আসাদ ঠাকুর, অমনিবাস: চুনারুঘাট উপজেলা বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। এটি হবিগঞ্জ জেলার একটি জনবহুল উপজেলা। সমগ্র উপজেলা জুড়েই রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ ও নৈসর্গিক সৌন্দর্য।
দেশের প্রধান পর্যটন উপজেলাগুলোর একটি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা। ছোট-বড় মিলিয়ে এ উপজেলায় প্রায় ১০টি পর্যটন স্পট রয়েছে। এছাড়া প্রায় ২১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে বসবাস করছেন এখানে। আরও রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ বনাঞ্চল রেমা-কালেঙ্গা ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান।
অতিপ্রাচীনকালে এই এলাকার নাম ছিল তরফ রাজ্য। এই রাজ্যের সর্বশেষ রাজার নাম ছিল আছক নারায়ণ এবং তাঁর রাজধানী ছিল বর্তমান বাল্লা সীমান্তের নিকটে টেকারঘাট গ্রামে। হযরত শাহজালাল (রঃ) নির্দেশে সিপাহসালার সাইয়েদ নাসির উদ্দিন কর্তৃক তরফ রাজ্য বিজয়ের পর এই অঞ্চলে মুসলিম শাসন আরম্ভ হয়। তৎকালে অত্র এলাকায় খোয়াই নদী ছাড়া যোগাযোগের অন্যকোন বিকল্প পথ ছিলনা। সেসময় খোয়াই নদীর পশ্চিম তীরে বড়াইল মৌজায় একটি নদীর ঘাট ছিল। এই ঘাট দিয়ে নদী পথে অন্য এলাকার জনসাধারণ যাতায়াত ও মালমাল আদান প্রদান করত। বিশেষ করে চা বাগান সমৃদ্ধ এ এলাকায় উৎপাদিত চা ও অন্যান্য মালামাল রপ্তানী কাজেও একমাত্র ঘাট হিসেবে ব্যবহৃত হত। জনশ্রুতি আছে, এ ঘাটের পার্শ্বে একজন বিখ্যাত চুন ব্যবসায়ী ছিলেন। যাঁর চুনের ব্যবসা তৎকালে সমগ্র তরফ রাজ্যে বিস্তৃত ছিল। তখন এই এলাকা চুন ব্যবসায়ী ঘাট নামে পরিচিতি লাভ করে এবং পর্যায়ক্রমে এলাকাটি চুনারুঘাট হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
বৃটিশ আমলে তৎকালীন আসাম সরকারের ৪৭ নং জি স্মারকে সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমাধীন মুছিকান্দি থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। যা বর্তমান থানা সদর হতে প্রায় ৬ কি. মি. পূর্ব দক্ষিণে খোয়াই নদীর তীরে অবস্থিত ছিল। কিন্তু মুছিকান্দি যাতায়াতের অসুবিধা হেতু পরবর্তী সময়ে ১৯২২ ইংরেজী সনে বর্তমান স্থানে থানা সদর স্থানান্তর করা হয়।
আসাম প্রাদেশিক সরকারের জারীকৃত স্মারক নং-৩১২৬/জি এবং স্মারক নং ৪৭ মূলে ১৯১৮ সালে চুনারুঘাট থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়।
১৯২২ ইংরেজী সনে চুনারুঘাট থানার মান উন্নীত করা হয়। ১৯৮৩ ইংরেজী সনে চুনারুঘাট থানাকে উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ত্ব:
ক) সৈয়দ নাসির উদ্দীন: সিলেট বিজেতা হযরত শাহ জালালের অন্যতম সঙ্গী অনুসারী ও সিলেট অভিযানে প্রেরিত মুসলিম বাহিনীর প্রধান সেনাপতি ছিলেন।
খ) চিত্ত রঞ্জন দত্ত (সি আর দত্ত): বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, সেক্টর নং ৪ (৪নং সেক্টর)। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত।
গ) ড. এম এ রশীদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর ও সাবেক মন্ত্রী।
ঘ) হেমাঙ্গ বিশ্বাস (জন্ম: ১৪ ডিসেম্বর ১৯১২, মৃত্যূ: ২২ নভেম্বর ১৯৮৭। একজন বাঙালি অসমীয়া সঙ্গীতশিল্পী এবং সুরকার। মূলত লোকসঙ্গীতকে কেন্দ্র করে গণসঙ্গীত সৃষ্টির ক্ষেত্রে তার অবদান উল্লেখযোগ্য।
ঙ) এনামুল হক মোস্তফা শহীদ:- মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী।
চ) সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান বাংলাদেশ সরকারের 'বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের 'পরিবেশ পুরস্কার' জয়ী প্রথম নারী। এছাড়ও ২০২২ সালে অন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার পান তিনি। সৈয়দা রেজওয়ানা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা।
দর্শনীয় স্থান:
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, উদ্যানের পাশেই সাতছড়ি ত্রিপুরা পল্লি। রেমা-কালেঙ্গা অভায়রণ্য, কালেঙ্গা বধ্যভূমি, পদ্ম বিল, দমদমিয়া লেক, রানীগাঁও গ্রীন ল্যান্ড পার্ক, পানছড়ি ইকো রিসোর্ট, চণ্ডীছড়া বাংলো, ২৪টি চা-বাগান। উঁচু-নিচু পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সবুজের গালিচায় মোড়ানো চা-গাছ। সঙ্গে পাহাড়ি ঝরনার কলতান।
এগিয়ে যাক প্রিয় চুনারুঘাট।
দ.ক.সিআর.২৫