্যবসা। দলীয় অনেক নিবেদিত কর্মী আজ পরিবার-পরিজন নিয়ে অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছেন, অথচ সজল দাশের প্রভাব-প্রতিপত্তি আগের চেয়েও বহুগুণ বেড়েছে। এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে অদৃশ্য কারণে।