ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বালিকা মাদরাসা থেকে ৩ ছাত্রীর নিখোঁজের ১০ দিনেও মেলেনি কোনো হদিস। নিখোঁজের ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও তাদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি পুলিশ।
নিখোঁজ ছাত্রীরা হলেন, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গোবিন্দ নগর এলাকার বাসিন্দা রবিউলের মেয়ে আয়শা সিদ্দিকা হাসি (১৩), দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মুরারিপূর গ্রামের শাহজালালের মেয়ে জুঁই (১৪), একই উপজেলার গণকপয়েনর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস তামান্না বোরকা (১৬)। এদের মধ্যে আয়শা সিদ্দিকা হাসি হাফেজিতে পড়ে, অপর দুইজন পড়ে আলেমা বিভাগে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি অপহরণ মামলা করেছে আয়শা সিদ্দিকার পরিবার।
মাদরাসার পরিচালক সূত্রে জানা যায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে সর্বশেষ মাদরাসায় দেখা যায় নিখোঁজ ৩ ছাত্রীকে। ভোর ৫টার সময় তাদের রুমে ডাকতে গেলে তাদের সেখানে পাওয়া যায়নি। পরে মাদরাসার দোতলার বারান্দায় মশারী ঝুলন্ত অবস্থায় বাঁধা দেখতে পেয়ে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ধারণা করেন মেয়ে তিনটি পালিয়ে গেছে।
শহরের বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ সূত্রে জানাগেছে, নিখোঁজ ৩ ছাত্রী রাত ১টার সময় প্রথমে একটি রিকশায় করে প্রথমে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছায়। তারপর রিকশা বদল করে তারা ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশনে উপস্থিত হয়। তবে সেই রাতে কোনো রেলগাড়ি না পেয়ে রোড আবাসিক হোটেলে ভোর ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করে। পরে আবাসিক হোটেলের ম্যানেজারের সহায়তায় আবার তারা স্টেশনে গিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করে রোড অটোস্ট্যান্ডে ফিরে আসে। পরে ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জের উদ্দেশ্যে একটি অটো নিয়ে রওনা হয়।
এদিকে তিন কিশোরী নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে তাদের পরিবার মাদরাসা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলাকে দায়ী করছেন।
নিখোঁজ তামান্নার মা আখলিমা বেগম বলেন, মাদরাসায় অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে। তবুও কর্তৃপক্ষ মাদরাসা ভবনে কোনো প্রকার নিরাপত্তা প্রহরী রাখেননি। ভবনের বারান্দায় কোনো প্রকার গ্রিল নেই। ফলে সহজেই কেউ চাইলে ভবনের ভিতরে বা ভবন থেকে বাইরে যেতে পারছে। মাঝরাতে প্রায় রাত ১২টার পরে মাদরাসার ভবন থেকে নাবালিক মেয়েরা সকলের অগোচরে কীভাবে বের হয়ে যায়। আমরাতো আমাদের মেয়েদেরকে তাদের ভরসায় সেখানে রেখেছিলাম।
নিখোঁজ কিশোরী আয়শার বোন লাবণী বলেন, আমরা জানতে পেরেছি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মারধর করে নির্যাতন করে। আমার বোন নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন আগে আমাদের এই নির্যাতনের কথা জানিয়েছিলো এবং দ্রুতই সেখান থেকে নিয়ে আসতে বলেছিলো। তবে আমরা নিয়ে আসিনি, যার ফলে আজ আমার বোনকে হারাতে হলো। আমি নিশ্চিত, মাদরাসা কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত নির্যাতনের কারণে এই তিন মেয়ে পালিয়ে গেছেন।
যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার দায় স্বীকার করে আয়েশা সিদ্দিকা মাদরাসার পরিচালক মুসফিক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা বুঝতে পারিনি এত তাড়াতাড়ি এমন একটা ঘটনা ঘটে যাবে। আমার মাদরাসার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছিলাম। তবে আমার বিরুদ্ধে যে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে সেটা ভিত্তিহীন। ওরা হয়তো কোনো ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, মেয়েগুলোর কাছে কোনো মোবাইল না থাকায় তাদের অবস্থান নির্ধারণ করা আমাদের কাছে কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে শিগগিরই এই বিষয়ে অগ্রগতির দিকে পৌঁছাবে পুলিশ।
দ.ক.সিআর.২৫